শেষের পাতা
বাস চাপায় নাদিয়ার মৃত্যু সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবাররাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাস চাপায় নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার নিহতের ঘটনায় বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন তারা। এরপর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কের কাওলা এলাকায় অবরোধ করেন তারা। কয়েকশ’ শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে নাদিয়া হত্যার
বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এতে বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অনুরোধ প্রত্যাহার করে অবরোধ চালিয়ে যান। এ সময় তারা চার দফা দাবি জানান। এর আগে সকালে নাদিয়াকে চাপা দেয়া বাসের চালক মো. লিটন (৩৮) ও সহকারী মো. আবুল খায়ের (২২)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সকালে নাদিয়ার সহপাঠীরা নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
ভিক্টর বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গতকাল দুপুরে বনানীর ডিসি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল আহাদ বলেন, গত রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিয়া মোটরসাইকেলযোগে উত্তরা থেকে আসছিলেন। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান। প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩১৯০) দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে আরোহী নাদিয়া রাস্তায় পড়ে যায়। মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই নাদিয়ার মৃত্যু হয়। এ সময় ভাটারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘাতক বাসটি আটক করে। নাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে নাদিয়ার বাবার কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। নাদিয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার চাষাড়ায়। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম একটি পোশাক কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় নাদিয়া। এক সপ্তাহ আগেই নারায়ণগঞ্জের বাসা ছেড়ে উত্তরায় একটি হোস্টেলে উঠেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, নাদিয়ার মৃত্যুর পর ভাটারা থানায় মামলা করেন তার বাবা জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে নাদিয়ার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়। ঘাতক চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারে ভাটারা থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। রাতেই সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর সড়কে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসই বেশি দেখা যায়। ভিক্টর পরিবহনের বাস চাপায় এর আগেও শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় বাসে বাসে রেষারেষি বন্ধ হয়েছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। ফলে মারা গেল নিরীহ শিক্ষার্থী। গুলশান ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগসহ ডিএমপি সড়ক পরিবহন আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী ও পথচারী, সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে আইন-কানুন মানতে হবে, জানতে হবে। তদন্তে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি ধরবো সেটি সক্ষম হয়েছি। গ্রেপ্তারকৃতদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড পেলে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু জানতে চাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।