ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সঞ্চয়পত্র ভাঙার হার বেড়েই চলছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৯ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের ব্যয় বেড়েছে। ফলে কেউ অর্থ জমানোর চিন্তাই করতে পারছে না। জমানো আমানতই ব্যয় করছে অনেকেই। এ কারণে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর হার এখন বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের  হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে। অর্থাৎ মানুষ নতুন সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে আগেরগুলো ভেঙে ফেলেছেন বেশি। ভাঙানোর পরিমাণ প্রায় ৬৩৩ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিনিয়োগ হয় ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, একদিকে সরকারের বিভিন্ন ধরনের কড়াকড়িতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। অন্যদিকে অনেকের হাতে সঞ্চয়পত্র কেনার মতো বাড়তি কোনো টাকা নেই।

বিজ্ঞাপন
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ খুব বেশি মুনাফা পাচ্ছে না। আগে কালো টাকা সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ হতো। এখন সেটা হচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। তবে কিছু বিনিয়োগকারী এই খাতে বিনিয়োগ করছেন। সেই সংখ্যা খুবই কম। এ ছাড়া বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাই মেয়াদ শেষে অনেকেই আর নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনো তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি। ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ব্যাংক আমানতের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহারের ব্যবধান কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটিকে।

ঋণের বোঝা কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে টিআইএন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে আগের মতো বিনিয়োগ করতে পারছেন না। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন মতে, অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক, ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসজুড়ে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণের চেয়ে ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি ভাঙানো হয়েছে। একক মাস হিসেবে গত অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয়েছে। এ সময় ৯৬৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয়। আগের বছরের একই সময়ে কেনা হয় ৭৬৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক ধারায় নেমেছে, এর পরিমাণ প্রায় ৬৩২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অথচ গত অর্থবছরের একই সময় নিট বিনিয়োগ হয় ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কম। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে গত কয়েক বছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেক বেড়েছিল। এতে সরকারের সুদ পরিশোধের ব্যয় বাড়ে। সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফা বা সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় বেশি চাপ পড়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপ করছে সরকার। সর্বশেষ চলতি অর্থবছর ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১লা জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেস তৈরি হয়েছে। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমেছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১.৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৪ শতাংশ।

পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ৫ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে রিটার্ন দিতে হচ্ছে। আবার রিটার্ন জমা দিতে নানা ঝামেলা। ফলে তারা এ খাতে বিনিয়োগ থেকে সরে আসছে। অনেকের ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ছিল। কিন্তু সীমা নির্ধারণের কারণে এসব সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে তারা আর নতুন করে কিনতে পারছেন না। আর মানুষের হাতে এখন টাকা কম। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয় করতে পারছে না। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কম ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশি নিচ্ছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status