ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

আইনি শূন্যতা

রাশিম মোল্লা
২৮ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার
mzamin

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের রায়ে। এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে তার নিষ্পত্তি হবে কীভাবে? আইনবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমানে এক্ষেত্রে দেশে আইনি শূন্যতা রয়েছে। সংবিধানে বা আইনে এ নিয়ে কোনো বিধান নেই। তবে অন্যপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়েই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়েছে। যদিও তা পুনর্বহাল করে সংবিধান পুনঃমুদ্রণ করা হয়নি। বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিধান আছে কি নেই এ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আরও বেশকিছু বিষয়েও রয়েছে আইন  শূন্যতা। প্রয়োজনীয় এসব আইন প্রণয়ন হয়নি দীর্ঘ সময়েও।
২০১৬ সালে হাইকোর্টের ৩ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে হাইকোর্টের রায়ের কিছু অংশ এক্সপাঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ওই বছরের পহেলা আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞাপন
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় ৫ মাস পর ২০১৭ সালের ২৪শে ডিসেম্বর আপিল বিভাগের দেয়া রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। তখন থেকে এটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন যদি কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আসে তবে তার নিষ্পত্তি হবে। 

এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না মানবজমিনকে বলেন, আদালতের ক্ষমতা রয়েছে কোনটির রিভিউ গ্রহণ করবেন, আর কোনটির রিভিউ গ্রহণ করবেন না।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে আনা হয় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী। ২০১৬ সালের ৫ই মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের ৩ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার। ২০১৭ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সরকারের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওই বছরের ২৪শে ডিসেম্বর রিভিউ পিটিশন দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, যেসব গুরুত্বপূর্ণ মামলা সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রিভিউ একটি। এটি দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বিচারক স্বল্পতা। 

পুরুষ যৌন নির্যাতন আইন
বাংলাদেশের ৫ শতাংশ পুরুষ ধর্ষণের শিকার হন। ১৮ বছরের নিচে ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয় ৩৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের বহু রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬টি দেশের ১০ হাজার পুরুষ ও ৩ হাজার নারীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ২ হাজার ৪০০ পুরুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৮ই আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চাঁদার দাবিতে এক ব্যক্তি (৪৫)কে তুলে নিয়ে যান স্থানীয় ১০-১২ জন। পরে ওই ব্যক্তিকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে রাখা হয়। পরদিন সকালের মধ্যে দুই লাখ টাকা চাঁদা না দিলে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। চাঁদা দেয়ার শর্তে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন ব্যক্তিটি। তবে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকইমেল করার ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরদিন সকালে নিজ বাড়ির বারান্দায় বিমের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরদিন এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি ধর্ষণের হলেও, দেশের আইন সেটাকে ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেনি। ফলে ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও আইনে পুরুষের যৌন হয়রানি নিয়ে সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। ধর্ষণের সংজ্ঞায় যে গুরুতর ফাঁক রয়েছে, তার দিকে আইনপ্রণেতাদের নজর দেয়া দরকার বলে মনে করেন আইনজীবী ও গবেষকেরা। এ ঘটনায় দ-বিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া নূহাইয়া আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ ও সমাজকর্মী সৌমেন ভৌমিক। রিটটি পরিচালনা করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধন চেয়ে হাইকোর্টে রিট করি। আদালত রুল জারি করেন। কিন্তু গত দুই বছরেও রুলের জবাব দেননি সংশ্লিষ্টরা। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বহু পুরুষ ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সরাসরি আইন না থাকায় মামলা করা যায় না। এই সুযোগে পার পেয়ে যাচ্ছেন অপরাধীরা। 

বিচারপতি নিয়োগ আইন
উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, আইন প্রণয়ন করে বিচারপতি নিয়োগ দিবেন। তবে স্বাধীনতার পর থেকে আইন প্রণয়ন ছাড়াই উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ করা হচ্ছে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন। সংবিধানের ৯৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে তিনি বিচারক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।’ কিন্তু সেই আইন প্রণয়নের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকেছে। এই আইন বা নীতিমালা প্রণয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আইনজ্ঞ, সুশীল সমাজসহ নানা মহল থেকে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হচ্ছে। ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে ও ২০১৪ সালে আইন কমিশন থেকেও বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে সরকারকে আইন প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়। উচ্চ আদালতের একাধিক রায়েও বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের জন্য কয়েক দফা নির্দেশনা রয়েছে। অবশ্য ২০১৪ সালে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা থমকে আছে। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সংবিধানের ৬২(১) (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের জন্য ২০১৮ সালে (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন প্রণীত হয়েছে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার মতে, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকে, তারা চায় না বিচারপতি নিয়োগে আইনটি হোক। অথচ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অর্জনের স্বার্থেই এই আইন প্রণয়ন বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত।  সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগ আইন করার কথা বলছে সরকার। দেখি কবে তা আলোর মুখ দেখে। তিনি আরও বলেন, বিচারাঙ্গনের বিচারপতি, বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল ও পিপি-জিপিগণ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান। এদের মধ্যে একমাত্র অধঃস্তন আদালতের বিচারকরা আইন ও বিধি অনুযায়ী নিয়োগ পেয়ে থাকেন। অবশিষ্ট ৩ শ্রেণির ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আইন ও বিধি এখনো প্রণীত হয়নি। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা কাজ করছি। নিশ্চয়ই হবে। 

রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা নিয়োগ আইন
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনার জন্য সরকার আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই আইনজীবী নিয়োগের কোনো আইন নেই।  ফলে সরকার যাকে পছন্দ করে তারাই নিয়োগ পেয়ে থাকেন। ফলে আইনি লড়াইয়ে বজায় থাকছে না রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ধারাবাহিকতা। অস্থায়ী ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিচারিক আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হলেও সুরক্ষা হচ্ছে না রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। এর ফলে অধিকাংশ মামলায় পরাজিত হচ্ছেন সরকার নিযুক্ত আইনজীবীরা। তবে এই পরাজয়ের জন্য সরকার নিযুক্ত আইনজীবীদের অনিয়ম-দুর্নীতিকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, রাষ্ট্রের হয়ে লড়া এসব আইন কর্মকর্তাদের একটি অংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এদের অনেকের নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই প্রশ্নবিদ্ধ। উচ্চ আদালতে সরকার নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে যে যোগ্যতা নির্ধারিত রয়েছে সেটি লঙ্ঘন করে দেয়া হয় অনেক নিয়োগ। এ নিয়ে দু’জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয় হাইকোর্টে। শুনানি নিয়ে তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। একইসঙ্গে নিয়োগ-সংক্রান্ত জারি করা ৬ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের নামের পাশে আইনজীবীর তালিকাভুক্তির তারিখ না থাকায় বার কাউন্সিলের সচিবকে যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। 

এ ছাড়া মামলা পরিচালনায় অসততা, প্রকাশ্যে রাষ্ট্রের পক্ষে কিন্তু গোপন সমঝোতায় আসামিপক্ষকে সহযোগিতা করার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। তবে প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এ ছাড়া নৈতিক দৃঢ়তা, পেশাদারিত্ব না থাকা এবং প্রশিক্ষণের অভাবও দেশের অ্যাটর্নি সার্ভিসকে ‘যেনতেন বিষয়’-এ পরিণত করেছে। যখন যে দলীয় সরকার তখন সেই দলীয় আইনজীবীদের আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ‘সরকারি স্বার্থ’ কোনো প্রকারে রক্ষা হলেও হানি হয় রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। 

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশ-২০০৮’ জারি হয়। পাশাপাশি সরকারি অ্যাটর্নি অধিদপ্তরও প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু জাতীয় সংসদ সেটি অনুমোদন দেয়নি। এ কারণে আলোর মুখ দেখেনি বিচার কার্যক্রমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন’। তবে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে পরবর্তীতে জনস্বার্থে একাধিক রিট হয়। রিটে বলা হয়, বিদ্যমান আইনে আদালতের আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান সংবিধানের ১৯ (১), ২২, ২৯ (১) (২) এবং ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই বিধানটিতে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত ২০০২ সালে অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশ প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একই বছরের ১৫ই মে অনুমোদন দেন। এর ৩ দিন পর ১৮ই মে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ওই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে একই বছর ২রা জুন সরকারি অ্যাটর্নি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের দক্ষিণ পাশে সচিবালয় লিংক রোডের পরিবহন পুলের ১১ তলায় অফিসও নেয়া হয়। অধিদপ্তরে কয়েকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে ওই অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে পাস না হওয়ায় তা হিমাগারে চলে যায়। যদিও জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের বিধান রয়েছে।

এ ব্যাপরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন মানবজমিনকে বলেন, রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা নিয়োগের মতো বিষয়ে কোনো আইন নেই। এমনকি সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নী জেনারেল, ডেপুর্টি অ্যাটর্নী জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নী জেনারেলগণ কোনো আইনি কাঠামো ছাড়াই নিয়োগ পাচ্ছেন। মূলত স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন না থাকায় সরকারের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা লোকজন ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত, পদ-পদবি ব্যবহার করতে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এতে সরকার লাভবান হলেও  বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে অধঃস্তন আদালতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি ও জিপি) নিয়োগ দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। সাধারণত যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের সমর্থক আইনজীবীরাই এসব পদে বসেন। এখন এই ব্যবস্থায় সংস্কার করে ‘স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস’ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই ব্যবস্থায় ৩০ শতাংশ নিয়োগ হবে স্থায়ীভাবে। বাকি ৭০ শতাংশ নিয়োগ এখনকার মতোই রাজনৈতিক বিবেচনায় হবে। স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিসও কি আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তারা চেষ্টা করবেন এখনই করার জন্য। এ নিয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে তার কথাও হয়েছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status