প্রথম পাতা
ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশি
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা ও রূপগঞ্জ
৯ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার১০ই ডিসেম্বর বিএনপি’র ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রত্যেকটি প্রবেশমুখে যানবাহনে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। তল্লাশির নামে অনেক যাত্রী ও পথচারীকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দূরপাল্লা ও ঢাকার আশপাশের জেলাশহর থেকে আসা সকল যানবাহন থামিয়ে ও যানবাহনের ভেতরে প্রবেশ করে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। তল্লাশি অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাশাপাশি ঢাকা জেলার পুলিশ। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), গোয়েন্দা পুলিশও তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঢাকার মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
আবদুল্লাহপুর দিয়ে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করছে মানুষ। ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক জেলার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এখানে দু’টি সড়ক ঘিরেই বসেছে তল্লাশি। আবদুল্লাহপুরে বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসড়কের নিচে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। দূরপাল্লা থেকে কোনো বাস আসামাত্র সংকেত দিচ্ছে পুলিশের সদস্যরা।
আমিনবাজার, আমিনবাজার ব্রিজ ও গাবতলীতে একাধিক তল্লাশিচৌকি বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। কারণে-অকারণে যাত্রীদের তল্লাশিতে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। পুলিশের তল্লাশির কারণে এই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকার ভেতরে যানবাহন চলাচলে গতি থাকলেও গাবতলী থেকে আমিনবাজার ছাড়িয়ে যায় যানজট। এই এলাকার তল্লাশিচৈৗকিতেও দূরপাল্লার বাস, সাভার-নবীনগর, আশুলিয়া, গাজীপুর থেকে আসা বাসের যাত্রী ও তাদের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। এ ছাড়া মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাসে একইভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। একইভাবে যাত্রবাড়ী, কুতুবখালী, সাইনবোর্ড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এই তল্লাশিকে নিয়মিত কাজের একটি অংশ হিসাবে দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। প্রতিটা চেকপোস্টে একাধিক পুলিশ সদস্য পথচারী থেকে শুরু করে মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস, বাসের যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশি করে। কারো সঙ্গে ব্যাগ থাকলে সেটি খুলে দেখেন পুলিশ সদস্যরা।
বিএনপি’র ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে ঢাকার প্রবেশদ্বার রূপগঞ্জের বিভিন্ন মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। নাশকতার আশঙ্কায় এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি’র কয়েক হাজার নেতাকর্মী। তবে তারা বলছেন, যেকোনো মূল্যে ঢাকার সমাবেশ সফল করতে রূপগঞ্জ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যেন বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর প্রবেশমুখে রূপগঞ্জের তারাবো সুলতানা কামাল সেতু, ইছাপুরা বালুনদী সেতু এবং কাঞ্চন সেতুর সামনে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এতে রাজধানীর ডেমরা, খিলক্ষেত থানা পুলিশও এসব প্রবেশদ্বারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করছেন। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান সজিব বলেন, ১০ই ডিসেম্বর বিএনপি’র ডাকা সমাবেশকে ঘিরে তারা যেন কোনো প্রকার নাশকতা না করতে পারে সেজন্য রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সর্বদা মাঠে থাকবে। রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র এখন পর্যন্ত রূপগঞ্জ থেকে পুলিশ আমাদের ৪০-৫০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ৭ হাজারের মতো নেতাকর্মী। তবে যেকোনো মূল্যে ঢাকার সমাবেশ সফল করতে রূপগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকায় সমাবেশে যোগ দেবেন তারা। খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়, নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে এসব চেকপোস্টে তল্লাশি করছেন তারা। রাজধানীতে যেন কোনো প্রকার মাদক, দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।