ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

আফগানিস্তান ফেরত ফখরুলের বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল দাবি সিটিটিসি’র

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যান মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। সেখান থেকে তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনা করার প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় আন্তর্জাতিক  জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফখরুল ইসলাম দেশে ফিরে হুজির হাল ধরেন। সংগঠনটির জন্য সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করে আসছিলেন ফখরুল। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ)। গতকাল ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি’র প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম ওই ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) ও  মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)।

বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ওই বছরই তিনি কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে সময় মুফতি জাকির হোসেন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল-কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার। ফখরুলকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল জিহাদি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান। ফখরুল ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন। সিটিটিসি প্রধান বলেন, আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় হুজি নেতা ফখরুল একাধিকবার আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদি জিহাদি ট্রেনিং করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন। হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেপ্তারকৃতরা। ফখরুল ও তার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দেন।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজশে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদানও করতো তারা। হুজি সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করায়, তাদের সংগঠনে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করতে সফল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা একাধিকবার প্রবেশ করেছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে অর্থও খরচ করেছে হুজি। নির্বাচনকেন্দ্রিক হুজির কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। আপাতত তাদের পরিকল্পনা এটাই ছিল। মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। কোনো টার্গেট ছিল না। জর্দার কৌটা দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে ককটেল তৈরি করেছিল তারা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status