শেষের পাতা
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা স্বপ্নের সেমিফাইনাল কি হবে?
স্পোর্টস ডেস্ক
৯ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবারশহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লা, সবখানে একটাই প্রশ্ন- ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার স্বপ্নের সেমিফাইনাল হবে তো? সেই ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এরপর অপেক্ষায় অপেক্ষায় কেটে গেছে ৩২ বছর এমনকি ফিফাও চাইছে বিশ্বকাপে এবার ‘সুপার ক্লাসিকো’ হোক। তবে এ চাওয়ার বাস্তব রূপ দেখতে দু’দলকেই ভিন্ন দুই ম্যাচে জয় পেতে হবে আগে। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে আজ রাত ৯টায় প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। এরপর রাত ১টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা খেলবে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। কোয়ার্টার ফাইনালে নিজ নিজ খেলায় জয়লাভ করলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে সেমিফাইনালে।
বিশ্বকাপ মঞ্চে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই ফুটবল ভক্তদের কাছে আরাধ্য এক ব্যাপার। অথচ ১৯৩০ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ২১ আসরে মাত্র চারবার মুখোমুখি হয়েছে তারা। সর্বশেষ ১৯৯০’র দ্বিতীয় রাউন্ডে লড়েছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। দিয়েগো ম্যারাডোনার দলের কাছে সেলেসাওরা পরাজিত হয় ১-০ গোলে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ওটাই দুই প্রতিবেশী দেশের একমাত্র দ্বৈরথ।
৮ বছর পর নকআউট পর্বে আরেকটি ‘সুপার ক্লাসিকো’র প্লট তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত মেসি-নেইমারের দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় আছেন। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যেমন খেলছে, এবার হবেই। আর্জেন্টিনায় তীব্র মুদ্রাস্ফীতি চলছে এই মুহূর্তে। কিন্তু ফুটবল আনন্দে আর্থিক মন্দা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তারা ছুটে গিয়েছেন কাতারে। বুয়েন্স আয়ার্সের ৩৯ বছর বয়সী বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এমিলিয়ানো মাত্রানগোলো চার বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন। সেই টাকায় বিশ্বকাপ দেখতে গেছেন কাতারে। মাত্রানগোলোর কাছে বিশ্বকাপ দেখার আনন্দ বাড়ি-গাড়ি কেনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ৩২ বছর বয়সী জোনাতান লুনা জানতেন, কাতারে গেলে সামনের দিনগুলোতে অর্থকষ্টে কাটাতে হবে তাকে। তবুও আবেগের কাছে হার মেনেছেন তিনি। মাত্রানগোলো-লুনার মতো ফুটবল-পাগল ভক্তের কারণে কাতারে প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ সমর্থন পেয়েছে আর্জেন্টিনা। খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে গ্যালারির চিৎকার সবসময়ই টনিক হিসেবে কাজ করে। এজন্যই নেদারল্যান্ডস কোচ লুইস ভ্যান গাল নিজ দেশের সমর্থকদের মাঠে যেতে আরজি জানিয়েছেন।
মেসিরা কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর আর্জেন্টাইন ভক্ত-সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছেন। গত বছর ব্রাজিলকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতে ২৮ বছরের শিরোপা খরা ঘুচায় আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন লিওনেল মেসি। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা বিশ্বকাপে চার ম্যাচে করেছেন তিন গোল। মেসির ফর্ম আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তাদের চাওয়া ব্রাজিলকে হারিয়েই ফাইনালে যাক আর্জেন্টাইনরা। অন্যদিকে, ব্রাজিল সমর্থকরা কোপা আমেরিকা ফাইনালের প্রতিশোধ তুলতে চান। তারাও বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য ২০ বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। ২০০২ সালে জার্মানিকে হারিয়ে পঞ্চম শিরোপা জয়ের পর ব্রাজিল শুধু একবার সেমিফাইনাল খেলতে পেরেছে। প্রত্যেকবারই ইউরোপিয়ান দলের কাছে থেমেছে তাদের যাত্রা। ২০০৬ সালের শেষ আটে ফ্রান্স, ২০১০ সালের শেষ আটে নেদারল্যান্ডস, ২০১৪’র সেমিতে জার্মানি এবং গতবার শেষ আটে ব্রাজিল হেরে যায় বেলজিয়ামের কাছে। কাতারে আজ আরেক ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে লড়াই। গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া তাদের সামনে। শেষ ষোলোতে জাপানকে টাইব্রেকারে হারায় ক্রোয়েশিয়া। দলটির শক্তিশালী রক্ষণভাগ চ্যালেঞ্জ জানাবে ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকারদের। সত্যি বলতে, চলতি আসরে এটাই ব্রাজিলের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেও তাই। প্রথম রাউন্ডে সৌদি আরব, পোল্যান্ড, মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলেছেন মেসিরা। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে খেলতে হবে তিনবারের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। অভিজ্ঞ কোচ লুইস ভ্যান গালের অধীনে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত ডাচ্রা। সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিতে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। গোলশূন্য সমতার পর আর্জেন্টিনা জিতেছিল টাইব্রেকারে। ওই ম্যাচে পুরো ১২০ মিনিট মেসিকে বোতলবন্দি করে রাখেন ডাচ্রা। এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোল পাননি মেসি। সেদিন বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শুরুর একাদশে সুযোগ হয়েছিল তার। এদিক-সেদিক হলে আজ হতে পারে শেষ ম্যাচ। আজ আর্জেন্টিনা হেরে গেলে সমাপ্তি ঘটতে পারে লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারের।