ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

নানামুখী প্রভাব পড়ার শঙ্কা

লাফিয়ে বাড়ছে ডলারের দাম

এমএম মাসুদ ও আলতাফ হোসাইন
১৯ মে ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ডলারের মূল্যের প্রতিফলন হচ্ছে না বাজারে। বেড়েই চলেছে মুদ্রাটির দাম। ব্যাংকগুলো সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত বিনিময় হার অনুযায়ী ডলার সংগ্রহ করে তা একই দামে বা ১০ থেকে ২০ পয়সা বেশিতে আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের নির্ধারিত দরের চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। সর্বশেষ প্রতি ডলারে ৮০ পয়সা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া মূল্য বেড়ে হয়েছে ৮৭.৫০ টাকা। আবার খোলা বাজারে ১০ থেকে ১৪ টাকা বেড়ে ১০২ থেকে ১০৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের তুলনায় সামান্য চাহিদা কমেছে। 

এদিকে বাজারে ডলারের দাম বাড়ায় সার্বিক অর্থনীতিতে বহুমুখী প্রভাব পড়ছে। ডলারের দাম বাড়লে খাদ্যশস্যের দাম বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে সবার ওপর।

বিজ্ঞাপন
এতে ডলারের দাম বাড়লে নেতিবাচক দিকই বেশি। বৃদ্ধি পাবে আমদানি খরচ। ফলে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। বেড়ে যাবে শিল্প স্থাপনের খরচ। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে। টাকার মান কমে গিয়ে হ্রাস করবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। পণ্যের দাম বাড়ায় এবং টাকার মান কমায় চাপ বাড়বে মূল্যস্ফীতির ওপর। যার যন্ত্রণায় ভুগবে নিম্ন, স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ।

এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করে ব্যবহার করলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ টাকা দিয়ে ডলার কিনে যেকোনো বৈদেশিক লেনদেন করলেই বাড়তি খরচ হবে। এর মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ব্যয় ও শিক্ষা ব্যয়। 

তবে ইতিবাচক দিকগুলো হচ্ছে ডলারের দাম বাড়ায় বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানিতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের বিপরীতে দেশে আরও বেশি টাকা পাবে। ফলে তারা লাভবান হবেন।

দেশের বাজারে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ডাল, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, শিশুখাদ্য, মসলা, গম, বিমানের টিকিট ও বিদেশে চিকিৎসা খরচ। বিপাকে পড়েছেন বিদেশগামী যাত্রী ও পর্যটকরা। ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য আগে কখনো এত বেশি হয়নি।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। জ্বালানি তেলের কারণে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। আমদানি খরচের সঙ্গে এটাও যোগ হচ্ছে। বেশি দামে পণ্য আমদানি করায় বাজারে এর দাম বাড়ছে। আবার শিল্পের কাঁচামালও বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

বেশি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করায় সব শ্রেণির পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় পণ্যের মূল্যের ওপর। আবার এখন যে পণ্য বাড়তি মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে তার প্রভাব সামনের মাস ও পরের মাসে পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে এটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। 

এদিকে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স পাঠান, ডলারের দাম বাড়ায় তারা একই ডলার পাঠিয়ে এখন বেশি টাকা পাবেন। এতে তারা লাভবান হবেন। তবে এই টাকা দেখে খরচ করতে গেলে আবার ডলারের দাম বাড়ার নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে তাদেরও পড়তে হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে রপ্তানিকারকরা বিদেশের বাজারে মুদ্রার অবমূল্যায়নজনিত সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ আগে ১০০ ডলার দিয়ে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে যে পণ্য কিনতে পারতেন, এখন তা দিয়ে আরও বেশি পণ্য কিনতে পারবেন।
জামান মানি এক্সচেঞ্জের প্রোপাইটর এস এ জামান বলেন, মঙ্গলবার ডলারের বাজার অস্থিতিশীল ছিল। প্যানিক থেকে এই অস্থিরতা শুরু হয়। রিজার্ভ কম থাকলে ডলারের দাম কিছুটা বাড়বে। সে তুলনায় বুধবার বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আমরা ৯৮.৫০ টাকা থেকে ৯৯ টাকায় ডলার বিক্রি করছি। চাহিদার তুলনার ডলারের কিছুটা সংকটও রয়েছে। 

সিপিডি’র বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা আমদানিকারক তারা এখন বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি করছে। ফলে এতে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যস্ফীতির জন্ম দিতে পারে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করবে। সেটি ইতিমধ্যেই আমরা দেখছি। যারা বিদেশে যাচ্ছেন বিভিন্ন কাজে তাদের খোলা বাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন ডলারের বাজারে যে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে এটাকে কীভাবে স্থিতিশীল জায়গায় আনা যায় সেটি দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য চেষ্টা করছে। তবে দেখা যাচ্ছে ডলার বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে উত্তরণে রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়ার প্রয়োজন হতে পারে। 
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রা নির্বাহে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এটা কিন্তু শুধুমাত্র মুদ্রাস্ফীতি নয়। এটা জীবন যাত্রায় ব্যয় নির্বাহের সংকট হচ্ছে। এর মানে হলো এখন ভোগ কমিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ এটা অধিকাংশ জনগণের ওপর প্রভাব পড়ছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে কমতে পারে, কিন্তু এখানে পলিসির বড় রোল আছে। অর্থাৎ আমাদের যেহেতু অধিকাংশ মানুষ গরিব আছে, আমাদের যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আছে সেটি কিন্তু কাজ করছে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন যে সবাইকে আড়াই হাজার করে টাকা দেবে, কিন্তু মাত্র ৩৫ লাখ মানুষকে দিতে পারছেন। এর কারণ হলো আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যাদের নাম থাকার কথা না তাদের নাম আছে। আর যাদের নাম থাকার কথা তাদের নাম নেই। তাই এটাকে দেখতে হবে জীবনযাত্রা নির্বাহের সংকট হিসেবে। এবং এটা শুধুমাত্র মুদ্রানীতি দিয়ে হবে না। কারণ মুদ্রানীতির মাধ্যমে আপনি বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারেন। কিন্তু মানুষের জীবন যাত্রায়  প্রভাব পড়ে না। কারণ হচ্ছে এখন  নতুন করে দরিদ্র তৈরি হয়েছে।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status