ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে যে কারণে তেল ও গ্যাস সংকট লোডশেডিং বাড়ছে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

সিলেটের সিএনজি পাম্পগুলোতে গ্যাসের সংকট নিয়ে খোদ মালিকরাই বিব্রত। বিক্রয়ের লিমিট শেষ। অনেক পাম্পই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। যে পাম্পগুলো চালু আছে সেগুলোতে ভিড় আর ভিড়। গ্যাস নিতে চালকদের রাত কেটে যাচ্ছে পাম্পে। এ কারণে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, কারসহ অনেক যানবাহনে বাড়তি ভাড়াও নেয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় সিলেটে গত ৩-৪ দিনের নয়। প্রতি মাসের শেষ ১০ দিনে এসে এমন ঘটনা ঘটছে। সিএনজি চালিত যানবাহনে গ্যাস সংকট লেগেই থাকে। আবার মাসের প্রথম তারিখ থেকে এ দৃশ্যপট স্বাভাবিক হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন
সিএনজি পাম্প মালিকরা জানিয়েছেন, সিলেটে প্রায় ৫৬টি সিএনজি পাম্প রয়েছে। এসব পাম্পে কমপ্রেসারের লিমিট রয়েছে। লিমিট অনুযায়ী প্রতিটি পাম্পে গ্যাস বিক্রির অনুমতি রয়েছে। বেশি বিক্রি করলেই জরিমানার মুখোমুখি হতে হয় মালিকদের। 

ইতিমধ্যে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মনিটরিং করে কয়েকটি সিএনজি পাম্পকে জারিমানা করার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। চাহিদা বিবেচনা করে অনেক পাম্প মালিক বেশি গ্যাস বিক্রি করে বেকায়দায় পড়েছিলেন। এরপর থেকে সতর্ক সিএনজি পাম্প মালিকরা। লিমিট মতো গ্যাস বিক্রি হয়ে গেলেই পাম্প মালিকরা গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেন। পাম্প মালিকদের মতে, সিলেটে দেড় লাখ ঘন লিটার থেকে ৩ লাখ ঘনমিটার গ্যাসের লিমিট রয়েছে। জালালাবাদ গ্যাসের নির্দেশ হচ্ছে, যাদের লিমিট যত তারা সে পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন। এ কারণে মাসের প্রথম ২০ দিন অনেকেই লিমিট মতো গ্যাস বিক্রি করে ফেলেন। এ কারণে বাকি ১০ দিন তারা কম পরিমাণ বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ পাম্প বন্ধও রাখেন। সোমবার রাত ১১টা। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাইপাস, চন্ডিপুল, স্টেশন রোডসহ কয়েকটি পেট্রোল পাম্প ঘুরে দেখা গেল গ্যাসের জন্য হাজারো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে লাইনে। সরকারি নিয়মে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাম্প বন্ধ। তাই গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক গাড়িই পাম্পে ভিড় জমায়। রাত ১১টায় এ গাড়ির সংখ্যা হাজারো ছাড়িয়ে যায়। চালু হওয়ার পর গ্যাস সংগ্রহ শুরু হয়। এতে গ্যাস নিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা চালকদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কেউ কেউ অপেক্ষায় থাকেন ভোর পর্যন্ত। চালকরা জানিয়েছেন, এ দৃশ্য প্রতি মাসের শেষ দিকে এসে দেখা যায়। অনেক পাম্পই বন্ধ। এ কারণে যেসব পাম্পে লিমিট আছে সেসব পাম্পে ভিড় করেন তারা। রাতে গ্যাস সংগ্রহ না করলে দিনে গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জালালাবাদ গ্যাসের কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

 তিনি জানিয়েছেন, সরকার যে আদেশ আছে সেটিই পালন করা হচ্ছে। লিমিট মতো গ্যাস বিক্রির অনুমতি রয়েছে। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুজ্জামান দুলু জানিয়েছেন, ‘যখনই লিমিট দেয়া হয়েছে তখন থেকেই গ্যাস সংকট হচ্ছে। লিমিট শেষ হয়ে গেল গ্যাস বিক্রি বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা লিমিট বাড়ানোর জন্য বার বার দাবি করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা দাবি মেনে নিচ্ছেন না। সিলেটে যানবাহন বেড়েছে, একইসঙ্গে বেড়েছে চাহিদা। কিন্তু তারপরও পাম্পগুলোতে লিমিট বাড়েনি। এরমধ্যে বছরের এই সময়ে সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। গাড়িও চলাচল করে বেশি। তাই গ্যাসের চাহিদাও বেশি। এই অবস্থায় অনেক পাম্প মাসের ২০ দিন যেতে না যেতেই গ্যাস সংকটে পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে গ্যাস দিয়ে দেশের সিংহভাগ গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হয়। অথচ সিলেটের মানুষই এখন গ্যাস পাচ্ছেন না।’ এদিকে সিলেটে জ্বালানি তেল সংকটও পুরোপুরি কাটেনি। এখনো সংকট রয়েছে বলে দাবি করেছেন পাম্প মালিকরা।

 তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের সংকট দূর করতে গত রোববার থেকে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর বিপিসি, তেল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সংকট দূর করার আশ্বাস দেয়া হয়। এ কারণে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল রোববার থেকে সংকট দূর হবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পুরোপুরি সংকট দূর হয়নি। কারণ হচ্ছে, চট্টগ্রাম থেকে ওয়াগন বাড়িয়ে তেল আনা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা পূরণে সেটি পর্যাপ্ত নয়। সড়ক পথে তেল নিয়ে আসার বিষয়টি এখনো ঝুলন্ত রয়েছে। সিলেট জেলা পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন আহমদ জানান, প্রায় ১০৪টি পাম্পে জ¦ালানি বিক্রি করা হয়। বোরো মৌসুম চলছে। প্রতিদিন ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন মিলিয়ে চাহিদা প্রায় ১০ লাখ। এতদিন আমরা নিজেদের উদ্যোগে আশুগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল থেকে তেল নিয়ে এসে সংকট দূর করেছি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা সড়ক পথে তেল নিয়ে আসার কথা আশ্বাস দিলেও এখনো সেটি আশ্বাসেই রয়ে গেছে। তিনি জানান, ট্রেনের ওয়াগন বাড়ালেও আগের মতো ৫ থেকে ৬ লাখ লিটার জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে শুক্রবার ও শনিবার সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট প্রকট হয়। 

যমুনা তেল কোম্পানির সিলেটের ইনচার্জ আবুল মনসুর মজুমদার গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, আমরা যে তেল পাই সবই দিয়ে দেই। আমরা স্টকে রাখি না। তিনি বলেন, সড়ক পথে তেল আমদানির বিষয়টি সিদ্বান্ত আকারে এখনো আসেনি। দাপ্তরিক সিদ্বান্ত হয়েই সেটি সিলেটে এসে পৌঁছালে কার্যক্রম শুরু করা হবে। তেল সংকট নিয়ে সিলেটে পাম্প মালিক ওনার্স এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যর সঙ্গে মিলছে না প্রশাসনের বক্তব্য। জ্বালানি সরবরাহে গতিশীলতা আনা ও কৃত্রিম সংকট মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সিলেটের উদ্যোগে ও রাষ্ট্রায়ত্ত ৩টি জ্বালানি পরিবেশক কোম্পানি (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সোমবার সিলেট জেলার বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও ফিলিং স্টেশনে স্টক রেজিস্টার ও তেলের মজুত সরজমিন পরীক্ষা করা হয়। সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে সিলেট নগরী ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন পাম্প ও ফিলিং স্টেশনে এই পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাহবুবুল ইসলাম বলেন ‘সিলেট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মজিবর রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের এই উদ্যোগ। স্টক ও বিক্রয় রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে কোনো সংকট পরিলক্ষিত হয়নি। তবে সেচ মৌসুমে জ্বালানির কিছুটা বাড়তি চাহিদা রয়েছে। জনস্বার্থে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ 

এদিকে তেল ও গ্যাসের যখন সংকট চলছে তখন সিলেট জেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। শীতকালের এই লোডশেডিং নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া না দেখা দেখালেও গরম মৌসুম নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। সিলেটের উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ার কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গেল কয়েকদিন ধরে একইভাবে লোডশেডিং রয়েছে। ঢাকা থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে সেটিই তারা পালন করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, গতকাল সিলেটে মোট চাহিদার ২২ ভাগ লোডশেডিং দিতে হয়েছে। এখানে তাদের কিছুই করা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, সিলেটে ১৫ দিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। রাতে লোডশেডিং কম হলেও দিনে অর্থাৎ পিক টাইমে অধিকহারে লোডশেডিং হচ্ছে। এজন্য অনেক এলাকায় পাম্প বন্ধ থাকায় পানি সংকটও দেখা দিচ্ছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status