ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করবে ঢাকা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
২২ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেছেন, নীতিগতভাবে উন্মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক চায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে নিজস্ব কর্মকৌশল প্রণয়ন করছে ঢাকা। তাই এখনই (যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত) ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কের    
(আইপিইএফ) মতো কোনো মুক্ত বাণিজ্য ফোরামে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ও ইন্দো-প্যাসিফিক সহযোগিতা: অগ্রাধিকারমূলক সমস্যা এবং উদ্বেগ’- শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স আয়োজিত সংলাপটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর শাহাব এনাম খান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে যোগ দেয়ার বিষয় নয়, এটি কিছু নীতির ওপর নির্ভর করে এবং এ বিষয়ে কোনো ভুল ধারণা থাকলে তা দূর করা দরকার।

 ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে বড় দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- প্রতিযোগিতা ভালো, এটি সমৃদ্ধির জন্য উপকারী। বাংলাদেশ জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এগিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, গত বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ঢাকা সফরের সময়ে বার্তা দিয়েছিলেন, বৃহৎ ইন্দো-প্যাসিফিক ক্যানভাসের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার প্রায় সব বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
ওই স্ট্র্যাটেজির সমর্থক অন্য রাষ্ট্রগুলোও আইপিএসে বাংলাদেশের সক্রিয় উপস্থিতি চায়। কিন্তু এ নিয়ে আইপিএস বিরোধী চীনের আপত্তি রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে স্বতন্ত্র কৌশল নির্ধারণের জন্য আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শনিবারের বক্তব্যে সেটি আরও স্পষ্ট হলো। সেগুনবাগিচা আগেই জানিয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যেই এই সংক্রান্ত কৌশল নির্ধারণ করতে চায়। ব্যালেন্স ওই স্ট্র্যাটেজি এমনভাবে করা হবে যেখানে আমেরিকা, ইইউ, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি রিফ্লেকশন থাকবে আবার বাংলাদেশের অন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকেও আহত করবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের চাওয়া প্রসঙ্গে ক’দিন আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে অনেকে অনেক স্ট্র্যাটেজি দিয়েছে, তা আমরা দেখছি। এখানে আমাদের  নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। আমরা একটি নীতি নিয়ে কাজ করছি। আশা করি মার্চের মধ্যে একটি সামগ্রিক গাইডলাইনস্ এবং প্যারামিটার্স দিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করতে পারবো।

রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকাকে খর্ব করা যাবে না: এদিকে সংলাপে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও এ সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ। এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাকে কোনো অবস্থাতেই খর্ব করা যাবে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের তরফে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার সমন্বয় করছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুনিয়ায় নতুন নতুন মানবিক ইস্যু তৈরি হওয়ার পরও সরকারের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর সমালোচনামূলক রিপোর্টের প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের প্রতি মানবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাবে যতদিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা আমাদের ভূখ-ে থাকবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ সন্ত্রাস, মানব পাচার, মাদক ব্যবসা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মতো অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকলে আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করবো না। 

অন্যদের অভিমত: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ আইপিএস’র সুবিধা গ্রহণ করতে পারে
এদিকে সংলাপে অংশ নেয়া অন্য বক্তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ আইপিএস’র সুবিধা গ্রহণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন। তাদের মতে, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) সার্থক করতে গেলে এ অঞ্চলে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। আর এ অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকট নিরসন না হলে শান্তি এবং নিরাপত্তা টেকসই হবে না। ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও বাংলাদেশ আইপিএস’র সুবিধা গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করেন তারা। বিভিন্ন দেশ ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ফোরামে (আইপিইএফ) যোগ দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান বলেন, এর সদস্য হতে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয়। আইপিইএফ’র যে ভিত্তিগুলো রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটিতে ভারত আপত্তি জানিয়েছে। তার মানে হচ্ছে এখানের ভিত্তিগুলোর মধ্যে পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এতে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা অসুবিধাগুলো বিবেচনা করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকটটি বড় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনকে আইপিএস’র গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেখতে চাই। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে এ সংকট সমাধান করা যায়। রোহিঙ্গা বিষয়ে সরকার আবারো চিন্তা করতে পারে। 

সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সুবিধা নিয়ে সংকট নিরসন করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র হওয়ার পর বাংলাদেশ তা নিরসনে কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা থেকে আমরা কিছু অর্জন করতে পারিনি। একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। সংকট নিরসনে তিনি আরাকান আর্মির সঙ্গে দরকষাকষির পরামর্শ দেন। ভারত ও চীন দুই দেশেরই জ্বালানি চাহিদা রয়েছে জানিয়ে লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান বলেন, চীন মিয়ানমারকে তার জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করে থাকে। একইভাবে মিয়ানমারে ভারতের কালাদান প্রকল্প একটি কৌশলগত প্রকল্প। ভূ-কৌশলগত কারণে ভারত কখনই চায় না যে মিয়ানমার পুরোপুরি চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাক। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান ধরে রাখতে চীন মিয়ানমার ও পাকিস্তানে বিনিয়োগ করছে। ফলে এখানে ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত ‘টেকটোনিক প্লেট’ এর নড়াচড়া হচ্ছে। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবাধ ও মুক্ত চায় জাপান জানিয়ে দেশটির ঢাকার রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনরি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে জাপান তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আর এ সংকটের সমাধান ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জরুরি। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সš§ানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন হতে হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status