শেষের পাতা
সিলেটে মাসুদের কাণ্ডে তোলপাড়
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার
সিলেট নগরীর ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মাসুদ। এবারের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। নানা কর্মকাণ্ডের কারণেই তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। নালিশ দিয়েছেন কেন্দ্রেও। ঘটনার দু’মাসের মাথায় এসে সেই মাসুদ এবার জমি দখলের ঘটনায় সিলেটে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। একটি অসহায় পরিবারে সশস্ত্র হামলা ও লুটপাট চালিয়ে তাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছিল। যার কারণে এখন ভাঙচুর ও লুটপাট মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মাসুদ। তার কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ বিরাজ করছে নগরীর চৌকিদেখী এলাকায়। ঘটনায় নির্মমতায় চলছে তোলপাড়ও। স্থানীয়দের মতে; আলোচনা কিংবা সালিশের মাধ্যমে ঘটনার নিষ্পত্তি না করে মাসুদ একটি নিরীহ পরিবারের ওপর শক্তি প্রদর্শন করেছেন।
মাঠ পর্চা তার নামে। খাজনাও দিয়েছেন। ওরা ভাড়াটিয়া সেজে ওই ভূমি দখল করে আছে। তবে- রেজিয়া বেগম ও তার পরিবারের দাবি হচ্ছে; প্রায় ৪০ বছর ধরে ৩০ শতক ভূমিতে বসবাস করছে তারা। নতুন করে এসে মাসুদ ভূমির মালিক দাবি করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন; ওই ভূমিসহ আশপাশের অনেক ভূমির মালিক হচ্ছে জায়গীরদার পরিবারের মোবারক বখত। পরবর্তীতে ক্রয় সূত্রে অনেকেই ভূমির মালিক হয়েছেন। আবার কেউ কেউ মৌখিক ক্রয় সূত্রে চার-পাঁচ দশক ধরে অবস্থান করছেন। এখন মাঠ জরিপের প্রিন্ট ফর্সা চলে আসার পর নতুন করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছে। এতে দেখা গেছে; জায়গায় অবস্থান এক পক্ষের, আর কাগজপত্রে বৈধতা আরেক পক্ষের। কিন্তু মাসুদ ও রেজিয়া বেগমের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে কোনো পক্ষই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করেননি। ফলে বিরোধপূর্ণ ওই ভূমির বিরোধ নিরসনে এলাকার মানুষের সম্পৃক্ত হননি। বৈধতার প্রশ্নটিও তারা পর্যালোচনা করতে পারেননি। এই অবস্থায় গত ১লা ডিসেম্বর ভোর বেলা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের সশস্ত্র লোক রেজিয়া বেগমের বাসায় অতর্কিত হামলা চালায়।
তারা আধাপাকা বাড়ি ভাঙচুর করে। দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। কয়েকটি ঘরের মালামাল বাইরে ফেলে দেয়। এবং বাড়ির লোকজনকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় আশপাশের লোকজন ঘটনাটি দেখলেও ভয়ে কেউ আসেননি। রেজিয়া বেগমের মেয়ে ফাতিমা বেগম জানিয়েছেন- ‘আমরা ঘুমে ছিলাম। আচমকা হামলায় তটস্থ হয়ে পড়ি। এবং দেখি ৫০ জনের মতো সন্ত্রাসী আমাদের ঘরের আসবাবপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলছিলো। এবং নারী ও শিশুদের কয়েকটি ঘর থেকে ধরে ধরে বের করে দিচ্ছিলো। এ সময় ভাই সাইদুল, আমিনুল, বোন আমিনা, শাবানাসহ কয়েকজন বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে পার্শ্ববর্তী আম্বরখানা ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার ভাই সাইদুল রহমান ও আমিনা বেগম।’ এদিকে- এ ঘটনার পর থানায় মামলা দিয়েছেন ফাতেমা বেগম নিজেই।
মামলায় তিনি প্রধান আসামি করেছেন মাসুদকে। এ ছাড়া আরও ১৪ জনের নামোল্লেখ করেছেন মামলার এজাহারে। অজ্ঞাত রেখেছেন ৪০ থেকে ৫০ জনকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন- ‘সবাই ঘুমে ছিলাম। চিৎকারে ঘুম ভাঙে। এরপর গিয়ে দেখি তাণ্ডব চলছে।’ তারা জানান- ‘ঘটনার সময় হামলাকারীরা সশস্ত্র থাকায় ভয়ে কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাননি। তবে- অনেকেই এ সময় ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ঘটনাটি অবগত করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।’ আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মফিজুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা যাই। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে- তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এখন পরিবেশ স্বাভাবিক ও শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।’ এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে- ঘটনার দু’দিন আগে মাসুদের পক্ষ থেকে আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদন তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশকে।
মূলত জায়গায় কার অবস্থান রয়েছে সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে তদন্তে। পুলিশের ধারণা; জায়গা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। সেটি তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে মামলার আসামি ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মাসুদের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে মোবাইলফোন বন্ধ রেখে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানায় পুলিশ। তবে- ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন জাহিদুল ইসলাম মাসুদ। সেখানে তিনি দাবি করেছেন- ওই সম্পত্তির মালিক তারা। এবং দলিল, মাঠ পর্চা, খাজনা সবই তাদের নামে রয়েছে। রেজিয়া বেগম, তার পরিবার ১০ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে। এবং তার ভাড়াটিয়া হিসেবে তারা অবস্থান করছে। ৪-৫ বছর আগে জাল দলিলের মাধ্যমে জায়গাটি রেজিয়া বেগম তার বলে দাবি করছেন।
হামলা ও লুটপাটের ঘটনাকে সাজানো বলে দাবি করেন তিনি। তবে- ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তার জানামতে রেজিয়া বেগম ও তার পরিবার ৪০ বছর ধরে ওই জায়গায় বসবাস করছে। এলাকার মানুষও জায়গাটিকে রেজিয়া বেগমের বলে জানান। এখন জায়গার মালিক কে সেটি দলিল পর্যালোচনা না করলে জানার উপায় নেই। বিবদমান কোনো পক্ষই তার কাছে সালিশ বৈঠকের জন্য আসেনি। তিনি জানান- কেউ না আসায় এখনই নিশ্চিত নই জায়গার মালিক কে? এখন যেহেতু তারা আইনগতভাবে মামলায় গেছেন, পুলিশ ও আদালত সব দেখবে।