ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

বিনোদন

আলাপন

ভালো গান শুনছি না বহুদিন -মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্

কাজল ঘোষ

(১ বছর আগে) ২১ মে ২০২২, শনিবার, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:০৬ অপরাহ্ন

mzamin

বহু গুণে গুণী কবি, গীতিকার ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্। করোনায় থমকে যাওয়া সময়কে গতিময় করতে তার লেখা ও সুরে ঢাকায় প্রকাশ হচ্ছে একটি মিউজিক ভিডিও। প্রায় পাঁচ বছর পর। কলকাতার নন্দিত শিল্পী পিউ মুখার্জি গাইবেন এই আয়োজনে। গানটির ডিভিডিতে যন্ত্রানুসঙ্গ পরিচালনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত তেজেন মজুমদার। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যায় গুলশানে লেকশোরের বলরুমে ডিভিডিটি উন্মুক্ত হবে। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেছে এসিআই মটরস লি. এবং ইয়ামাহা মিউজিক বাংলাদেশ। এ আয়োজন ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্। কতদিন পর এমন একটি সঙ্গীত আসরের আয়োজন? মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ বলেন, পাঁচবছর পর। 

মাঝখানে করোনায় সবকিছুই থমকে গিয়েছিল। এখন আবার প্রাণ ফিরছে।

বিজ্ঞাপন
আর ছন্দহীন জীবনে গতিময়তা ফেরাতেই ক্ষুূদ্র এই আয়োজন। আয়োজনের বিশেষত্ব কি থাকছে? উত্তরে তিনি বলেন, বিশ^জুড়ে করোনায় মানুষ গান থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। উন্মুক্ত গানের আসর বন্ধ ছিল। সুর-লয় বন্দি হয়ে পড়েছিল। ভালো গান শুনতে পাচ্ছিলাম না অনেকদিন। শিল্পীরাও তেমন একটা গান নিয়ে মাতোয়ারা ছিলেন না এ সময়। মাঝখানের আড়াই বছর খুব খারাপ গেছে। শিল্পীদের একত্রিত হওয়ার কোনও সুযোগই ছিল না। এই বন্ধ সময়ে কিছু কবিতা লিখেছিলাম। সেই কবিতাগুলোই সুরারোপ করে গানে রূপ দিয়েছি। এর সঙ্গে যুক্ত করেছি পুরনো কিছু গান। গানগুলো হারিয়ে যেতে পারে তাই নতুন ও পুরনো মিলে একটি রেকর্ড বের করার পরিকল্পনা করি।  

আয়োজনে ওপার বাংলার সম্পৃক্ততা কিভাবে? মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ বলেন, ইউটিউবে একদিন পিউ মুখার্জির গান শুনলাম। আমার কাছে মনে হলো তার কন্ঠ খুব ভালো। কলকাতায় খবর পাঠালাম আমার গান গাইবে কিনা! তিনি রাজি হলে কাজ শুরু করি। আমি নিজেও কলকাতা যাই। সেখানকার অপর সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব পন্ডিত তেজেন মজুমদার এই কাজটিতে যুক্ত হয়ে তা আরও এগিয়ে নেন। তিনি একাধিকবার ঢাকায় বেঙ্গল আয়োজিত শুদ্ধ সঙ্গীতের আসরে এসেছেন। তার নেতৃত্বে যন্ত্রানুসঙ্গ সম্পন্ন করি। রেকর্ডটি ঢাকাতেই প্রকাশের চিন্তা করি। পুরো কাজটিই আমি করেছি ভেতরের তাগিদ থেকে। চারপাশের সবকিছু নিয়েই এখন নেতিবাচক ভাবনা, সঙ্গীতও বাদ নেই? মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহর বলেন,  সময়টা হয়তো ভালো যাচ্ছে না। 

কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে কবিতা, গান এগুলো মরে গেছে। মনের ভেতরে কবিতা গান জীবিত আছে। এগুলো বের করে উন্মুক্ত করার জন্য যে পরিবেশ দরকার তা নেই। গান বাজনা কবিতা এসবের জন্য একটি আবহের দরকার হয়। সারা পৃথিবীই এখন একটি অস্থিরতার মধ্যে আছে। যুদ্ধ চলছে দুনিয়ার অন্যপ্রান্তে। গান বা কবিতার জন্য মনে একটি প্রশান্তি দরকার। এই প্রশান্তিই চলে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। যে দেশের সবকিছু বেসুরো হয় সেখানে গানও তার সুর হারায়। ভালো গান বহুদিন শুনি না। কম্পোজাররা কম্পোজ করছেন না। গান যারা গায় তারা কম গাইছেন। আগে গানের রেকর্ড পাওয়া যেতো এখন তাও খুব একটা দেখা যায় না। 

এখন সেই সিস্টেমই ওঠে গেছে। রেকর্ড নেই, সিডি নেই, চলছে শুধু ইউটিউব। নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে একজন শিল্পীর যাত্রা সবসময় সুখকর নয়। এরসঙ্গে নানান প্রতিবন্ধকতা যুক্ত থাকে। আগে গানের কোম্পানি রেকর্ড প্রকাশ ও প্রচার করতো। এখন সেই প্রচারও ওভাবে হচ্ছে না। বলা হয়ে থাকে ডিজিটালি হওয়ায় পৃথিবী এগিয়েছে, তাহলে এ মাধ্যমে সঙ্গীত কি পিছিয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, ডিজিটাল হওয়ায় শব্দ ধারণ হয়তো সহজ হয়েছে। কিন্তু গানের যে প্রবাহ, কিছুদিন পরপর নতুন নতুন গান আমরা পেতাম তা চলে গেছে। গান লেখা, সুর করা, রেকর্ড করা, আপলোড করা, প্রচার করা তার জন্য যে ব্যয় তা করে তরপর এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা-এই প্রক্রিয়া আমাদের এখানে এখনও সবার জন্য সুখকর নয়। আর এই গান শুনতে যে ধরণের কারিগরি সক্ষমতা দরকার তা তো আমাদের সব মানুষের নেই। দেশে শিল্পী থাকতেও পশ্চিমবঙ্গের সম্পৃক্ততা কেন? মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহর উত্তর- দুই দেশের সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে আদান-প্রদানে একটি ভাটা পড়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়। 

এদেশের শিল্পীরা সেখানে যাবে আবার তারাও এখানে আসবে। ভালো কিছু চর্চায় এগুলো খুব দরকার। কিন্তু সম্প্রতি দু দেশের শিল্পীদের মধ্যে আদান-প্রদান এবং যাতায়াত এত কমে গেছে যে মনে হয় এটা বুঝি গোপন কিছু হচ্ছে। আমরা ভরা মাঠে গান গাইতাম। সেই জায়গাটা থমকে আছে। এই বাতাসটি গান, কবিতা কোন কিছুর জন্য ভালো নয়। দু বাংলা মিলে বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষি মানুষ। বাংলা পৃথিবীর বৃহৎ জনগোষ্ঠীরও ভাষা। সুতরাং সকল সীমাবব্ধতার পরও গানকে এগিয়ে নিতে হবে। যারা সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে তাকে সৃষ্টি করে যেতে হবে। ভাটার সময়ই একটি কাজ করলাম। আশা করি, সকলের ভালো লাগবে। আপনি তো সঙ্গীত পরিবারের, প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগম আপনারই বড় বোন! তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে আনন্দ দিয়ে তিনি চলে গেছেন ওপারে চিরতরে। সঙ্গীত জগতে তার অবদান অনন্য। বিশেষ করে নজরুল সঙ্গীতের প্রসারে। আশা করি মানুষ তাকে মনে রাখবে।  

বিনোদন থেকে আরও পড়ুন

   

বিনোদন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status