ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ তথ্য জ্ঞানসম্পন্ন একটি জাতি। যে জাতি হবে স্মার্ট জাতি। আমাদের সরকার, আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে তুলবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করেছি। এ সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনকালীন সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। গতকাল সকালে গাজীপুরের মৌচাকে বাংলাদেশ স্কাউট আয়োজিত ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বাংলাদেশ স্কাউটের প্রধান জাতীয় কমিশনার ও জাম্বুরী সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন, স্কার্ফ, ব্যাজ ও ওয়াগল প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্তকরণ, শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ ও এপিআর স্কাউট পতাকা হস্তান্তর করেন।

বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক প্রদান করা হয়।

স্কাউট ও স্কাউটারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের মধ্যে সুপ্ত আছে আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কবি, সাহিত্যিক, প্রশাসক, শিক্ষক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য যারা দেশের সেবা করছে। তোমাদের মাঝ থেকেই সকলে উঠে আসবে। তোমাদের জ্ঞান, তোমাদের চেতনা, তোমরাই তো পারবে এ দেশেকে আগামীদিনে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং তোমাদের মাঝ থেকে সেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, আমি সেই আশা করি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদদের প্রতি, ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টে ঘাতকের বুলেটে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যখন তোমাদের মাঝে আসি, তখনই আমার মনে পড়ে আমার ছোট্ট শিশু ভাইটি মাত্র ১০ বছর বয়সে ঘাতকের নির্মম বুলেট আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে। তোমাদের মাঝে খুঁজে ফিরি আমার ছোট্ট ১০ বছরের ভাই শেখ রাসেলকে। আমি চাই আমাদের দেশের আজকের শিশুদের জীবন সুন্দর ও নিরাপদ হোক। কারণ আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীদিনের জাগরণ। তারা বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। তাই আমি চাই আমাদের শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যে বাংলাদেশ ২০২২ সালে এসে আমরা দেখছি তা কিন্তু এরকম ছিল না। প্রতিনিয়ত সংঘাত, খুনাখুনি, অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের পালা, নির্বাচন নিয়ে খেলা, নানা ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজেই আমি চাই, আমাদের দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এদের কোনো স্থান থাকবে না। সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকের শিশু বাংলাদেশে যারা বড় হবে তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, দেশকে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গঠন করার কাজ করবে। কাজেই স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, আর তরুণদের মধ্যে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল গুণাবলি বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। পরোপকারী হিসেবে সমাজ সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। সেটা আমরা দেখছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা কোভিডকালীন সময় বিভিন্ন সময়ে স্কাউটদের সেই আন্তরিকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। তাই আমি চাই স্কাউট আরও ব্যাপক ভাবে গড়ে উঠুক।
দেশের স্কাউটকে শক্তিশালী করতে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্কাউট আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউট সম্প্রসারণে স্কাউট শতাব্দী ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালমাই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৯ লাখ ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণে চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব দল গঠন এবং কাব স্কাউট প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকে ৯ একর ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এ ভূমিতে বনায়ন ঠিক রাখতে হবে। তবে এ ভূমিতে বনায়ন ধ্বংস করা যাবে না, বেশি স্থাপনা করা যাবে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার যতটুকু করার তা ইতিমধ্যে করা হয়েছে। অ্যানিমেশন স্টুডিও নির্মাণ করা হয়েছে, আধুনিক সুইমিং নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের রোভার স্কাউটের জন্য একটি অ্যাডভেঞ্চার ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি এবং দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করে দিবো। 

বর্তমানে আমাদের ২২ লাখ স্কাউট সদস্য আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ স্কাউট করা হবে। আমার লক্ষ্য প্রতিটি শিক্ষার্থীই স্কাউট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়। সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমার দেশ সোনার বাংলা গড়ার ও স্মার্ট বাংলা গড়ার সুনাগরিক তৈরি হবে। আমি জানি যে, আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের বাংলাদেশ স্কাউট সুনাম বৃদ্ধি করেছে। আমাদের স্কাউট সদস্যরা ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। যেকোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ২৪তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজনাল স্কাউট কনফারেন্স ও স্কাউট ফ্রেন্ডশিপ ক্যাম্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। আমি আরও আনন্দিত বাংলাদেশ একটি বড় কন্টেটে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২৫তম বিশ্ব জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ নিবে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরি একদিন বাংলাদেশেই অনুষ্ঠিত করতে পারবো, সেই লক্ষ্যেই এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। যেখানে সারা বিশ্বের লোকেরা আসবে তারা কাজ করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন, স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি, ব্রডব্যান্ড লাইন আমরা সমস্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে বিভিন্ন প্রযুক্তির শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টস রোবোটিক, নেনোটেকনোলজি এ সকল বিষয়ে যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছি, জিডিটাল ডিভাইস যাতে ব্যবহার করতে পারে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারে সেজন্য কম্পিউটার ল্যাব প্রতিটা স্কুলে করে দিচ্ছি, তাছাড়া ইকো পার্ক, হাইটেক পার্ক ইনকিউবেশন সেন্টার বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় করে দিয়ে যাতে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে আরও প্রশিক্ষণ নিতে পারে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে আমরা আলোকিত করে দিয়েছি। দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করেছে, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, রুমানা আলী টুসি এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোতাহার হোসেন মোল্লাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ভোগান্তি / ঈদের ছুটি শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরছেন যাত্রীরা

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status