প্রথম পাতা
ডোনাল্ড লু’র সফরের বার্তা
পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র, সমাবেশে সমান অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশের নিশ্চয়তা, ভিন্নমত দমনে ভয়ভীতি প্রদর্শন নয়
মিজানুর রহমান
১৭ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবারডোনাল্ড লু, নামটি নানা কারণে আলোচিত। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়। কোথাও কোথাও সমালোচিতও। পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার নাম ধরেই বক্তৃতা করেন। চীনের দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়া ইমরান মনে করেন তার বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনকে বিষিয়ে তুলতে ডোনাল্ড লু’ই কলকাঠি নেড়েছেন। মার্কিন প্রশাসন অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। সাউথ এশিয়া এক্সপার্ট খ্যাত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দিল্লিতে দু’দিন কাটিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ছিলেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ওই সফরে তিনি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাকে ‘অনেস্ট বা সৎ’ এবং ‘ওপেন বা খোলামেলা’ বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন বাইডেন প্রশাসনের প্রতিনিধি লু। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারেও তিনি সরকারের তরফে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সূত্র বলছে, ওয়াশিংটনের তরফে খোলাসা করেই বলা হয়েছে নির্বাচনের আর মাত্র ক’মাস বাকি। এই সময়ে অনুষ্ঠেয় সভা-সমাবেশে সরকার ও বিরোধী দলে সমান অধিকার থাকা উচিত। কোনো অবস্থাতেই স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সমাবেশে বাধা দেয়া সমীচীন হবে না। সহিংসতা বরাবরই নিন্দনীয় জানিয়ে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনীর বলপ্রয়োগ বা ভিন্নমতের লোকজনকে কোনো রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে কিনা? তা ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অবস্থান জানিয়ে লু বলেন, বন্ধু হিসেবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যেকোনো সংকটে পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, সত্যিকারের বন্ধুত্ব সেটাই যেখানে একে অন্যের কঠিন সময়ে পাশে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র তা-ই করছে। গত ৫০ বছরে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের পাশে ছিল, আগামী দিনেও থাকবে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক যেকোনো সংকট (পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে) একসঙ্গে মোকাবিলা করবে। ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের যেসব বিষয়ে আলোচনা এবং ঐকমত্য হয়েছে তা ডকুমেন্টে রাখতে যৌথ প্রেস ব্রিফিং ছাড়াও স্বতন্ত্র সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লু’র সঙ্গে বৈঠক না হলেও সরকারের শীর্ষ মহল যে এসব বিষয়ে অবহিত তার ইঙ্গিত মিলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সোমবারের বক্তব্যে। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি ত্রুটিমুক্ত, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে। সরকারের তরফে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে নির্বাচন পূর্ব রাজনৈতিক পরিবেশে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে এমনটাই জানিয়েছেন ডোনাল্ড লু। একাধিক সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে ততই নিশ্চিত করতে হবে সরকার ও বিরোধী দলগুলো উভয়ই যেন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকার পায়। নিশ্চিত করতে হবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও। আমরা যখনই সহিংসতা দেখবো তখনই নিন্দা করবো। সেটি সরকার, বিরোধী দল বা নিরাপত্তা বাহিনী যার দ্বারাই হোক না কেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে কিনা, সে বিষয়েও আমরা সজাগ রয়েছি। আমরা বিষয়টি সবার সামনে বলবো। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে লু সাফ জানান, স্যাংশনের পর র্যাবের সংস্কার এবং তাদের মানবাধিকার সমুন্নত রেখে দায়িত্ব পালনের কারণে নতুন করে (ব্যক্তি পর্যায়ে আরও) নিষেধাজ্ঞা এড়ানো গেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে আরও কার্যকরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে র্যাবকে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বন্ধু আখ্যা দিয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে এখানে যা ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত। তবে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের এতদিনের টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘জবরদস্তিমূলক’ কূটনীতির জন্য পরিচিত ডোনাল্ড লু’র সদ্য সফরটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তার আলোচনা এবং যেসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে তার বাস্তবায়নের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ মজবুতি। তারা মনে করেন আলোচিত এই সফর রাজনৈতিক অসন্তোষ নিরসন, রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ, মার্কিন বিনিয়োগ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ বেশ কিছু বিষয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।