শেষের পাতা
ইউনিসেফের উদ্বেগ
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি স্কুলে যায় না
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় নথিভুক্ত নয়। ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। ইউনিসেফের সহায়তায় জরিপটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গতকাল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জরিপের ফল প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। জরিপ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫-১৭ বছর বয়সী) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা তাদের বয়স অনুপাতে শিক্ষাগতভাবে গড়ে দুই বছরের বেশি পিছিয়ে। বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক ইফতেখারুল করিম বলেন, এই প্রথম বিবিএস প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংক্রান্ত একটি জাতীয় জরিপ পরিচালনা করেছে। এই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য প্রতিবন্ধী শিশুরা বেড়ে ওঠার সময় কতো প্রকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তা তুলে ধরেছে। রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রণয়নে সরকারকে সহায়তা করবে।
জরিপের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের ১.৭ শতাংশ শিশু ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এ সংজ্ঞায়িত ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার অন্তত একটি প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে আছে। অন্যদিকে ৩.৬ শতাংশ শিশুর অন্তত এক ধরনের ‘ফাংশনাল ডিফিকাল্টি’ রয়েছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কাজ করার বয়সী তাদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ কর্মরত, যেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কাজে নিযুক্ত না থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর যদিও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সরকারিভাবে নিবন্ধিত, তাদের ৯০ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে ভাতা পান, বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রায় ৬৫ শতাংশ অনিবন্ধিত থেকে যায়। প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুদের মাঝে থাকা সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বিকাশের জন্য শৈশবকালীন দ্রুত শনাক্তকরণ ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে পরিবার ও সেবা প্রদানকারীরা প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধী শিশুদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে এবং সামাজিক নেতিবাচক ধ্যানধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
ইউনিসেফের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২.৮ শতাংশ ব্যক্তির ও ১.৭ শতাংশ শিশুর অন্তত একটি প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ‘শারীরিক বা মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, কিংবা বিকাশ প্রক্রিয়ায় বা সংবেদনশীলতায় প্রতিবন্ধিতা অথবা ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিগত বা পরিবেশগত প্রতিকূলতার প্রভাবের কারণে কোনো ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী অক্ষমতা, যা ব্যক্তিকে সমাজে সমানভাবে সম্পূর্ণ এবং কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়- এমন অবস্থাকে প্রতিবন্ধিতা বলা হয়। ওয়াশিংটন গ্রুপ অব ডিসেবিলিটি স্ট্যাটিস্টিকসের ধারণাগত কাঠামো অনুযায়ী, জনসংখ্যার ৭.০৭ শতাংশ এবং ২-১৭ বছর বয়সী শিশুদের ৩.৬২ শতাংশের কার্যকারিতার অন্তত একটি ক্ষেত্রে ফাংশনাল ডিফিকাল্টি রয়েছে। ওয়াশিংটন গ্রুপ অব ডিসেবিলিটি স্ট্যাটিস্টিকস অক্ষমতার ধারণাগত অগ্রগতি প্রতিফলিত করে এবং বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক উপাত্ত সরবরাহ করে।