ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে বাঁধ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২১ মে ২০২২, শনিবার
mzamin

উজানে ভারতের বরাক নদী। জকিগঞ্জের অমলসীদে এসে ভাগ হয়েছে। একটি সুরমা, অন্যটি কুশিয়ারা। এক সপ্তাহ আগে থেকে সুরমায় ঢল নামে। সেটি অবশ্য বরাক দিয়ে নয়। লোভা, সারিসহ কয়েকটি শাখা নদীর পানি 
বিপদসীমা অতিক্রম করায় সিলেট নগর কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। কুশিয়ারা তীরবর্তীর মানুষজন কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু তাদের এই স্বস্তি এখন আর নেই। কুশিয়ারা নদীতেও গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নেমেছে ঢল। অমলসীদ, বরাক, সুরমা ও কুশিয়ারার মিলনস্থল।

বিজ্ঞাপন
ত্রিমোহনা বলা হয়ে থাকে এই জায়গাকে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই ওই এলাকায় তীব্র বেগে নামতে শুরু করে পানি। সন্ধ্যার মধ্যে ত্রিমোহনায় পানি উপচে পড়ে। 

সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় পাহারা। অমলসীদসহ আশপাশের মানুষ বাঁধ ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন। সঙ্গে আসেন বারঠাকুরী ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপুও। মধ্যরাতের পর হঠাৎ বাধ ভেঙে পানি ঢুকতে থাকে বারঠাকুরী ইউনিয়নে। হাহাকার শুরু হয় এলাকায়। পানির তোড়ে ভেসে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। সকালের আগে ইউনিয়নের ১৫-১৬টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। দুপুরে বাঁধ কেটে দেয়ার অভিযোগ করেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা। তিনি জানান, অমসীদে মাছ ও পলির আশায় স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বাঁধ কেটে দিয়েছেন।

 এ কারণে ওই এলাকা দিয়ে পানি ঢুকেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিলয় পাশা জানান, যেসব এলাকা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অমলসীদে রাতভর পাহারায় ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান টিপু। তিনিও আশঙ্কা করেন, রাতে আমরা যে এলাকায় বাঁধের পাহারা দিয়েছি ওই এলাকায় বাঁধ ভাঙেনি। অথচ যে এলাকায় বাঁধ শক্ত সেখানে ভেঙেছে।

 আমরাও আশঙ্কা করছি; কেউ বাঁধ কেটে দিতে পারে। কিন্তু কেউ তো তা দেখেনি। তিনি জানান, তার ইউনিয়নে বুধ ও বৃহস্পতিবারে দু’টি বাধ ভেঙে গেছে। বুধবার ভেঙেছে শাহ শরীফ এলাকা বাঁধ ও বৃহস্পতিবার ভেঙেছে দিঘালী গ্রামের বাঁধ। দু’টি বাঁধের উপর পানি উপচে পড়ে। একপর্যায়ে বাঁধ দু’টি ভেঙে পড়ে। এতে করে তার এলাকায় ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অমলসীদের ঘটনার পর জকিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব হোম দাস জানিয়েছেন, তার উপজেলায় আরও বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব বাঁধ টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও বিজিবিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো কুচক্রী মহল যাতে বাঁধ না ভাঙতে পারে সেকারণে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, নির্দেশনা মতো টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশি নজরদারিও করছে। সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন। 

জকিগঞ্জের কুশিয়ারা অববাহিকা হচ্ছে দক্ষিণ সিলেটের পানি প্রবেশের মুখ। বরাক দিয়েই ৭০ ভাগ পানি ঢুকে কুশিয়ারায়। ইতিমধ্যে ৬-৭টি বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়েছে। এ কারণে জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ-কালের জকিগঞ্জের ভাটির উপজেলা বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে বন্যার পানি আঘাত হানতে পারে। এমন আশঙ্কায় তটস্থ রয়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। তারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে যে পরিমাণ পানি প্রবেশ করেছে তাতে ৬টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল, হাওর, খাল-বিল ভরে গেছে। এখন ঢল নামলে জনপদে পানি আঁচড়ে পড়বে। এতে করে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়তে পারেন। ৬ উপজেলার পানির প্রবেশমুখ জকিগঞ্জ পৌরসভার জনপ্রতিধিরা জানিয়েছেন, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মাইঝকান্দি, ৬ নং ওয়ার্ডের কেছরী ও ১নং ওয়ার্ডের সরসিংপুর এলাকায় বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে পাউবো ও পৌরসভার পক্ষ থেকে কয়েকশ’ বস্তা বালি প্রটেকশনের জন্য দেয়া হচ্ছে।

রাত জেগে মানুষজন বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। ওই তিনটি বাঁধ ভেঙে গেলে পৌরসভার ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে করে নিম্ন এলাকার ৬ উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। সুরমা অববাহিকার কাজলসার ইউনিয়নের করছইর মোড়া, বড়বন্দ এলাকার বাঁধও রয়েছে হুমকির মুখে। কোথাও কোথাও বন্যার পানি বাঁধ উপচে লোকালয় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জকিগঞ্জে কয়েকটি বাঁধ ভেঙে যাওয়াস্থল এবং হুমকিতে থাকা বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- যেসব বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে সেগুলো রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী গতকাল বিকালে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন- সরকারের উদাসীনতার কারণে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জকিগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় বাধ রক্ষায় সুষ্ঠু তদারকি না করা, বাঁধ রক্ষার নামে দুর্নীতি হওয়ায় সিলেট এখন বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে দ্রততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status