প্রথম পাতা
সিলেটে বড় প্রকল্পের সমীক্ষা ছোট প্রকল্প দিয়ে নদী খনন শুরু
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২২ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবারবর্ষায় ডোবে সিলেট। শুষ্ক মৌসুমে হয়ে পড়ে পানিশূন্য। লেয়ার কমে যাওয়ায় অনেক এলাকায় টিউবওয়েলে পানি মিলে না। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই অবস্থা সিলেটেও। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জের মানুষ বর্ষায় বন্যায় ডোবে আর শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে। ক’বছর ধরে সিলেট নগরেও দেখা দিয়েছে এ পরিস্থিতির। গত বছরে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দু’দফা বন্যায় ডুবে যায় সিলেট। বন্যা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। নগরও ডুবে যায়। স্থায়ী বন্যা দেখা দেয়।
গতকাল শেষ হয়েছে অপেক্ষার প্রহর। সিলেটে সুরমায় নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ প্রকল্পের পরিধি হচ্ছে মাত্র ২৯ কিলোমিটার এলাকা। এরমধ্যে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন- এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা। অর্থ্যাৎ পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা। এদিকে সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন প্রকল্পের জন্য বড় একটি প্রকল্পের সমীক্ষা চলছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এ সমীক্ষা চলছে বলে জানা গেছে। সমীক্ষার পর প্রকল্প ব্যয়সহ নানা বিষয় উপস্থাপন করা হবে। সূত্র মতে, এ প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এখন বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। সুরমা ও কুশিয়ারার উৎপত্তিস্থল জকিগঞ্জ থেকে ভাটি দিয়ে প্রবাহিত সুনামগঞ্জ পর্যন্ত নদী খননের সমীক্ষা করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের মতে, ওই প্রকল্প সমীক্ষার পর সেটি অনুমোদনসহ নানা কাজে আরও সময় ব্যয় হবে। চলতি বছরে সেটি আলোর মুখ না দেখতে পারে। এ কারণে স্থানীয়ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের পক্ষ থেকে নদী খনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা গ্রহণ করে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সিলেট শহর ও পাশের এলাকায় নদী খনন। এ ব্যয় ধরা হয় ৫০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে এসেছে।
প্রকল্পের কাজ গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন উদ্বোধন করেন। সিলেট সদর উপজেলার চাঁনপুর এলাকার সুরমা নদীতে খনন কাজ শুরু হয়েছে। দু’টি ড্রেজার দিয়ে পাইপের মাধ্যমে মাটি তীরের অদূরে ফেলা হচ্ছে। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে বিশ্বনাথের দশগ্রাম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার এলাকায় এই প্রকল্পের বিস্তৃতি। তবে পুরো এলাকা খনন হবে না। প্রকল্পের ভেতরে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হবে। এই এলাকাগুলোর কোথাও কোথাও নদীতে চর পড়েছে। আবার নদীর মাঝখানে ভরাট হয়ে গেছে। দেখে দেখে ওই সব এলাকার নদী খনন করা হবে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ মানবজমিনকে জানান, এই প্রকল্প অনেক উপকারী হবে। বিশেষ করে সুরমা নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারবে। এতে নদীর নাব্যতা ফিরে পাবে। তিনি আরও জানান, আমরা প্রথমে সিলেট নগরের নিচের এলাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। নিচু এলাকার কাজ শেষ হলে উজানে অর্থ্যাৎ সিলেট নগরে কাজ শুরু করা হবে। আমরা আশাবাদী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এই প্রকল্পের প্রস্তাবনা সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গ্রহণ করে সেটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। অনুমোদন হয়ে আসার পর কাজ শুরু করা হবে। এদিকে পাউবো কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প থেকে যে মাটি কিংবা বালি তীরে উত্তোলন করা হবে সেগুলো জেলা ও প্রশাসক ও ইউএনওরা দেখভাল করবেন। যদি কোনো সরকারি স্থাপনায় কাজে লাগে তাহলে সেখানে নেয়া হবে। নতুবা প্রকল্পের কাজ শেষে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, সিলেট শহর থেকে লামাকাজি পর্যন্ত সুরমা নদীর কোথাও ২০ ফুট আবার কোথাও ১৫ ফুট খননের ডিজাইনসহ কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।