ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার ডিজিটাল সংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্য ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩ এর উদ্বোধন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তিন দিনের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করে। দেশের আইটি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবাসমূহ প্রদর্শনই এ মেলার লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম খাতে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম প্রবর্তিত পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা।

বিজ্ঞাপন
স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা, উদ্দীপিত বাস্তবতা, রোবোটিকস অ্যান্ড বিগ-ডাটা সমন্বিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে। ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। সরকার ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী অঙ্গীকারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশি জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, সরকার ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যা সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। গত বছর সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় বিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়েছেন। স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশে^র স্যাটেলাইট পরিবারের ৫৭তম গর্বিত সদস্য। শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বহুমুখী কার্যক্ষমতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তার সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ, ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের পর এটি ১৩,২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইথ লিজ দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪.৮১ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না। সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৯৫৬২৯৮ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ গিগাবাইট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে যা জনগণ ও সরকারি অফিসগুলোতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, সারা দেশে মোট ৮৬০০টি পোস্ট অফিসকে ডিজিটালে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডিজিটাল বৈষম্য এবং দামের পার্থক্য দূর করা হয়েছে। প্রত্যন্ত এবং দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সারা দেশে ‘এক দেশ এক দরের’ একটি সাধারণ শুল্ক চালু করা হয়েছে। সারা দেশে বৈষম্যহীন ‘এক দেশ এক দর’ শুল্ক ব্যবস্থা চালু করার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অ্যাসোসিও (এএসওসিআইও)-২০২২ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মেলায় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক ট্রেন্ড তুলে ধরা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রাকে সফল করতে বিভিন্ন খাতে নিজেদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রদর্শন করছে হুয়াওয়ে। আর হুয়াওয়ের এইসব ডিজিটাল সল্যুশন মেলার দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মেলায় ৭৭টি প্যাভিলিয়ন এবং ৫২টি স্টল রয়েছে যেখানে বিভিন্ন আইসিটি কোম্পানি, টেলিকম অপারেটর, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট এবং অবকাঠামো পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং আরও অনেকে অংশগ্রহণ করেছেন। এবছর হুয়াওয়ে’র প্যাভিলিয়নে ৫.৫জি, এন্টারপ্রাইজ বিজনেস সল্যুশন, হুয়াওয়ে ক্লাউড ও ডিজিটাল পাওয়ারের মতো বিভিন্ন যুগান্তকারী উদ্ভাবন প্রদর্শন করা হচ্ছে।  রয়েছে সার্ভিস রোবট, স্মার্ট পোর্ট ও ডিজিটাল পাওয়ার সল্যুশনের ডেমো সাইট। সম্ভাবনাময় স্মার্ট পোর্ট ও ডিজিটাল পাওয়ার সল্যুশন ব্যবহার করে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হতে পারে, সে বিষয়গুলোও তুলে ধরা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের মর্মার্থ এককথায় বলা যায়, একুশ শতকের সোনার বাংলা। কেউ কেউ একে বলেন, সুখী ও সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। আর প্রযুক্তি হচ্ছে দেশের সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর প্রকৃষ্ট পথ। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। একটি রাষ্ট্রকে তখনই ডিজিটাল বলা যায় যখন সেখানে জীবনের সকল ক্ষেত্রে কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে দেশে সার্থক ডিজিটাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে গড়ে উঠছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। বাংলাদেশ এই ডিজিটাল রূপান্তরের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হতে চাই। বাংলাদেশ ডিজিটাল উদ্ভাবনে সক্ষম, এখন আমাদের সকলের দায়িত্ব ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করা। কারণ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের স্মার্ট মানুষ হতে হবে। এই ডিজিটাল মেলার মাধ্যমে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে প্রবেশ করছি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status