প্রথম পাতা
আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রে, কী বলছেন নুর
নাইম হাসান
২৮ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবাররাজনীতিতে তার উত্থান নাটকীয়। আলোয় আসেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে। শুরুতে এ আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন না তিনি। তবে রাজপথে টিকে থাকার দুর্দমনীয় মনোভাব তাকে নিয়ে আসে নতুন ধারার এই রাজনীতির কেন্দ্রে। বারবার হামলার শিকার
হয়েছেন। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। ডাকসু’র ভিপি হয়ে রীতিমতো চমক তৈরি করেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে তৃতীয় ধারার রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুর দেখা আর মিলেনি। নুরুল হক নুর আর তার সঙ্গীদের নিয়েও অনেকে এই সম্ভাবনার কথা তোলেন।
যুগপৎ ধারার আন্দোলনে গণঅধিকারের ভূমিকা কী? গণতন্ত্র মঞ্চে আপনারা আছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চে আমরা এখনো আছি। তবে কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। সেই বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করে আমরা হয়তো ভবিষ্যতে এগিয়ে যাব। তবে আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক দল। নেতৃত্বের বড় একটি অংশই তরুণ। সময় এবং পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা রাজনীতি বোঝার এবং শেখার চেষ্টা করছি। গণতন্ত্র মঞ্চে যেসব নেতৃবৃন্দ আছেন, তারা অতীতে বিভিন্ন সময়ে জোট করেছেন। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা জোট গঠন করেছি, সেভাবে আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। আমাদের দলের কিছু ব্যক্তিগত বিষয় মঞ্চের নেতৃবৃন্দকে একাধিকবার বলেছি। এসব বিষয় আমরা সমাধান করে সামনে আগাতে চাই।
আপনাদের পক্ষ থেকে নাকি একটি দাবি ছিল আপনাকে গণতন্ত্র মঞ্চের মুখপাত্র বানানো। এ নিয়েই কী সংকট? এ প্রশ্নে নুর বলেন, আমার মনে হয়, যেকোনো রাজনৈতিক প্লাটফর্মেই একজন নেতা থাকা উচিত। যার নেতৃত্বে একটি জোট সামনে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও আমরা দেখেছি, বিএনপি’র নেতৃত্বে ২০ দল ছিল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল ছিল। সকল জোটেই একজন নেতৃত্ব দিয়েছেন। গণতন্ত্র মঞ্চ কিংবা যেকোনো জোটে-ই যাকে পছন্দ তাকেই মুখপাত্র বানানো উচিত।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৫৪ দলের অনেক নেতা সরকারের থেকে টাকা খেয়েছে- এমন অভিযোগ আপনি করেছেন? এর কোনো তথ্য-প্রমাণ আপনার কাছে রয়েছে কি? এ প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছোট-বড় যে ৫৪টি দল রাজপথে আছে আমরা তাদের প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধা রাখি। কিন্তু যারা আন্দোলন করছে, সরকার চেষ্টা করবে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার। তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো দল বা ব্যক্তির নাম বলা আমার উচিত হবে না। এ কথা আমি পাবলিকলি বলেছি যেন অন্যরা তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকেন। বিএনপি’র যে রিসোর্স আছে, তারা চাইলেই যে কোনো সময় এই তথ্য বের করতে পারে। বিএনপি থেকে যদি আমাকে বলা হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তাদেরকে এই তথ্য দেবো।
অনেকে বলে আপনিও ক্ষমতাসীনদের লোক, এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? জবাবে নুর বলেন, যারা এমন কথা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই যে, তারা ঠিক কোন কারণে আমাকে সরকারের লোক বলেন? কারণগুলো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমাদের উত্থান হয়। ওই সময়ে সচিবালয় থেকে শুরু করে সংসদ ভবনে আমরা সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করি। আমরা তাদের সঙ্গে কোনোভাবে সমঝোতা না করে আন্দোলন সফল করে ফিরে এসেছি। ডাকসু’র ভিপি হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি ২৩ বার হামলার শিকার হয়েছি। আমার যদি সেভাবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতো তাহলে আমি নিশ্চয়ই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জীবনধারণ করতে পারতাম। দলকে সহজে পরিচালনা করে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম।
তার সাম্প্রতিক সফর নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে নুরুল হক নুর বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে দুর্বৃত্তরা একটা বিভ্রান্ত তৈরি করেছিল, তা আমার একটি ছবিকে নিয়ে। আমি বলেছি, এটি একটি এডিটেড ছবি। তারপর তারা একটা অডিও রেকর্ড ছাড়লো। সেই অডিওটিতে বিভিন্ন খ-িতাংশ যোগ করে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। নুর আরও বলেন, অনেকে ধারণা করেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা হয়তো সেকেন্ড হোম বা বেগমপাড়া। কিন্তু তারা জানেনই না যে, মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন অর্থ পাচারের বড় একটা হাব।
সরকার বিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে নুর বলেন, আমি মনে করি, সরকার বিরোধী আন্দোলন এখন যে পর্যায়ে আছে, যদি সঠিক প্ল্যান করে এটিকে এগিয়ে নেয়া যায়, তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। কারণ বর্তমানে সরকার অত্যন্ত দুর্বল ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। না আছে তার দেশের জনভিত্তি, প্রশাসনিক ভিত্তি কিংবা আন্তর্জাতিক ভিত্তি। রেজা কিবরিয়াকে অনেকদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় মনে হচ্ছে, আপনারা প্ল্যান করেই তাকে এমন নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন কিনা?
ড. রেজা কিবরিয়ার ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, রেজা ভাইয়ের বয়স হয়েছে। তিনি চাইলেও আমাদের মতো মাঠে সময় দিতে পারেন না। তবে তিনি আমাদের অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানগুলোতে আসেন। তাছাড়া তিনি দলের আন্তর্জাতিক বিষয়টা দেখেন। এসব করতে গিয়ে উনি মাঠের আন্দোলনে সময় কম দিচ্ছেন। আমাদের সব বিষয়েই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করি উনি যথাসময়ে যথাযথ ভূমিকা রাখবেন।
গণঅধিকার পরিষদের সম্পর্কে নুর বলেন, গণঅধিকার পরিষদ ১ বছরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কারণ ৪৮ টি জেলায় আমরা জেলা কমিটি গড়তে সক্ষম হয়েছি। আরও ৮টি কমিটি পাইপলাইনে আছে, যেগুলো আমরা খুব শিগগিরই দেবো। আমরা প্রায় ২ শতাধিক উপজেলা কমিটি গড়তে সক্ষম হয়েছি। গত এক বছরে গণঅধিকার পরিষদ রাজপথেও বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিল।