প্রথম পাতা
ছুটির দিনে অবরুদ্ধ নয়াপল্টন
স্টাফ রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবারপুলিশ ও বিএনপি’র সংঘর্ষের পর থেকে নয়াপল্টন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও নয়াপল্টন ছিল কার্যত অবরুদ্ধ। পুরো এলাকায় ছিল সুনসান নীরবতা। ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে পুলিশ। সড়কের আশপাশে বাসিন্দাদের উল্টো সড়ক হয়ে ঘুরে যেতে হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশের ব্যাপারেও ছিল কড়াকাড়ি। বিএনপি’র কার্যালয় বন্ধ ছিল। দলটির কোনো নেতাকর্মীকে অফিসে আসতে দেখা যায়নি। তবে গতকালের জুমার নামাজকে ঘিরে নয়াপল্টনে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে পুলিশ। নামাজ শেষে কেউ যাতে মিছিল বের করতে না পারে সেই দিকেও লক্ষ্য ছিল তাদের।
নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুলে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহন উল্টোপথে ঘুরিয়ে দিয়েছে। সকাল থেকেই পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। পুরো এলাকাজুড়ে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ। বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় ঘিরে যেসব গলি রয়েছে সেগুলোর গেট বন্ধ রাখা হয় এবং যেগুলোতে গেট নেই সেগুলোতে ব্যারিকেড বসানো হয়। এসব পথে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পল্টন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়নি। ফকিরাপুল ও নাইটিঙ্গেল মোড়ে যে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে পুলিশ তা পর্যবেক্ষণ করছিল। সন্দেহভাজনদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গতকাল সকালে নয়াপল্টন এলাকা থেকে অন্তত ৭-৮ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে মাহাবুবুল আলম রবিন নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করা হয়। তাকে পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
আটক হওয়ার পর রবিন জানান, তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই স্লোগান দিতে থাকেন তিনি। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে রহমতুল্লাহ নামে আরেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে তোলার সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি গার্মেন্টসে কাজ করেন। পল্টন এলাকার পরিস্থিতি দেখতে এসেছেন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও বিএনপি সমর্থন করেন।
গতকাল জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে কয়েকজন নেতাকর্মী বিএনপি কার্যালয় এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নয়াপল্টনে মসজিদে নামাজের আগেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করে পুলিশ। গলির মূল গেট লাগিয়ে দেয়া হয় এবং তার সামনে এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়ন করা হয়। তবে নামাজ শেষে যাদের বাসা মূল সড়কের ওই পাড়ে তাদের যেতে দেয়া হয়। এসময় কিছু ব্যক্তি মূল সড়কে যেতে না পেরে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। পুলিশ গেট খুলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, যারা জুমার নামাজ আদায় করেছেন আমরা তাদের কোনো ধরনের বাধাই দিচ্ছি না। জুমার নামাজ আদায় করে যার যার বাসায় চলে যাবে এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই; বরং আমাদের সহযোগিতা রয়েছে। কিন্তু, আপনারা দেখেছেন এখানে ৪০-৫০ জন ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহ আকবার’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এই স্লোগান কারা দেয় তা আপনাদের বুঝতে হবে। এই স্লোগান জামায়াতে ইসলামী থেকে দেয়া হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, যে রাজনৈতিক দল ১০ তারিখে সমাবেশ ডেকেছিল তাদের সাথে জামায়াত ওতপ্রোতোভাবে জড়িত হয়ে আজকে এখানে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। তারা এখানে ঢুকে পুলিশের সাথে ঝামেলা করার চেষ্টা করতে চেয়েছিল। আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি।
তিনি জানান, পল্টনের পুরো পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এখানে যতোক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ মনে করবে যে নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে তাদের ততোক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা দেয়া হবে। এই সড়কে ঢোকার সময় সবাইকে তল্লাশি করে ঢোকানো হবে।
এদিকে, গতকাল সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পল্টনের আশপাশে শোডাউন করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এসময় মিছিল থেকে বিএনপি-জামায়াতবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়। এ ছাড়াও পল্টন মোড়, কাকরাইল এবং সেগুনবাগিচা এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আলাদা আলাদাভাবে মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তারা নিজ এলাকায় ফিরে যায়। মিছিল ঘিরে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলয় ছিল কঠোর।