শেষের পাতা
সংকট মোকাবিলায় সুসমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২২ মে ২০২২, রবিবাররাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সুসমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যমান ওই সংকট কাটাতে সুনির্দিষ্টভাবে চারটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এমন সময় শুরু হয়েছে যখন কোভিড মহামারি থেকে উদ্ধার পেতে সবাই যে যার মতো করে লড়ছে। এ যুদ্ধ নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিকে গুরুতর চাপে ফেলেছে। জাতিসংঘের নবগঠিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’-এর বৈঠকে শুক্রবার রাতে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। হাইব্রিড প্ল্যাটফরমে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন শেখ হাসিনা। এপ্রিলে ৬ সদস্যের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স অন ফুড, এনার্জি অ্যান্ড ফিন্যান্স (জিসিআরজি) নামে একটি গ্রুপ গঠন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুঁতেরা। এতে সদস্য হতে বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে ফোন করে মহাসচিব বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। ওই ফোরামের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় শুক্রবার; যেখানে শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংহতির সুরক্ষা এবং সংকট উত্তরণে উন্নত অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে; যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংকট উত্তরণে শেখ হাসিনার চারটি প্রস্তাব: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সুসমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠন করায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নে তাদের প্রচেষ্টায় আমরা পূর্ণ সমর্থন দেব। দ্বিতীয়ত: অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক ও সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তৃতীয়ত: কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষিখাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। শেখ হাসিনা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে। চতুর্থ তথা শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৮ সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে অর্জিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বলেন, আমরা অনেক এসআইডি এবং নিম্নাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এসব দেশে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে। বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। আমরা সর্বদা বিশ্বশান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের যেকোনো আহ্বানে সাড়া দিয়েছি।