ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মৌলভীবাজারে জমজমাট ডলার, পাউন্ড কেনাবেচার অবৈধ দোকান

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে চলছে নীরবে সরব অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা। জেলার ৭ উপজেলার প্রতিটি শহর ও হাট-বাজারে নানা কায়দায় এ ব্যবসা জমজমাট। অভিযোগ ওঠেছে, দীর্ঘদিন থেকে মানি  এক্সচেঞ্জের নামে এমন অবৈধ ব্যবসা চললেও তা বন্ধে তৎপর নয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন। 
জানা যায়, জেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত একটি মাত্র মানি এক্সচেঞ্জের বৈধ (সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ, বেরিপাড় মৌলভীবাজার) দোকান থাকলেও অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের দোকান অর্ধশতাধিক। জেলাজুড়ে দীর্ঘদিন থেকে মুদি দোকান, টাইলসের দোকান, কাপড়ের দোকান, পার্সের দোকান, জুতার দোকান, খাবারের দোকান, চালের দোকানসহ অনেক নাম সর্বস্ব ব্যবসার আড়ালেও চলছে রমরমা হুন্ডি ব্যবসা। এই অবৈধ ব্যবসায় দেশ ও প্রবাসে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী চক্রের খপ্পরে পড়ে অধিক মুনাফা ও ব্যাংকিং নানা ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই সহজে দ্রুত সময়ে ঘরে বসেই টাকা পাওয়ার সুযোগে প্রবাসী ও তাদের পরিবার হুন্ডির দিকে ঝুঁকছেন। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নীরব সেøাগানও এমনটি জানান দিচ্ছে। হাতে আদান, হাতেই প্রদান, ঘরে বসেই সহজ সমাধান। আর এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। দেশে চলমান ডলার সংকটের ক্রান্তিলগ্নে যে পন্থাটি ডলার ঘাটতি পূরণে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকার প্রত্যাশা রাখে তা হলো প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স। কিন্তু এ জেলায় দেদারছে যত্রতত্র হুন্ডি ব্যবসায়ী থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে কম। 

জানা যায়, বড় পুঁজির হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বিদেশে বাড়ি ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেও দেশে তাদের জায়গা জমি, ব্যবসা বা শহরের বাসা ও দোকান ভাড়ার টাকা দিয়েই হুন্ডি ব্যবসা চালান।

বিজ্ঞাপন
অনেকেই জায়গা বিক্রি করে দেশের টাকা দেশে রেখেই বৈদেশিক টাকা দিয়ে ওই দেশে বিনিয়োগ করেন। এতে করে কোনো বৈদেশিক টাকাই বাংলাদেশের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে ডলার, পাউন্ডসহ বৈদেশিক মুদ্রা সংগৃহীত হওয়ার প্রবাহ কমেছে। 
এমন অনৈতিক এ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চক্রটি জেলা শহর থেকে মনিটরিং করে পুরো জেলা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ রকম অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের নামে হুন্ডির রমরমা বাণিজ্য চালালেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে রয়েছে নির্বিকার। জানা যায়, জেলা শহর ছাড়াও জেলার ৭ উপজেলায় রয়েছে এমন অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে এই অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাণিজ্য। চক্রটি নানা কৌশলে চালাচ্ছে মানি এক্সচেঞ্জের নামে এমন হুন্ডি ব্যবসা। এতে করে বছরান্তে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারালেও এ বিষয়ে কিছুই জানে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ। 

জানা যায়, বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সেল রয়েছে যা তদারকি করে বিভাগীয় শাখা। কিন্তু এ জেলা থেকে ওই রকম তথ্য তাদের কাছে না পৌঁছানোতে অভিযানে যায় না বাংলাদেশ ব্যাংকের এতদসংশ্লিষ্ট টিম। আর এ সুযোগে রমরমা অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ এর নাম করে হুন্ডি ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট শাখার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলাটি প্রবাসী অধ্যুষিত। তাই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসাটা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় শাখা থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। খুব শিগগিরই হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে অভিযান হবে। 
জানা যায়, মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড় পয়েন্টে রয়েল ম্যানশন নামের একটি মার্কেট ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলে এসব অবৈধ ব্যবসা। তাদের নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও। 

সূত্র মতে, ওই অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের দৃশ্যমান প্রতিষ্ঠান হলো জেলা শহরের কেএস এন্টারপ্রাইজ, সায়েক এন্টারপ্রাইজ, সেন্টু এন্টারপ্রাইজ, হেকিম আহমদ, আনোয়ার এন্টারপ্রাইজ, নিউ জলি ক্লথ স্টোর, বেরির পাড়স্থ শহরের রয়েল ম্যানশনের ইউনিক টাইল্স, শাহ্ মোস্তফা টেলিকম, তরফদার এন্টারপ্রাইজ, রুমন এন্টারপ্রাইজ, মদিনা ট্রেডার্স, ফারিয়া ইলেট্রনিক্স, এসএ ট্রাভেল্স অ্যান্ড কনসালটেন্ড, কোরেশী ট্রেডার্স, জিসান এন্টারপ্রাইজ, মিলি এন্টারপ্রাইজ এফ ইলেকট্রনিক্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। সচেতন মহলের দাবি দ্রুত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেয়া এবং রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মূল্যায়নসহ বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রলুব্ধ করতে ব্যাংকিং সিস্টেম আরও সহজ করা, পেনশন স্কিম বা প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রভাংশু মহান সোম মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি। প্রবাসীরা যাতে বৈধ পথে টাকা পাঠান সেজন্য জেলা প্রশাসন থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার প্রবাসী পরিবার ও প্রবাসীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। তাছাড়া অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা যাতে বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া মানবজমিনকে বলেন, সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেলে অবৈধ হুন্ডি বা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status