ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

দিনভর অবরুদ্ধ নয়াপল্টন, সমাবেশে অটল বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার
৯ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

রক্তাক্ত সংঘর্ষ ও পুলিশি অ্যাকশনের পর গতকাল দিনভর রাজধানীর নয়াপল্টন ছিল অবরুদ্ধ। সকাল থেকে ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক আটকে রাখে পুলিশ। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ব্যারিকেডের বাইরে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা। টান টান উত্তেজনার মধ্যে নয়াপল্টনেই বিভাগীয় সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ১০ই ডিসেম্বর তারা নয়াপল্টনেই আসবেন। এরপর কী হবে সেটা মানুষ জানে। এর বাইরে বিকল্প প্রস্তাবও বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবারের সংঘর্ষের পর বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গতকালও পুলিশ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেখানে ক্রাইম সিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন
তল্লাশি চালানো হয় ভেতরে। সকালে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে নয়াপল্টনে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরে তিনি সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বুধবার নিহত বিএনপি কর্মী মকবুল হোসেনের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। 

বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনেই পূর্ব-ঘোষিত স্থানে আমরা আমাদের সমাবেশ করবো। সেই সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করার দায়িত্ব সরকারের। অন্যথায়, এর সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। এটা আমাদের পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি। গত ১২ই অক্টোবর থেকে সারা দেশে নয়টি বিভাগে হয়েছে। জনগণ কীভাবে অংশ নিয়েছে, তা সবাই জানে। আগামী ১০ই ডিসেম্বর আমাদের ঘোষিত সর্বশেষ সমাবেশ। ফখরুল বলেন, সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান, টঙ্গী নিয়ে সব প্রস্তাব আসছে, এগুলো আমরা গ্রহণ করিনি। আমরা বলেছি ঢাকায় গ্রহণযোগ্য কোনো স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দিলে সেখানে সমাবেশ করবো। তবে  সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানকে সমাবেশের জন্য নিরাপদ মনে করছি না। এর আগে গত বুধবার নয়াপল্টনের সামনের সড়ক ও বিএনপি’র পার্টি অফিসে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের বর্ণনা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বুধবার প্রতিদিনের ন্যায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমবেত হয়। আকস্মিকভাবে বেলা ২টা থেকে পুলিশ সমবেত নেতা-কর্মীদের ওপর হঠাৎ করেই বিনা উস্কানিতে অতর্কিতভাবে ক্র্যাকডাউন শুরু করে। তারা বর্বরোচিতভাবে নির্বিচারে মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড, ককটেল, লাঠিচার্জ করতে থাকে। যা আপনাদের চোখের সামনেই ঘটেছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। 

এই কাপুরুষোচিত ও লোমহর্ষক ঘটনা স্বাধীন দেশে কল্পনাতীত। তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন এবং অসংখ্য নেতা-কর্মী ও পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। যাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা যায়নি। ফখরুল আরও বলেন, পুলিশের হামলায় অনেক সাংবাদিক বন্ধুও আহত হন। পুলিশ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেও বাধা দেয় এবং তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ও অশোভন আচরণ করে। তিনি বলেন, আমি খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হই এবং আমাকেও আমার অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর মধ্যে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাত বোমা নিয়ে যায় এবং সেখানে রেখে আসে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সরাসরি সমপ্রচারিত হয়েছে। 

এরপর দলীয় কার্যালয়ে তারা ন্যক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচতলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙে প্রবেশ করে এবং সকল আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি, তছনছ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স এবং এমনি কি দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ গত বুধবার সমগ্র ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের সশস্ত্র ও উচ্ছৃৃঙ্খল কর্মীরা পাড়ায়-মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর হামলা করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মাহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মিল্লাত হোসেন (৬৭)কে বেদমভাবে প্রহার করে। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। 

বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) তা উদ্ধারের তল্লাশি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আইন হচ্ছে- কোনো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এই ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। উপরন্তু আমাকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে বাইরে রেখে দীর্ঘ চার ঘণ্টা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করে, বোমা রেখে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তিনি বলেন, সরকারের দূর্নীতি, লুটপাট, দুঃশাসনে এবং অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী কার্যকলাপে দেশের মানুষ আজ চরম বিপর্যয়ে নিপতিত। 

এ সময় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশ বিএনপি’র কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এড. শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপি’র কুমিল্লা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুল খালেক, সহ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সেলিম রেজা হাবিব, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মাহাতাব উদ্দিন, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের আহ্বায়ক প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক, সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাবিকুল ইসলাম সহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে দলীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। 

এমনকি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তরের কর্মচারী রেজাউল করিম, দলিল উদ্দিন, সেলিম, ফারুক, রফিক, সহ অন্যান্য কর্মচারীদেরকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণের নামে নাটক সাজায় ও মিথ্যাচার করে। আমার সামনেই পুলিশ সেখানে অসংখ্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সঙ্গে ডিবি, সোয়াত বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,  মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপি’র সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ প্রমুখ।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগও তো সমাবেশ করে। ঢাকায় করে, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় করে। তাদের সমাবেশের স্থান কে নির্ধারণ করে দেয়? সরকার নাকি পুলিশ? সেটা আওয়ামী লীগ নিজেরা নির্ধারণ করে। তাহলে বিএনপি কোথায় সমাবেশ করবে সেটা সরকার বা পুলিশ কেন নির্ধারণ করবে? বিএনপি’র সমাবেশের স্থানও বিএনপিই নির্ধারণ করবে। সরকার ও পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
 

দিনভর অবরুদ্ধ নয়াপল্টন: গতকাল সকাল থেকেই নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয় এলাকা ঘিরে কড়া অবস্থানে ছিল পুলিশ। নাইটিঙ্গেল ও ফকিরাপুল মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো ছিল। এ দু’টি রাস্তা দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ভেতরের সড়কে জনসাধারণের চলাচল নিষেধ করা হয়। শুধুমাত্র পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে পরীক্ষার্থী ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের চলাচল করতে দেয়া হয়েছিল। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় অফিসের আশপাশে দোকান, মার্কেট বন্ধ ছিল। পুরো এলাকাজুড়েই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কার্ডবিহীন ও সন্দেহভাজন কাউকেই এই সময়ের মধ্যে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। 
বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাইটিঙ্গেল মোড়ে দফায় দফায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ছোট ছোট মিছিল ও বিক্ষোভ করতে  দেখা যায়। এ সময় কয়েক দফায় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতেও দেখা যায়। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে বেশকিছু নেতাকর্মী নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি পর্যন্ত নিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ফাঁকা গুলির শব্দ পাওয়া যায়। 

দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সিআইডি’র বোম ডিসপোজাল ইউনিট অবস্থান নেয়। তারা কার্যালয়ের চতুর্দিকে হলুদ ফিতা দিয়ে ঘেরাও করে রাখে। ১টা ৫৫ মিনিটে কার্যালয়ের সামনের অংশের চারিদিকে ফিতা টানায় সিআইডি’র ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরা। এ সময় দলীয় কার্যালয়ের সড়কে সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিকাল ৪টায় তারা বেরিয়ে এলে এরপর ডগ স্কোয়ার্ড টিম কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় দিকে নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ের ব্যারিকেড খুলে দেয়া হয়। এ ছাড়া দলীয় কার্যালয় সড়কের প্রবেশমুখী ছোট ছোট গলিগুলোর ব্যারিকেডও খুলে দেয়া হয়। তবে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে পুরো পল্টন এলাকা। এ সময় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীর একটি মিছিলকে স্লোগান দিয়ে ফকিরাপুল মোড় থেকে দলীয় কার্যালয় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে যেতে দেখা গেছে। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার গতকাল দুপুরে পল্টন থানার সামনে সাংবাদিকদের বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পল্টন এলাকা আমরা পরিপূর্ণ নিরাপদ মনে না করবো ততক্ষণ এই এলাকায় যান চলাচল ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আটকাচ্ছি না। একান্ত জরুরি সেবার মানুষ, বিদেশগামী, অফিসগামী, গ্রামের মানুষদের ছেড়ে দিচ্ছি। এখানে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই। এ ছাড়া বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়কে আমরা এখন আইনের ভাষায় বলছি, প্লেস অব অকারেন্স (পিও)। যে কারণে আমরা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় কর্ডন করে রেখেছি। বিশেষজ্ঞ ও ক্রাইমসিনের লোকজন ছাড়া কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশের কাজ শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ এখানে কোনো কিছুই হতে দেয়া হবে না। 

দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে নাইটিঙ্গেল মোড়ে যান। সেখানে তিনি বিপ্লব কুমারের সঙ্গে কথা বলেন। ভেতরে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়ায় তিনি নয়াপল্টন এলাকা থেকে চলে যান। 

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ: সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকার সড়ক বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। ব্যারিকেড থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ বা বাইরে বের হতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা ফারুক বলেন, দুপুরে খাবার খেতে যাবো। যেতে পারছি না। পুলিশ বাধা দিচ্ছে। আসা-যাওয়ায় কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনা-নেয়ায় সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে এভাবে ভোগান্তিতে না ফেলে সরকার এবং বিরোধী দল উভয় পক্ষকে একটি সমঝোতায় আসা উচিত। 

নয়াপল্টনের বাসিন্দা কপিলা বেগম বলেন, পল্টনেই বাসা। যে পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি পুলিশ সেপাশেই বাধা প্রদান করছে। আটকে দিচ্ছে। পল্টন বিলাস ভবনে পরিবারের সঙ্গে থাকি। প্রয়োজনীয় কাজে আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু ব্যাগ চেক করাসহ বিভিন্নভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অফিসের আইডি কার্ড নিয়ে না আসায় ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ী। মোহাম্মদপুরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও এখানে আরেকটি অফিস রয়েছে। সঙ্গে আইডি কার্ড নেই। ভিজিটিং কার্ড দেখিয়েছি কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী তাহমিদ বলেন, দৈনিক বাংলায় আপুর বাসায় এসেছি। কিন্তু পুলিশ ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। প্রয়োজন থাকায় এসেছি। কিন্তু যে পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি পুলিশ আটকে দিচ্ছে। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status