শেষের পাতা
পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ১১.৭৯ বিলিয়ন ডলার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবারডলার সংকট কাটাতে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে এলসি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও কমেনি আমদানির দায় পরিশোধের হার। ফলে এখনো রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানিতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী আয়েও ধীরগতি চলছে। আশানুরূপভাবে বাড়েনি বিদেশি বিনিয়োগ। এসব কারণে বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি চলতি হিসাব ও সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৯ কোটি ডলার। একই সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতিও ৬.৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩ হাজার ২৫৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সবধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে দেশ।
২০২২ সালের নভেম্বর মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৬৬ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবাখাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৫৩৯ কোটি ডলার। সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ৫৬৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৬২২ কোটি ডলার।
সামগ্রিক লেনদেনেও বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩৮ কোটি ডলার। এই সূচকটিতে আগের বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২০২ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ৮৭৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ৮৬০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সামান্য বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ১৮৫ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা সামান্য বেড়ে ১৯৭ কোটি ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়ে ৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৮৭ কোটি ডলার।
তবে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ২ কোটি ১০ ডলার বেশি চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।