ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

বয়স ১৫ পার হলেই প্রতিবন্ধী হয়ে যায় তারা

হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
১০ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
mzamin

তিন বোন। ঠিকমতো জন্মগ্রহণ করলেও বয়স ১৫ পার হলেই প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে তারা। ভোলার লালমোহনের চরভূতা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রহিমপুর গ্রামের এই ৩ বোনকে তাই বাধ্য হয়ে ঘরেই আটকে রাখতে হচ্ছে মা-বাবাকে। এই তিন বোন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না। হাঁটতে পারে না। হাঁটতে গেলেই পড়ে যায়, আঘাত পায়। উদ্ভট আচরণ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এই তিন সন্তানকে নিয়ে বুক ফাটা কষ্ট চেপে দিন পার করছেন উপজেলার রহিমপুর গ্রামের রোশন আলী বাড়ির দরিদ্র আবু তাহের ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম। এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু তাহের। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর।

বিজ্ঞাপন
যার জন্য তাদের ভাত জোগাতেই কষ্ট হচ্ছে, সেখানে মেয়েদের চিকিৎসা করানোর মতো কোনো সামর্থ্য নেই এই পরিবারটির। দরিদ্র পরিবারে বিবাহযোগ্য এমন প্রতিবন্ধী তিন মেয়েকে লালন পালন করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে আবু তাহের ও মোর্শেদা দম্পতি। জানা যায়, উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের রোশন আলী বাড়ির আবু তাহের দিনমজুরি করে সংসার চালান। তার বয়স হয়েছে পঞ্চাশেরও অধিক। বয়স বাড়ায় এখন ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না আবু তাহের। স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের গর্ভে প্রথমে জন্ম নেয় তাছলিমা। ধীরে ধীরে তাছলিমা বড় হতে লাগলে বুঝতে পারে সে বাক- প্রতিবন্ধী। শুধু বাক- প্রতিবন্ধীই নয়, বয়স বাড়লেও তার শিশুসুলভ আচরণ যায়নি। দ্বিতীয় মেয়ে আকলিমা জন্ম নিলে স্বাভাবিকভাবেই বড় হতে থাকে। বয়স ১৫ পার হলে বিয়ে দেয়ার জন্য কথাবার্তা চলে আকলিমার। বড় মেয়ে বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে রেখে আকলিমার জন্যই বিয়ের কথাবার্তা চালায় বাবা-মা। কিন্তু সে সময়ই দেখা দেয় আকলিমার মধ্যেও পরিবর্তন। হঠাৎ করেই স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারছে না সে। উদ্ভট আচরণ শুরু করেছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। যার জন্য বিয়ে বাদ দিয়ে তাকে আটকে রাখতে হয় ঘরে। না হলে বাবা-মাকে মারতে যায়। তৃতীয় মেয়ে সোনিয়াও ছোটবেলায় ভালো ছিল। তাকে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজেও দেয়া হয়। কিন্তু তারও বয়স ১৫ পার হতেই একই আচরণ শুরু হয়। ওই ঘরে এখন তাছলিমা, আকলিমা ও সোনিয়া এই তিন বোনই প্রতিবন্ধী। এক সঙ্গে তিন মেয়ের এমন অবস্থাতে বাবা আবু তাহের ও মা মোর্শেদার দুশ্চিন্তা দিন দিন বেড়েই চলছে। চতুর্থ আরও একটি মেয়ে আছে তাদের। তবে এই সমস্যার কারণে বয়স ১৫ হওয়ার আগেই তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই তিন মেয়ের বাবা আবু তাহের বলেন, অভাবের সংসারে ৩ মেয়ের এ অবস্থায় আমরা দুর্বিষহ জীবন পার করছি। টাকার অভাবে এদের ভালো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। ইতিমধ্যে এই ৩ মেয়ের চিকিৎসার জন্য বাড়ির ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন নিজের ঘরভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই।   মা মোর্শেদা বেগম জানান, ৩ মেয়ের এমন করুণ পরিণতি হবে তা কখনো ভাবতেই পারিনি। এদের সেবা করতে করতে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। প্রতিদিন এই তিন জনকে গোসল করানো, নিয়মিত খাওয়ানো, বাথরুমে আনা-নেয়াসহ সব কিছুই একা সামলাতে হচ্ছে। বর্তমানে এতটা অসুস্থ হয়ে গেছি, এখন আমি নিজেই ঠিকমতো চলতে পারছি না। আমার শরীরেও নানা রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। মেয়েদের বিয়ের বয়সও শেষ হয়ে গেছে। বড় মেয়ে তাছলিমার বয়স এখন ২৫, মেজ মেয়ে আকলিমার বয়স ২৩ ও সোনিয়ার ২১। তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের নিয়ে এখন কী করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।   এ ব্যাপারে চরভূতা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বলেন, আবু তাহেরের ৩ মেয়েই প্রতিবন্ধী। এটি আসলেই ওই পরিবারের জন্য খুব বেদনাদায়ক। তবে ওই তিন জনের নামে পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে তারা কিছু সহযোগিতা পাচ্ছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তিন জনের প্রতিবন্ধী হওয়ার ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. মহসিন খান জানান, হরমোনজনিত সমস্যার কারণে ওই তিন মেয়ের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ হরমোন চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status