ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ইউসুফ সাদ কান্ধলভী কাঁদলেন, কাঁদালেন

এম. এ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে
২৩ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার
mzamin

দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, মুক্তি কামনা এবং বিশ্ব শান্তির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চেয়ে শেষ হলো মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বটি ছিল সাদ অনুসারীদের, এ পর্বে আখেরি মোনাজাতও পরিচালনা করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের প্রধান মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী। টঙ্গীর তুরাগ তীরের লাখ লাখ মুসল্লি উপস্থিত হয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করতে আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এ সময় কান্ধলভী নিজে কাঁদলেন এবং মোনাজাতে অংশ গ্রহণকারী সবাইকে কাঁদালেন। তাদের অশ্রুভেজা কান্না আর আমিন, আমিন শব্দে তুরাগ তীরে বিরাজ করে অন্যরকম ধর্মীয় আমেজ। 
মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ সাদ কান্ধলভী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্বীনের ওপর সবাই যেন চলতে পারে সে দোয়া করেন। এ ছাড়া দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে মানুষকে হেফাজত করতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। তার সঙ্গে দু’হাত তুলে আমিন আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনি তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপস্থিত মুসল্লিরা। 
এর আগে ভোর থেকে শুরু হয় দিকনির্দেশনামূলক বয়ান। শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেম ইসলামের পথে সঠিকভাবে চলতে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে হেদায়েতি বয়ান শুরু করেন দিল্লির মাওলানা মোরসালিন।

বিজ্ঞাপন
পরে বয়ান শুরু করেন ইউসুফ কান্ধলভী। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত আগত তাবলীগ ভক্তদের উজ্জীবিত করতে বিশেষ নসিহত করেন তিনি। বয়ান শেষে সকাল ১২টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আখেরি মোনাজাত। শেষ হয় ১২টা ৪৫ মিনিটে।
মোনাজাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। 
প্রায় ৩০ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী প্রথম ১৫ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষের দিকে ১৫ মিনিট দোয়া করেন উর্দু ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ একসঙ্গে হাত তুলে দোয়ায় শরিক হন।
তাবলীগ জামাতের আয়োজনে মুসলমানদের অন্যতম এই বৃহত্তম সমাবেশের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। আর গতকাল ভোরে শীতকে উপেক্ষা করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার লোকজন রওনা হয় ইজতেমা ময়দানের দিকে। সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকার সড়ক-মহাসড়ক, অলি-গলি ও খালি জায়গায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো ইজতেমা এলাকা।

ইজতেমাস্থলে পৌঁছতে না পেরে অনেক মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, বস্তায় ও পলিথিন বিছিয়ে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং অলি-গলিসহ বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেন। নানা বয়সী বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি নারীদেরও মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। এমনকি বাসা-বাড়ি ও কারখানার ছাদ, নৌকা, বাসের ছাদসহ যে যেখানে পেরেছেন সেখানেই বসে দুই হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। 
আয়োজকরা জানায়, বিশে^র ৬৪টি দেশের প্রায় ১০ হাজার মুসল্লিসহ দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। 

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো ২০২৩ সালের বিশ^ ইজতেমা। ইজতেমা নিয়ে জটিলতার কারণে কয়েক বছর হলো ইজতেমায় আসেননি তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভী। তবে এবার এসেছেন তার তিন ছেলে ও এক জামাতা। বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ সাদ কান্ধলভী গত শুক্রবার জুমার নামাজের ইমামতি করেন এবং গতকাল আখেরি মোনাজাতও তিনিই পরিচালনা করছেন। মেজো ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ সাঈদ বিন সাদ কান্ধলভী ও তৃতীয় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী এবং জামাতা মাওলানা মোহাম্মদ হাসান দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনই বেশির ভাগ সময় বয়ান করেছেন। মোনাজাতের আগে বিশ্বব্যাপী তাবলীগ জামাতের সাথীদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন মাওলানা ইউসুফ। 
মোনাজাতে বারবার তাওবা-ইস্তেগফার করে নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও গোনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদে থাকার জন্যও প্রার্থনা করেন। আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ সাদ বলেন, ‘হে দয়াময় মাওলা! যে কাজের জন্য আপনি আমাদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা সেসব থেকে গাফেল। মেহেরবানি করে আমাদের গাফিলতির পর্দা উঠিয়ে দিন। আমাদের উদাসীনতা দূর করুন।
হে আল্লাহ! আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন। আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিন।
হে আল্লাহ! আমরা পাপিষ্ঠ গোনাহগার, আমরা অপরাধী, আমরা আপনার নির্দেশ ভুলে যাই, আমরা ভুল করি; অনুগ্রহ করে আমাদের সব গোনাহ আপনি ক্ষমা করে দিন। আমাদের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে কবরবাসী প্রত্যেক মুসলমানকে আপনি মাফ করে দিন।

হে আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহ আজ দাওয়াতের কাজ থেকে দূরে সরে গেছে, জাগতিক মোহ, নফসের পূজা আর প্রবৃত্তির অনুসরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আপনি উম্মাহকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। দুনিয়ার মোহ, নফসের খাহেশাত থেকে দূরে রেখে আমাদের মূল জিম্মাদারির সঙ্গে থাকার তওফিক দান করুন।
হে আল্লাহ! আমাদের দ্বীনের ওপর অটল, অনড় ও অবিচল থাকার যোগ্যতা দিন। হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী, আপনি ক্ষমাকারী। আমরা দিশাহারা, আপনি আমাদের সুপথ দান করুন।

হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান বাড়িয়ে দিন। ঈমানি দাওয়াত প্রচারে ঘর থেকে বের হওয়ার তওফিক দিন। ঈমানি দাওয়াতে সাহাবায়ে কেরামের মতো যেকোনো ত্যাগ, কষ্ট ও ক্লেশ সহ্য করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য দান করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঈমানে পরিপূর্ণতা দান করুন। আপনার সব নির্দেশ আপনার হাবিবের সুন্নাত মোতাবেক যথাযথ পালন করার তওফিক দিন।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে সুন্নত মোতাবেক জীবন গড়ার তওফিক দিন। সুন্নতের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার তওফিক দান করুন। বিদয়াত থেকে আমাদেরকে দূরে রাখুন। সুন্নত ও বিদয়াতকে চেনার ও পার্থক্য করার জ্ঞান দান করুন।
সবশেষে মাওলানা ইউসুফ কোরআনের সর্ব শ্রেষ্ঠ দোয়া- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাতও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার’ এ দোয়ার মাধ্যমে তার মোনাজাত শেষ করেন।
ফিরতি যাত্রায় বিড়ম্বনা: আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পর এক সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ফিরতে শুরু করলে সর্বত্র মহাজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী স্টেশনে ফিরতি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমাণ ট্রেনগুলোতে উঠতে মানুষের জীবনবাজির লড়াই ছিল উদ্বেগজনক। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে ও দরজা-জানালায় ঝুলে শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে দেখা যায়।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status