ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

বিদেশিদের বিএনপি

সরকার ১৪ বছর ধরে ব্লেমিং করে বিএনপি’র ওপর দায় চাপাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার
৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেখে আগুন সন্ত্রাস করছে। দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে এক দলীয় স্বৈরশাসনের পথ বেছে নিয়েছে। তারা প্রতিহিংসায় লিপ্ত। এজন্য বার বার আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাস করে বিএনপি’র ওপর দায় চাপাচ্ছে। মিথ্যা ব্লেমিং করছে এমনটাই বিদেশিদের জানালো বিএনপি। গতকাল বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বিদেশি কূটনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘ভায়োলেন্স অ্যান্ড পলিটিক্স অব ব্লেমিং’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা। এ সময় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগে একটি নাটক করেছেন। তিনি কিছু আহত লোককে নিয়ে এসে আবারও ব্লেইম গেম খেলতে চাইছেন। আমাদের চলমান আন্দোলন বানচাল করতে ২০০ বাস নাকি পোড়ানোর জন্য রেডি করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নামধারী নেতাদের রেডি রাখা হয়েছে আমাদের মোকাবিলা করতে।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু আমরা বলছি সরকার এখন আবার পুরনো খেলায় মেতেছে। জনগণ আজকে জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, এই সরকার নির্বাচিত নয়। তারা ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষের ওপর  নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। 

আজকে দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। মানুষ আজকে সর্বগ্রাসী দানব সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। আজকে জাতির করুণ অবস্থা। আমরা পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে সকলকে মিলে একটি বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরি করি। ফখরুল বলেন, ১০ই ডিসেম্বর নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। সেদিন অবশ্যই ঢাকায় সমাবেশ হবেই। সেদিন থেকে মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ধরে ব্লেইম গেম তথা চাপাবাজি করছে। সেটার ওপরই তারা টিকে আছে। পাশাপাশি তারা নানা ধরনের চক্রান্তও করছে। শত উস্কানির পরও আমাদের ৯টি সমাবেশ হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু কোনো ভায়োলেন্স করেনি। 

সমাবেশে শুধু নেতাকর্মী নন সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল। সুতরাং সরকার ব্লেইম গেম ও ব্লাফ গেম করে পার পাবে না। তারা আমাদের কর্মসূচিতে নাকি বাধা দিবে না। কিন্তু ঢাকার সমাবেশের ভেন্যু দিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাধা দেবেন না। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। তিনি চট্টগ্রামে বলেছেন, ভোট চোরদের ভোট দেবেন না। আবার তিনি নৌকায় ভোট চাইছেন। এটা কতটা কন্ট্রাডিক্টোরি। তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সেজন্য আবোলতাবোল বকছেন।  ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভেন্যু নিয়ে সংকট তৈরি করে বাধা দিচ্ছে। কারণ তারা ভীত হয়ে গেছে। তাদের আর সময় নেই। তাদেরকে বিদায় নিতেই হবে। ইনশাআল্লাহ ১০ই ডিসেম্বর সরকার বিদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। হয়তো সরকার শেষ কামড় দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু ভয় পাওয়া যাবে না। ইনশাআল্লাহ বিজয় হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দিনের ভোট রাতে করেছে। ফেসবুকে বিরুদ্ধে লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে। আবার তারাই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্লেইম করছে। আজকে তারা আমাদের ঢাকার সমাবেশ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে। সমাবেশ করতে দিতে চায় না।

 হুমকি-ধমকি দিয়ে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু কোনো ভয়ভীতি দিয়ে কাজ হবে না। গত ১৪ বছরে আমাদের নেতাকর্মীদের অনেক ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। সমাবেশ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন সমাবেশ করবোই। সরকারকে বলবো গণতন্ত্রের পথে আসুন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আসুন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে আসুন। বিদেশিরাও বলছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। মনে রাখবেন ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিবে। সরকার যদি এত উন্নয়ন ও ভালো কাজ করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পায় কেন? বিএনপি কোনো ব্লেইম গেম করে না। সরকারকে বলবো ব্লেইম গেম বন্ধ করুন। ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আজকে একটি গোষ্ঠী দেশের মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করে দেশ চালাচ্ছে। তাদের কৌশল হলো ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গুম ও খুন করে ভয় পাইয়ে দিতে চায়। তাদের লক্ষ্য হলো দেশে শুধু তারাই থাকবে। অন্যরা থাকবে না। এরা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে।

 তবে দেশের নড়বড়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাদেরকে টিকতে দিবে কিনা সংশয় রয়েছে। ছেলে ভোলানো কথা বলে মানুষের জাগরণ থামানো যাবে না। আন্দোলন বানচালের জন্য অন্য কোনো পক্ষকে সরকার ব্যবহার করছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখলে রাখতে কঠোর হবে। ইতিমধ্যে ৯ জনকে হত্যা করেছে। আমরা সবাই নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। এক্ষেত্রে বিদেশি বন্ধুদের সচেতন করতে হবে। এই সরকার স্যাংশন পাওয়ার পর দুর্বল হয়েছে। যদিও আমরা স্যাংশন চাই না। আগামী ১০ই ডিসেম্বর সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে যা করা দরকার সেজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। যদিও এটাই আমাদের শেষ সমাবেশ নয়। একইদিনে ঢাকায় ১০০ টি সমাবেশ কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ আরও উন্নত করতে হবে। 

ইনশাআল্লাহ আমাদের আন্দোলন সফল হবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে বিএনপি সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমার মনোযোগ কেড়েছে। বিএনপি’র নাকি জনসমর্থন নেই। তাহলে এবার নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করুন। অতীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা তো বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মুখে বেরিয়ে আসছে। অথচ ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি আবারো নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আজকে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ অগ্নি সন্ত্রাস করে বিএনপি’র ওপর দায় চাপাচ্ছে। শেখ হাসিনা জনসভায় যেভাবে মিথ্যাচার করছেন তাতে জনগণ মনে করে তিনি কেবলই সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয়। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত করা যাবে না। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, আজকে পুলিশ বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দিবে না। এটা কোন আইনে আছে? পুলিশের কাছে তো অনুমতি নেয়ার কিছু নেই। 

এই ট্রাডিশন বন্ধ হওয়া উচিত। আজকে সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবুও তারা কষ্ট করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে অন্দোলন করছে সেটা এখন গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এটা অব্যাহত রাখলে লক্ষ্য পূরণ হবে। বর্তমান সরকার হাইব্রিড রেজিম সরকার। এদের পতন অনিবার্য। জনগণের কাছে কিছুই টেকে না। প্রয়োজনে নো ভোট নো ট্যাক্স আন্দোলনে যেতে হবে। যেমন হয়েছিল আমেরিকায়। সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র চলমান আন্দোলনে আমাদের সবাইকে শরিক হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। রাজপথেই ফয়সালা করতে হবে। বিদেশি বন্ধুদের বলবো আপনার এই সরকারের অন্যায় অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ক্ষমতাসীনদের অগ্নি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামই একমাত্র পথ। ইতিমধ্যে বিএনপি সারা দেশে বিভাগীয় গণসমাবেশগুলো যেভাবে করেছে তা যৌক্তিক। অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র ও সংঘর্ষ একসঙ্গে চলতে পারে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। 

তারা ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। ১৯৯৫ সালে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। ১৯৭৩ সালেও ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৮ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ হলো বিভিন্ন প্রকৃতির সংঘর্ষ তৈরির মাস্টারমাইন্ড। তারা নিজেরাই অঘটন ঘটিয়ে বিএনপি’র ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করে। তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম খুন করে প্রতিশোধ নেয়। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা শামা ওবায়েদের পরিচালনায় সভায় অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ। গোলটেবিল আলোচনায় রাশিয়া, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট শিরোনামে একটা প্রবন্ধ পাঠ করেন ডা. সায়ন্থ সাখাওয়াত। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা সহিংসতার ওপর ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status