শেষের পাতা
পলাশবাড়ীতে বিএডিসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
সিরাজুল ইসলাম রতন, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) থেকে
২৮ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মো. আল জোবায়ের আছিবের বিরুদ্ধে সরকারি সেচ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের ১৬ই অক্টোবর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্র মতে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে স্বল্প খরচে প্রতিটি এলাকায় কৃষকের নিজ জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছে সরকার। এজন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর বিএডিসি’র একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শনের পর উপজেলা সেচ কমিটির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। সেচ কমিটির সদস্যদের মধ্যে সভাপতি পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন এবং সদস্য সচিব বিএডিসি অফিসের পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ)। এ ছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরও ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সেচ কমিটির সদস্য সচিব বিএডিসি অফিসের কর্মকর্তা আল জোবায়ের আছিব সরজমিন তদন্ত না করেই এবং সরকারি নিয়ম না মেনেই অবৈধভাবে সেচ সংযোগের ছাড়পত্র দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে পলাশবাড়ী উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য স্থানীয় কৃষকরা আবেদন করেন বিএডিসি অফিসে। পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর গ্রামের আয়তাল হকের ছেলে শাহিন মিয়া জানান, আমার লাইসেন্স নং অ/৩৫২, মৌজা পূর্ব ফরিদপুর, জেএল নং-৯৮, খতিয়ান নং- ৭৭০, দাগ নং-২৪৫৯। ২০১৩ সালের ৭ই জুলাই যথানিয়মে সরকারি বরাদ্দের নলকূপ (সেচ) স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার পর আমাকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। লাইসেন্স পাওয়ার পর আজ পর্যন্ত নবায়নও করেছি।
এদিকে, কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের চকবালা গ্রামের কৃষক মন্টু জানান, আমার পাশে তেকানী গ্রামের আবু বক্করের ছেলে সাফিউল ভূয়া খারিজ, খতিয়ান দেখে সেচ সংযোগ গ্রহণ করেছেন। যার লাইসেন্স নম্বর অ/১০৮৬, মৌজা, চকবালা, জেএল নং-৩, খতিয়ান-৪৪২, দাগ নং-২২৩। তিনি এই লাইসেন্স দিয়ে আমার আবেদনকৃত মৌজা চকবালা, জেএল নং-৩, খতিয়ান-৪৪১, দাগ নং-১৩৪ এর পাশের ১৩৭ দাগে রাতের অন্ধকারে বোডিং করে সেচ সংযোগ গ্রহণ করে। সাফিউলের বোডিংকৃত দাগ হতে ৭৪০ ফুট দূরে আব্দুল কাদের নামে একটি সেচ পাম্প চলমান। যার লাইসেন্স নং অ/৯৪৫, মৌজা তেকানী, জেএল নং-২, খতিয়ান নং-১২৫/৪১, দাগ নং- ৫৪৯, (সাবেক দাগ) ৯৩৮ (হাল দাগ)। অভিযোগকারীর অনেক পরে সাফিউল আবেদন করে লাইসেন্স পায়। ইএনও’র কাছে আরেক অভিযোগকারীরা হলেন, পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর গ্রামের মৃত চাঁদ মিয়ার ছেলে বাবলু মিয়া। তিনি জানান, উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা তার লাইসেন্স ভুয়া আখ্যায়িত করে তা বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের ২৫শে জানুয়ারি লাইসেন্স পেয়ে আজো সেচকাজ চালিয়ে আসছেন। তার লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে চলতি বছরের ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিকে বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের রুহুল আমিন, আলমগীর ও লেবু ২০-২৫ বছর থেকে নিয়মিত সেচকাজ চালিয়ে আসছেন। কিন্তু যেকোনো কারণে তারা লাইসেন্স করেননি। উপজেলা সেচ কমিটি তাদেরকে লাইসেন্স করার জন্য চিঠি প্রদান করেন। এ অবস্থায় তাদের আবেদনের সুযোগ না দিয়ে গোপনে একই জায়গায় প্রতিবেশী লালুকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। যা বতর্মান দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিএডিসি পলাশবাড়ী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) আল জোবায়ের আছিব বলেন, সেচ কমিটির মিটিংয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।