দেশ বিদেশ
পুনর্বাসনে আনন্দিত নয়েস
যুক্তরাষ্ট্র নিলো ২৪ রোহিঙ্গা
কূটনৈতিক রিপোর্টার
৯ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবারমিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় পুনর্বাসন শুরু হয়েছে। ২৪ জন রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার রাত ১টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে (ইকে-৫৮৫) ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জরুরি আলোচনায় শনিবার ঢাকা সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভলস নয়েস। রবি ও সোমবার দু’দিন কক্সবাজারে এবং মঙ্গলবার ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অবস্থা সরজমিন দেখে বুধবার তিনি ঢাকা ছেড়ে যান। তার বিদায়ের ক’ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব-প্রস্তুতি মতে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয় বাছাইকৃত ২৪ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষকে। কয়েক মাস ধরে তৃতীয় দেশে বিশেষত: যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন বিষয়ে আলোচনা চলছিল।
বিদায়ী বার্তায় মার্কিন সহকারী মন্ত্রী যা বললেন-
এদিকে ঢাকা সফরের আউটকাম জানাতে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় মার্কিন এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভলস নয়েস বলেন, এ সপ্তাহে আমি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের জীবনে বার্মা কর্তৃক সংঘটিত সহিংসতার প্রভাব অনুধাবনের জন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তা, অন্য নাগরিক, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের অংশীদারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার সফরকালে আমাদের প্রতিনিধিদল কক্সবাজার ও ভাসানচরে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখেছে। আমরা বিভিন্ন দেশ, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর জন্য আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি।
আমরা বার্মার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি যাতে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে এবং তারা সহিংসতা বন্ধ করে এবং রোহিঙ্গাদেরকে তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়। আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যায় জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করি। বার্তার সমাপনীতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আমাদের ব্যাপক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ও পুনর্বাসন সহায়তাদানকারী অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে নাজুক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। নিজ জনসমাজে শরণার্থীদেরকে উদারভাবে স্বাগত জানানোর জন্য এবং আমাদের কাছে যেটা স্পষ্ট অর্থাৎ এই শরণার্থীদের জন্য দেশে ফিরে যাওয়া এখনো নিরাপদ নয়- সেটা অনুধাবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণকে সাধুবাদ জানায়।
শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশিদের চাহিদা পূরণে আমরা বাংলাদেশের পাশে আছি, কারণ সব মানুষেরই নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।
ওদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের চেষ্টায় ২৪ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন আটকে থাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ওই উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানালেও প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উল্লেখ্য, আমেরিকা, কানাডাসহ পশ্চিমা দুনিয়ায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের প্রস্তুতি চলছে বহু বছর ধরে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলতি মাসে মোট ৬২ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের সবুজ সংকেত পেয়েছে ওয়াশিংটন। স্মরণ করা যায়, গত বছর উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবার ও স্বজন মিলে মোট ৩৫ জনকে ৩ ধাপে কানাডায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। যা ছিল বহু বছর ধরে স্থগিত থাকা তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সূচনা। রেকর্ড বলছে, এক যুগ আগে ৯০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ থেকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে বলে বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।