দেশ বিদেশ
নয়নের চোখে তখন পানি
সোহেল সবুজ
২১ মে ২০২২, শনিবারস্বপ্নের শহর ঢাকা। রোজ কত না স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আসে, কত স্বপ্ন আবার ভেঙে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ থাকে, যারা স্বপ্ন দেখার সাহস পায় না। পথের মধ্যেই বেড়ে ওঠে, জীবনধারণের কঠিন সংগ্রামে নামতে হয় শৈশবেই। ঢাকার পিচঢালা পথে সেসব স্বপ্নহীনকে অহরহ চোখে পড়ে। ট্রাফিক জ্যামে একটু আটকালেই গাড়ির গ্লাসে টোকা পড়ে, আফা, ভাইজান, স্যার দিমু মালা... লন না একখান গুলাপ, ভাইয়া আফারে কিইন্না দেন না একখান ফুল...। আবদারকারীর বেশির ভাগের বয়স ৪ থেকে ১২/১৩ বছর। তাদের একজন নয়ন। বয়স আর কত? ১১ কিংবা ১২ হবে। বাড়ি নীলফামারী।
বিজ্ঞাপন
নয়নের গলা ভারী হয়ে ওঠে। বলে, বাপে অন্য মারে বিয়ে করে ফেলছে। আমগো খোঁজ-খবর নেয় না। আমগো কাছে মাইনষে ৫০ হাজার টাকা পাইবো। অনেক কষ্ট করে তিন বেলা খাইতে কষ্ট হয়। কেমনে দিমু মাইনষের টাকা। জ্যামের ভিতরে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে হয়। হঠাৎ কইরা জ্যাম ছাড়লে অনেক সময় এক্সিডেন্ট ও হইতে পারে। তাই মাঝে-মধ্যে ভয় করে। কি করমু জীবন তো বাঁচাইতে হইবো। যেই বয়সে তাদের স্কুলের মাঠে গোল্লাছুট খেলার কথা। ক্লাসে বসে শিক্ষকের কাছ থেকে পড়া শেখার কথা। সেই বয়সে তাদেরকে বেছে নিতে হচ্ছে জীবিকার রাস্তা। ছুটে যেতে হচ্ছে শাহ্বাগ, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, চিড়িয়াখানা, পার্ক কিংবা ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে। দুরদুর করে কেউ তাড়িয়ে দিচ্ছে। কেউবা দয়া দেখিয়ে কিনছে দু’-একটা ফুল। নিরাপত্তাহীনতা আর অসহায়ত্ব নিয়েই তাদের জীবন সংগ্রাম। জীবনের সঙ্গে এমন লড়তে লড়তে তারা ভুলে যায় মানুষ। তবে কেউ যদি তাদের সহানুভূতি দেখায় চোখ দিয়ে শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতার আর অন্ত থাকে না। নাঈম নামের জিয়া উদ্যানের এক শিশু বলছে, সবসময় তাদের ফুল বিক্রি হয় না। সেক্ষেত্রে অনেক জোর জবরদস্তি করে তাদের ফুল বেঁচতে হয়। এমন হাজারো পথশিশু স্বপ্নের শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মন্তব্য করুন
দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন
দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত
৪