ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

মেঘে মেঘে গেল বেলা, হবে এবার সেরা খেলা

তালহা বিন নজরুল
৮ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

আপাতত ব্রাজিলকে হারাতে হবে ক্রোয়েশিয়াকে আর আর্জেন্টিনাকে হারাতে হবে নেদারল্যান্ডসকে। আপাতদৃষ্টিতে এগিয়ে আছে মেসি-নেইমারের দল। কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য এ দুদলকে খুব কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। কারণ তাদের প্রতিপক্ষ ছিল এশিয়ার দু’টি দল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। আর তাতে ব্রাজিলিয়ানদের জয় একতরফা হলেও আর্জেন্টিনা কিন্তু সহজে ছাড় পায়নি। সেজন্য আশঙ্কামুক্ত থাকতে পারছেন না দক্ষিণ আমেরিকানরা। ফ্রান্স-ইংল্যান্ড মধ্যকার বিজয়ী দলের বিপক্ষে খেলতে হবে পর্তুগালকে যদি তারা মরক্কোকে হারাতে পারে। ২০০৬ এর সেমিফাইনালে দুর্দান্ত পর্তুগাল কিন্তু ফ্রান্সের কাছেই হেরে বিদায় নিয়েছিল। লুইস ফিগো, রোনালদো, কাভালহার দল হেরে গিয়েছিল জিনেদিন জিদানের পেনাল্টি গোলে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল যে ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল এবারো তাদের মুখোমুখি হতে পারে যদি ফ্রান্স হেরে যায় শেষ আটে।

বিজ্ঞাপন
অনেকটা নীরবে উঠে আসা নেদারল্যান্ডস আর গতবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়ার লড়াইটাও সমানে সমান হবে বলেই ধরে নেয়া যায়। ক্রোয়াটরা গতবারের মতো শক্তি দেখাতে না  পারলেও ঘুরে দাঁড়াতে কতোক্ষণ।


সমালোচকরা নীরব। মুখে যেন কুলুপ আঁটা। সবাই যখন মাতোয়ারা, আনন্দে আত্মহারা, তখন কিই বা বলার থাকে। ফুটবল বিশ্ব মজে আছে দারণ সব খেলায়। আর আত্মসুখে মিটি মিটি হাসছে কাতার। হবে কী হবে না, কী হতে কী হয়, নানা শঙ্কা-সংশয় হাওয়ায় উড়িয়ে সুন্দর সমাপ্তির পথে বিশ্বকাপ ফুটবলের আরেকটি আসর। প্রথম পর্বের ৪৮ খেলার পরে শেষ হলো দ্বিতীয় রাউন্ডেরও ৮ খেলা। ২৪ দলের মধ্যে ১৬ দলের সবাই দেশে ফিরে যে যার কাজে ব্যস্ত। চূড়ান্ত জয়ের আশায় বুক বেঁধে আছে আরও ৮ দল। কোয়ার্টার ফাইনালের ৪ খেলায় বাদ পড়বে ৪ দল। সেমিফাইনালে ছিটকে যাবে আরও দুটি। ১৮ই ডিসেম্বর শিরোপা লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে যারা কাপ নিয়ে দেশে ফিরবে তারা। আগামী চার বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমাটিও থাকবে তাদের মাথায়। মরক্কোর ইতিহাস গড়া, আর রোনালদোহীন পর্তুগালের দুর্দান্ত জয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা। মাঝে দুদিনের বিরতি। এরপর আবার আগামীকাল থেকেই শুরু শেষের লড়াই। এ যেন দম ফেলার বিরতি। নড়েচড়ে বসা আর কী। এরই ফাঁকে একটু পেছন ফিরে দেখা। সামনে কী হবে তাতো আর সহজে বলা যাবে না। কিন্তু কী হতে কী হলো তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বরাবরের মতোই কারও সর্বনাশ আর কারও পৌষ মাস। কারও মন আনন্দে ভাসছে আর কারও চোখ ভাসছে শোকের জলে। 

মরুর বুকে বিশ্বকাপ মোটেও ম্যাড়মেড়ে বলছেন না কট্টর নিন্দুকেরাও। আনন্দ-বিষাদে ভরপুর। আশা-নিরাশার দোলাচলে দোদুল্যমান এক রঙ্গিন আসরই দেখছেন সবাই। শুরুর আগেই কাতার বিশ্বকাপের চমক ছিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির না থাকা। শেষ ২০০৬-এ শিরোপা বিজয়ীরা এবার মূলপর্বে খেলার টিকিটই পায়নি। আর শুরুর পরে যতদিন গড়িয়েছে ততই রচিত হয়েছে আনন্দ-বেদনার কাব্য। প্রথম রাউন্ডে প্রথম বড় চমক ছিল সৌদি আারবের কাছে আর্জেন্টিনার হার। এরপর একে একে হেরেছে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম এমনকি ব্রাজিলও। ভিন্ন দেশ, ভিন্ন সময়, ভিন্ন আবহাওয়া। আর তাই ফলও যেন ভিন্ন ভিন্ন। নির্দিষ্ট কোনো ছকে আঁটা নয়। একেক খেলায় একেক রকম ফল। তারপরেও সোজা-সাপ্টা বললে বলা যায় এশিয়ার এই বিশ্বকাপে এশিয়ার উন্নতি চোখে পড়ার মতোই ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো দলই দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধা পেরোতে পারেনি। তবুও আয়োজক কাতার ছাড়া জয় পেয়েছে সব দলই। এরমধ্যে অবশ্যই নৈপুণ্যে এগিয়ে ছিল জাপান। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া। 

সৌদি আরবতো পেয়েছে বিশ্ব কাঁপানো জয়। শক্ত গ্রুপে ইরান ইংল্যান্ডের কাছে বড় হারে শুরু করলেও ওয়েলসকে হারিয়ে ফিরে আসে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হারে মাত্র ১-০ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়ে জাপানের বিদায় সত্যিই হৃদয় ভাঙ্গা ঘটনা। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ১২০ মিনিট সমানতালে লড়াই করলেও টাইব্রেকারে হেরে যায় জাপান। হারলেও সবার মন ঠিকই জয় করেছে তারা। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল দক্ষিণ কোরিয়াও। কিন্তু যেভাবে পর্তুগালকে হারিয়ে আশা জাগিয়েছিল তারা সেভাবে আর মেলে ধরতে পারেনি আগের ম্যাচে ক্যামেরুনের হাছে হেরে যাওয়া ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় তারা।  হতাশ করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বড় তারকা সুয়ারেজ এবার তার ঝলক দেখাতে পারেননি। প্রথম রাউন্ডেই শেষ তাদের স্বপ্ন। নজর কাড়তে পারেনি কোস্টারিকা ও ইকুয়েডর। 

 

 

কোস্টারিকা জাপানকে হারালেও তার আগে স্পেনের কাছে ৭-০ গোলের হারে নিজেদের দৈন্যদশা ফুটিয়ে তোলে। ইকুয়েডর প্রথম খেলায় নেদারল্যন্ডসের সঙ্গে ড্র করলেও সেনেগালের কাছে হেরে পিছিয়ে যায়। উন্নতির ছোঁয়া ছিল আফ্রিকানদের নৈপুণ্যেও। আর দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধা পেরিয়ে যেতে পেরেছে আফ্রিকানদের প্রতিনিধি মরক্কো। তারা এখনো হার মানেনি। প্রথম খেলায় ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করে শুরু তাদের। এরপর বেলজিয়াম ও কানাডাকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয় আফ্রিকার দ্বার খ্যাত মরক্কো। দ্বিতীয় রাউন্ডে তারা হারালো স্পেনকে। ১২০ মিনিটের খেলায় গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে জয় পায় তারা। গোলরক্ষক ইয়াসিন বনু অসাধারণ নৈপুণ্যে স্পেনের ৩টি শট ঠেকিয়ে দেন। পুরো খেলাতেই স্প্যানিশ লীগে খেলা এই গোলরক্ষকের অবদান দেশটির ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০১০-এ আফ্রিকার মাটিতেই বিশ্বকাপ জেতা স্পেনকে বিদায় করলেও মরক্কোর পরীক্ষা এবার দুর্দান্ত ফর্মে ফেরা পর্তুগাল। সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দল যেন তাকে ছাড়াই অদম্য হয়ে উঠেছে। গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারের পর অনেকে সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন পর্তুগিজদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। 

৩৭ বছর বয়সী রোনালদো পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড দিয়ে আসর শুরু করলেও তার খেলা মন ভরাতে পারেনি। ফলে সাইডলাইনেই বেশি সময় কাটাতে হচ্ছে তাকে। সবশেষ খেলায় তার পরিবর্তে শুরু থেকে মাঠে নামানো গনজালো রামোস তো হ্যাটট্রিক করে তার সামর্থ্যের প্রমাণ দেন। এ আসরে প্রথম ও একমাত্র হ্যাটট্রিকটি তারই। গ্রুপ পর্বে দৃঢ়তা দেখানো সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে গুড়িয়ে পর্তুগাল ফের আলোচনায় উঠে এসেছে। ১৯৬৬ সালের পর ২০০৬। এরপর এবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো তারা। মরক্কো-আর পর্তুগালের লড়াইটা দেখার মতোই হবে বলে আশা সবার। আফ্রিকার আরেক দেশ সেনেগালও দ্বিতীয় পর্বে উঠেছিল। কিন্তু দারুণ ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতে পারেনি সেনেগাল। এর বাইরে গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলকে হারিয়ে ক্যামেরুন আর ফ্রান্সকে হারিয়ে তিউনিসিয়া চমকে দেয় সবাইকে। তবে ওই দুই খেলায় ব্রাজিল ও ফ্রান্স তাদের দ্বিতীয় একাদশ মাঠে নামায়। বরাবরের মতো হট ফেভারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা টিকে আছে দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধি হিসেবে। 

তবে এখনো ইউরোপিয়ানদের প্রাধান্য অটুট। জার্মানি, বেলজিয়ামের মতো দল প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিলেও শেষ ৮ দলের মধ্যে ৫টিই কিন্তু ইউরোপের। বলার অপেক্ষা রাখে না এদের মধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া কাউকেই খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে না হয় অদম্য ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের আগেই দেশে ফিরতে হবে। অথচ দুটি দলই তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ে ঠাসা। ১৯৬৬ সালের পর ইংলিশরা আর কখনো বিশ্বকাপ জেতার কাছাকাছি যেতে পারেনি।    এবার কাগজে-কলমে তারা ফরাসিদের চাইতে ভালো দল। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে যেকোনো দিন যেকোনো দল জ্বলে উঠতে পারে। শেষ আটের অন্যান্য খেলায় কী হবে বলা মুশকিল হলেও এগিয়ে থাকবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে না হলেও বাংলাদেশের সমর্থকদের স্বপ্ন বড় আঘাত পাবে সেমিফাইনালে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা যদি শেষ আটের খেলায় জিততে পারে তবে তাদের মুখোমুখি হতে তবে সেমিফাইনালে। অর্থাৎ ফাইনালের আগেই ফাইনাল খেলা হয়ে যাবে বাংলাদেশের মাটিতে। কেউ ভাসবেন আনন্দে আর কেউ ডুববেন বিষাদে। 

শেষ আটের খেলায় আর্জেন্টিনাকে মেসিনির্ভর মনে হলেও ব্রাজিলকে দেখা গেছে দলীয় ছন্দে। আপাতত ব্রাজিলকে হারাতে হবে ক্রোয়েশিয়াকে আর আর্জেন্টিনাকে হারাতে হবে নেদারল্যান্ডসকে। আপাত দৃষ্টিতে এগিয়ে আছে মেসি-নেইমারের দল। কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য এ দুদলকে খুব কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। কারণ তাদের প্রতিপক্ষ ছিল এশিয়ার দু’টি দল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। আর তাতে ব্রাজিলিয়ানদের জয় একতরফা হলেও আর্জেন্টিনা কিন্তু সহজে ছাড় পায়নি। সেজন্য আশঙ্কামুক্ত থাকতে পারছেন না দক্ষিণ আমেরিকানরা। ফ্রান্স-ইংল্যান্ড মধ্যকার বিজয়ীদলের বিপক্ষে খেলতে হবে পর্তুগালকে যদি তারা মরক্কোকে হারাতে পারে। ২০০৬ এর সেমিফাইনালে দুর্দান্ত পর্তুগাল কিন্তু ফ্রান্সের কাছেই হেরে বিদায় নিয়েছিল। লুইস ফিগো, রোনালদো, কাভালহার দল হেরে গিয়েছিল জিনেদিন জিদানের পেনাল্টি গোলে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল যে ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল এবারো তাদের মুখোমুখি হতে পারে যদি ফ্রান্স হেরে যায় শেষ আটে। 

অনেকটা নীরবে উঠে আসা নেদারল্যান্ডস আর গতবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়ার লড়াইটাও সমানে সমান হবে বলেই ধরে নেয়া যায়। ক্রোয়াটরা গতবারের মতো শক্তি দেখাতে না পারলেও ঘুরে দাঁড়াতে কতোক্ষণ। জাপানের কাছে হারতে হারতে বেঁচে যাওয়া ক্রোয়েশিয়া এবার সাবধানেই পা ফেলবে।  ডাচরাও বেশ ক’বার ফাইনালে উঠেও শিরোপার স্বাদ পায়নি। সর্বশেষ ২০১০ এর ফাইনালে তারা হেরে যায় স্পেনের কাছে। এরপরের বার ২০১৪-তে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও ব্রাজিলকে হারিয়ে তৃতীয় হয়। এবার তাদের দলে তারকার ঝলকানি না থাকলেও বেশ সংগঠিতভাবেই খেলেছে তারা। সেমিফাইনালে যেতে পারলে তাদের মোকাবিলা হবে সেই ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার। দেখা যাক সাগরঘেরা মরুর দেশে শেষ পর্যন্ত কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়?

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status