ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সর্বনাশের হোতা রুবেল

শুভ্র দেব
১৮ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ছেলে রুবেল রানা ওরফে জুনায়েদ রুহানী ওরফে রুহানী রুবেল। নিজের পরিচয় দেয় ম্যাজিস্ট্রেট থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি’র পিএস, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারি বড় বড় দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যদিও বাস্তবে ৩৬ বছর বয়সী এই যুবক বড় এক প্রতারক। দেখতে হ্যান্ডসাম, পরনে ম্যাচিং সুটকোট, পায়ে দামি জুতা আর সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করাই তার পুঁজি। বিশেষকরে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করতো এই প্রতারক। ফেসবুকে সুন্দরী শিক্ষার্থীদের আইডি পেলে বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব পাঠাতো। তার আইডির প্রোফাইলে ম্যাজিস্ট্রেট বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছে সেটি উল্লেখ থাকতো। এতে করে যেসব শিক্ষার্থীদের টার্গেট করতো তারা সহজেই তার কাছে ধরা দিতো। কয়েকদিন কথা বলে প্রথমে বন্ধুত্ব পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো। তাদের বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন
এভাবে গত কয়েক বছরে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সর্বনাশ করেছে। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকার বেশি। মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করে মন ভেঙেছে শিক্ষার্থীদের। শুধু সুন্দরী শিক্ষার্থীই নয় অনেক পুরুষও তার প্রতারণায় পড়ে নিঃস্ব হয়েছে। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর) তাকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, রুবেলের বিরুদ্ধে অপরাধের পাহাড়। অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। চাকরি দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। যখন ভুক্তভোগীদের বড় বড় পরিচয় দিতো তখন তারা সহজেই তাকে বিশ্বাস করতো। তার চলাফেরা, কথাবার্তা, স্টাইলও ছিল অন্যরকম। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতো। দামি গাড়িতে চলতো। কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইলে দামি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতো। দামি উপহার দিতো। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি প্রতিদিন ফেসবুকে পোস্ট দিতো। নারীরা ফোন দিলেই বুঝাতো সে সরকারি কোনো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে মিটিং করছে। 

করোনাকালীন সময়ে মানুষকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে জনপ্রতি অগ্রিম ১০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে। এছাড়া ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) পাঠানো, স্বজন ও সহপাঠীদের কাছে কুৎসা রটানো, এমনকি ছবি সম্বলিত বাজে পোস্টার লাগাতেও পিছপা হতো না।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা মামলার এজাহারে এক বিশ্ববিদ্যালয় তরুণী উল্লেখ করেছেন, ২০২০ সালে রুহানীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর সে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাকে সুবিধার লোক মনে হয়নি। তাই তিনি সম্পর্ক থেকে সরে আসলে, রুবেল আক্রমণাত্মক আচরণ করতে থাকে। সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে রুবেল ওই শিক্ষার্থীর ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন ছবি সংরক্ষণ করে রাখে। পরে একদিন তিনি  বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন, তার ওইসব ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। যাতে লেখা, ‘চিনে রাখুন ডিভোর্সি, বহুরুপি, মিষ্টভাষীকে’। তার কর্মক্ষেত্রেও বিভিন্ন কুৎসা রটানো হয়। পাঠানো হয় ভুয়া ওয়ারেন্টের কাগজ। নম্বর পরিবর্তন করেও তার অপতৎপরতা থেকে মুক্তি মেলেনি। নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর মতোই ফাঁদে ফেলেন সামিয়া নামের আরেক তরুণীকে। তাকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এ ছাড়াও সরকারি চাকরির প্রলোভনে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ও নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ৬০ হাজার টাকা। এভাবে বিভিন্ন অ্যামাউন্টে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। 

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, প্রতারণার মাস্টার বনেছিল এই রুবেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী শিক্ষার্থীদের আইডি পেলেই প্রস্তাব পাঠাতো। তার আইডি দেখে যে কেউ প্রস্তাব গ্রহণ করতো। তারপর নিজের পরিচয়, ক্ষমতা, প্রলোভন ও মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে নারীদের পটাতো। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। আমাদের কাছে অনেক নারীরা অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতা পাই। তারপর গ্রেপ্তার করি। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও ও পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে। ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে রুহানী কারাগারে আছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status