শেষের পাতা
স্বজনদের পিটিয়েছে এম্বুলেন্স চালকরা
খুমেক হাসপাতালের ফটক থেকে নবজাতক চুরি, গ্রেপ্তার ২
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটক থেকে একদিন বয়সের নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরের জরুরি বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে প্রসূতির স্বজনদের বাকবিতণ্ডার মধ্যে এ ঘটনা
ঘটে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ২ জনকে আটক করেছে র্যাব-৬। হাসপাতাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার পিলজং এলাকা থেকে দিনমজুর তোরাব আলী তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী রানী বেগম (৩৫)কে নিয়ে খুমেক হাসপাতালে আসেন। তাকে হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডে ভর্তির পর দুপুর পৌণে ১টার দিকে বাচ্চা প্রসব করেন। সন্ধ্যায় বাচ্চা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য এম্বুলেন্স ঠিক করার সময় তোরাব আলীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করে এম্বুলেন্সের দুই গ্রুপ। একপর্যায়ে বাচ্চার স্বজনদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বাচ্চাটি তার খালা সোনিয়ার কোলে ছিল। গোলমালের মধ্যে অজ্ঞাতনামা এক মহিলা কোল থেকে জোর করে বাচ্চাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পর স্বজনরা বাড়ি ফেরার জন্য এম্বুলেন্স ভাড়া করছিলেন। তখন বাড়তি ভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করে চালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ সময় নবজাতক তার খালার কোলে ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মাস্কপরা এক নারীর কাছে নবজাতক রেখে তার খালা হাতাহাতি ঠেকাতে যায়। হুড়োহুড়ির মধ্যে ওই নারী নবজাতককে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নবজাতকের বাবা তোরাব আলী বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাটের পিলজঙ্গে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসি। দুপুর একটা ৪০ মিনিটের দিকে আমার ছেলে হয়। বিকালে বাচ্চা নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য এম্বুলেন্স ঠিক করতে যাই। তখন এম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সেই চালক গাড়ি নিয়ে এসে আমাদের নিয়ে যেতে চান। কিন্তু তিনি আমাদের যে গাড়ি দেখিয়েছেন সেটা না এনে ছোট একটি গাড়ি নিয়ে আসেন। তিনি আরও বলেন, তখন আমার শ্বশুর বলেন, আপনার গাড়ি ছোট এতে আমাদের হবে না। আমরা অন্য গাড়ি নিয়ে যাবো। কিন্তু এম্বুলেন্সের চালক তা শুনতে রাজি নয়। সে বলে যেমন টাকা দিবেন তেমন তো গাড়ি পাবেন। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে ওই চালক ও তার লোকদের কথা কাটাকাটি হতে হতে মারামারি শুরু হয়ে যায়। আমার স্ত্রীর বোনের কাছে বাচ্চা ছিল। সে যখন দেখে আমাদের মারছে তখন অস্থির হয়ে যায়। তার পাশে থাকা এক মহিলা তাকে বলে আমার কাছে বাচ্চা দিয়ে ওদের ঠেকান।
নবজাতকের বাবা বলেন, আমার স্ত্রীর বোন ওই মহিলাকে তার ভাবি মনে করে বাচ্চা দিয়ে মারামারি ঠেকাতে যান। মারামারি শেষে এসে দেখি বাচ্চাসহ সেই মহিলা নেই। আমি দরিদ্র মানুষ। প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেকে খুঁজে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নাহিদ হাসান মৃধা বলেন, অপহৃত নবজাতকের পরিবার থানায় এসে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তবে র্যাব-৬ এর একটি সূত্র জানিয়েছে অপহৃত নবজাতক উদ্ধারের জন্য র্যাব সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে ২ জনকে আটক করা করেছে। নবজাতক উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।