ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

ভুয়া নিয়োগপত্রে কিউআর কোড দিয়ে জালিয়াতি

শুভ্র দেব

(১ বছর আগে) ১৮ মে ২০২২, বুধবার, ৬:২১ অপরাহ্ন

mzamin

নিয়োগপত্রে কিউআর কোড যুক্ত করে চাকরিপ্রত্যাশীদের বোকা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। চক্রটি প্রতি সপ্তাহে ৬০ জন চাকরিপ্রত্যাশীকে টার্গেট করতো। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মূলহোতা মো. মোশারফ হোসেন ও তার সহযোগী মো. জিয়া উদ্দিন। গত সোমবার মধ্যরাতে দারুস সালাম থানার আনন্দ নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন, ৭টি সিম কার্ড, বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার বেশকিছু ভুয়া প্রশ্ন, প্রবেশপত্র ও কিউআর কোড সংবলিত নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

ডিবি জানায়, চক্রটি প্রথমে নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন রিকশাচালক, সিকিউরিটি গার্ড, যানবাহনের চালক, সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতো। তারা নিজেদেরকে সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো। যার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠতো তাকে নিজে থেকেই বলতো তার কোনো আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের চাকরি লাগলে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। যোগাযোগের জন্য চক্রের সদস্যরা মোবাইল নম্বর নিয়ে আসতো। পরে কোনো দপ্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে, চক্রের সদস্যরা সখ্য গড়ে ওঠা ব্যক্তিদের ফোন করে, চাকরিপ্রত্যাশী থাকলে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলে।

বিজ্ঞাপন
তাদের ফাঁদে কেউ পা দিলে, চাকরিপ্রত্যাশীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করা এবং কিউআর কোড সংবলিত ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ধাপে ধাপে টাকা নিতো। নিয়োগপত্র পেয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করলে জানতে পারে নিয়োগপত্রটি ভুয়া। চক্রের সদস্যরা ততক্ষণে যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যম বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যেত। 

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চক্রের মূলহোতা মোশারফ হোসেন এক সময় গার্মেন্টে চাকরি করার সময় আরেক প্রতারকের পাল্লায় পড়ে নিয়োগ জালিয়াতির কৌশল আয়ত্ব করে। দুই বছর ধরে সহযোগী জিয়া উদ্দিনকে নিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে সব সময় বিভিন্ন দপ্তরের ছোট ছোট পোস্টে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাতো। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রথমে ই-মেইলের মাধ্যমে জীবন বৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি ও অন্যান্য সব ডকুমেন্ট নিতো। পরে এসব তথ্যের মাধ্যমে একটি ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে প্রার্থীর ই-মেইলে পাঠাতো। এরপর বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছেন বলে জানাতো।

কিছুদিন পরে ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ডের মাধ্যমে অপর এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুনরায় কল করে মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ কিছু টাকা বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে দিতে বলে। সেই টাকা পাওয়ার পর প্রতারক চক্রটি একটি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য চাকরিপ্রত্যাশীদের ‘কিউআর কোড জেনারেটর’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম-ঠিকানা সংবলিত একটি ‘কিউআর কোড’ তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি স্থাপন করে। এরপর প্রার্থীকে বলা হয়, ‘কিউআর কোড স্ক্যানার’ দিয়ে আপনার নিয়োগপত্রটি সঠিক কিনা যাচাই করুন। প্রার্থী যখন তার মোবাইলের কিউআর কোড স্ক্যানার দিয়ে চেক করে তখন সেখানে নিজের তথ্য দেখায় এবং প্রার্থী চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে এই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এর মধ্যে তারা ব্যবহৃত ফোনগুলো বন্ধ করে ফেলতো। 

এদিকে থানায় করা মামলায় ভুক্তভোগী এছাহাক উল্লেখ করেছেন, তিনি একজন আনসার সদস্য। গত ২৩শে মার্চ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে ডিউটি করার সময় পূর্ব পরিচিত মোস্তফা ও অন্য একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি একজন রোগীকে ভর্তি করিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। পরে তাকে তিনি সহযোগিতা করেন। তখন ওই ব্যক্তি তাকে বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে থাকলে তাকে জানানোর জন্য সেনাবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দিতে পারবে। এছাহাক আলীর ছেলে ও ভাগিনাকে সেনাবাহিনীর স্টোরকিপার পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে গত ৫ই মে বনানী থানায় মামলা করেন এছাহাক আলী। মামলায় বলেন, চাকরি পাইয়ে দিতে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়। প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাঠানোর পর ধাপে ধাপে আরও টাকা চাওয়া হয়। এক পর্যায়ে কিউআর কোড দেয়া নিয়োগপত্র পাঠিয়ে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। তখন সেনাবাহিনীর একজন মেজরকে ওই নিয়োগপত্র দেখিয়ে জানতে পারেন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন তিনি।

ডিবি’র সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের টিম লিডার ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, অনৈতিক পথ অবলম্বন করে চাকরি পাওয়ার আশায় প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা আইনগত ব্যবস্থা নিতো না। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাদের সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

চাকরিপ্রার্থীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা কাউকে দিতে হয় না। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া নিজের তথ্য কাউকে দেয়া যাবে না। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র কোনোভাবে পাওয়ার সুযোগ নাই। কোনো ধরনের অবৈধ বা অনৈতিক পন্থায় সংগ্রহের চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কেউ প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রস্তার দেয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগপত্র লাভ করতে হয়। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপত্র লাভের কোনো সুযোগ  নেই। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status