ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

এফবিসিসিআই’র সংবাদ সম্মেলন

বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে আত্মঘাতী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২২ মে ২০২২, রবিবার

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, করোনা মহামারি আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, পরিবহন ব্যয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেবে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। প্রভাব পড়বে জনজীবনের ওপর। এটা চলতে থাকলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তার দায়ভার তখন সরকারকে নিতে হবে। শনিবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে সংগঠনটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। 
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দাম বৃদ্ধির এখন সঠিক সময় না। অন্তত ছয় মাস সময় নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

বিজ্ঞাপন
এখন দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দেশীয় শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। শিল্প রক্ষায়  বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিয়ে সিদ্ধান্তটি আমলাদের পরিবর্তে রাজনীতিকদের মাধ্যমে নিতে আহ্বান জানায় ব্যবসায়ী সংগঠনটি। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আগামী ২০ বছরে কোন সালে কত হারে বাড়ানো হবে, তার একটি আগাম পরিকল্পনা সরকারের কাছে চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জসিম উদ্দিন বলেন, তাহলে ব্যবসায়ী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারবেন। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
জসিম উদ্দিন বলেন, এরপরও যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটি ব্যবসায়ীদের ওপর না চাপিয়ে বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা হোক। এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বহুমাত্রিক মূল্যস্ফীতি উস্কে দিয়ে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হবে দেশে। ফলে কৃষি শিল্প সেবা এবং সার্বিকভাবে সাধারণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।দেশ এখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে কাজ করছে সরকার। এই উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ এবং এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সর্বাগ্রে ভূমিকা রাখতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এসডিজি ৭ অনুযায়ী ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সবার জন্য সুলভ উন্নত নিরবচ্ছিন্ন এবং টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) আইনের বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, মানসম্মত দক্ষতা ও জবাবদিহিতা সহকারে সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বরং এই খাতে সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম, অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আইনের বিপরীতে পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সমগ্র বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করে এ খাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনার অহেতুক দায়ভার জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সকল ক্ষেত্রে সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।

 তবে করোনার সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি বন্ধ হওয়ার পর দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যবসায়ীদের সেক্ষেত্রে আপত্তি থাকবে না বলেও দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
জসিম উদ্দিন বলেন, কুইক রেন্টালের এক সময় প্রয়োজনীয়তা ছিল। এখন আর তার প্রয়োজনীয়তা নেই। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা উচিত। অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা উচিত। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। সরকার সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। সরকারের ভুল পরিকল্পনার খেসারত শিল্প খাত বহন করতে পারে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করে এখন সরকারের উচিত হবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আমূল সংস্কার আনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা। 

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন। তিনি দাবি করেন, এর থেকে সরে আসতে হলে দরকার গণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমলাতন্ত্রের সিদ্ধান্তে কোনো কাজ হবে না।

বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার- উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এখন যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়।

রিহাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বিশ্ববাজারে ঝড় চলছে। এ অবস্থায় ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা রপ্তানিতে বেশ ভালো করছিলাম। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, সাবেক সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বিএসএমএ’র সভাপতি মনোয়ার হোসেন, বিসিএমএ’র সভাপতি মো. আলমগীর কবিরসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status