ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

চালের দাম কমছে না কেন?

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
mzamin

আমন ধান ক্ষেত থেকে বাজারে আসা শুরু হয়েছে। চালের সরবরাহ ভালো। সংকট নেই। অন্যদিকে সরকারও চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়িয়েছে। তবে এই উদ্যোগের প্রভাব নেই রাজধানীর চালের বাজারে। উল্টো গত এক সপ্তাহে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে   প্রধান খাদ্য শস্যটির দাম। চাল ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় আটা, তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কমানোর আশ্বাস দেয়া হলেও কমছে না এসব পণ্যের দাম। দাম না কমায় অস্বস্তিতে ভোক্তারা। সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন
বেড়েছে আটার দামও। খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটার কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। চিনির বাজারে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। বেশিরভাগ দোকানে প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না।

 কিছু দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা লিটার আর মসুর ডাল মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরে সরু চালের দাম প্রায় ৯ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ১০ শতাংশের বেশি এবং মোটা চালের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ৬৯ এবং প্যাকেটজাত আটার দাম ৬৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে এখন প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ এবং বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। এ ছাড়া মোটা চালের মধ্যে পায়জাম ৫৮ থেকে ৬০ এবং গুটি স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পোলাও চালের। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ৮ থেকে ১০ দিনে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে পোলাও চালের দাম। বাজারে খোলা প্রতি কেজি পোলাও চাল ১৪০ থেকে ১৪৫ এবং প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চাল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বছরজুড়ে চালের দাম বেশি ছিল। গত আমন মৌসুমেও দাম কমেনি। কাওরান বাজারের চাল বিক্রেতা মহসিন বলেন, চালের দাম কমার লক্ষণ নেই।

 মিল পর্যায়ে গত সপ্তাহেও চালের বস্তায় (৫০ কেজি) ২০ থেকে ৫০ টাকা করে বেড়েছে। মিলে দাম না কমলে খুচরা বাজারে কমবে না। এদিকে গত মাসে তিন দফা বেড়েছে প্যাকেটজাত আটার দাম। এখন নতুন করে খোলা আটার দাম বেড়েছে। এতদিন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে খোলা আটার কেজি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকা দরে। কাওরান বাজারের মুদি দোকানি সিরাজ বলেন, প্যাকেটের আটা আগেই বেড়েছে। পাইকারি বাজারে এখন বেড়েছে খোলা আটার দাম। বাজার করতে আসা হাসান এক দোকান থেকে ২৫ কেজি চাল কেনেন। তিনি বলেন, বেতন বাড়েনি। ফলে কম করে কিনে সংসার চালানোর চেষ্টা করছি। ধানের ভরা মৌসুমেও ২৫ কেজি চাল কিনেছি ১ হাজার ৮৫০ টাকায়। তাহলে অন্য বাজার কী দিয়ে করবো। আরেক ক্রেতা বলেন, চালের চেয়ে আটার দাম বেশি। দুই কেজির আটার প্যাকেট ১৫০ টাকা। তাহলে কম আয়ের মানুষ বাঁচবে ক্যামনে। বাসচালক আকবর মিয়া বলেন, মোটা চালের দামও এখনো আকাশছোঁয়া। তেল, চিনি, ডালের দামও বাড়ার পর আর কমছে না। 

আমাদের মতো নিম্নবিত্তের মানুষেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।  এদিকে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সুযোগ দিলেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আমদানি হচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সরকার এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে মোট ১৫ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে দেশে এসেছে সাড়ে ৩ লাখ টনের কিছু বেশি। এমন পরিস্থিতিতে আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক সুবিধার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়েছে সরকার। আগামী ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানিতে এ সুবিধা দিয়ে গত বুধবার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে শুল্ক প্রত্যাহার হলেও ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না বলে জানান আমদানিকারকরা। এদিকে মাছ-মাংসের বাজারে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। সোনালী মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারভেদে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

একইভাবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাছের দামও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে। ওদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে নতুন করে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগের তুলনায় কিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সবজির দাম কমায় স্বস্তি মিলেছে ক্রেতাদের। তবে ক্রেতারা বলছেন, খুচরা বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কম। বাজারে শিম ও নতুন আলু কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল কয়েক সপ্তাহ যা ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৬০ টাকার ওপরে। এ ছাড়া শীতকালীন শালগম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এ সবজির দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বাঁধাকপি ও ফুলকপির দামও কমেছে। বড় সাইজের একেকটি বাঁধাকপি বা ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status