প্রথম পাতা
ব্যয়ে সাশ্রয়ী হতে বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবাররাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ হলে সামনে সমস্যা আসতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেছেন, সবাইকে যার যার জায়গা থেকে মিতব্যয়ী ও সতর্ক হতে হবে। গতকাল সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে একথা বলেন তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের খাদ্যপণ্যের ওপর অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। সেজন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সামনের দিকে কিছুটা সংকট রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে অনেক রাজনীতিবিদ প্রচার করছে আমাদেরও সে অবস্থা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা বাংলাদেশের কখনো হবে না। আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছি। এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়- আপনি সাশ্রয়ী হতে বলছেন।
এর উত্তরে টিপু মুন্শি বলেন, বিষয়টি সামগ্রিক। ভোক্তা হোক, সরকার হোক, সাংবাদিক হোক, আমি, ব্যবসায়ী বা মন্ত্রী সবাইকে কিন্তু সমানভাবে চিন্তা করতে হবে। যুদ্ধটা শোভন নয়। গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট পড়তে শুরু করেছে। জাহাজের ভাড়া বাড়তে শুরু করেছে। সরকার নিজেরাই বাইরে যাওয়া রেস্টিক্টেড করে দিয়েছে। ‘যে মানুষটা ৫ লিটার বা ১০ লিটার তেল বা ডাল কিনতো তাকে তো চিন্তা করতে হবে। আমরা সবাই জানি যখন বিপদ বা ক্রাইসিস হয় তখন কোথাও না কোথাও আমরা বাজেট কাটছাঁট করে চলি। যুদ্ধ যদি লম্বা হয়, সমস্যা আসবে। আমরা যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই যেন সাশ্রয়ী হই, সতর্ক হই। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তেল-চিনি ডালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ৯০ শতাংশ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের কিছু করার থাকে না। এ কয়েকটি পণ্য বেসরকারি সেক্টর আমদানি করে চাহিদা পূরণ করছে। ‘সরকার একটি অভিন্ন মূল্য পদ্ধতি অনুযায়ী কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। বিশেষ করে আমদানি মূল্য, ট্যাক্স, জাহাজ ভাড়া ও লাভসহ হিসাব বিবেচনায় নিয়ে একটি দাম নির্ধারণ করা হয়। ‘কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি পিয়াজের উৎপাদন খরচ ১৮-২০ টাকা পড়ে। কৃষক প্রতি কেজি পিয়াজ ২৫ টাকা ও ভোক্তা পর্যায়ে ৪৫ টাকা হলে সমস্যা হবে না। কৃষক ২৫ টাকার কমে দাম পেলে উৎপাদনে আগ্রহী হবে না। ‘ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ কিনবে- এটা আমিও চাই, এটা অস্বাভাবিক না। যদি পিয়াজের দাম ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে মনে করবো বাজার অস্বাভাবিক। ২৫ টাকা কেজিতে পিয়াজের দাম কৃষক পেলে লোকসান হবে না। আর কৃষক পিয়াজ উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে না। পিয়াজ আমদানির অনুমোদন কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়। কৃষকদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার পিয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। গম রপ্তানির বিষয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডলারের তুলনায় টাকার মান কমে গেছে। এখন এক ডলার সমান ৯২, ৯৩ টাকা, যা আগে ছিল ৮৪ টাকা। এই সময় ভারত ঘোষণা দিয়েছে তারা গম রপ্তানি বন্ধ রাখবে। তবে আশার কথা তারা বলেছে প্রতিবেশী দেশগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন হলে তারা কনসিডার করবে। আমরা নেগোসিয়েশন অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি ইউক্রেনসহ বিকল্প পাঁচটি উৎস থেকে গম আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর এখনো সেখান থেকে গম পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী টিপু মুন্শি। তিনি বলেন, সেদেশের সরকার বলেছে, তাদের প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অন্যভাবে নেবে। তাই ভারত থেকেও গম পাওয়ার আশা আছে।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী রপ্তানি আয় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এবার আমাদের ৪-৫টি আইটেমের রপ্তানি আয় বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। যেগুলো কোনো দিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে গার্মেন্টস সেক্টর খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে গার্মেন্টসে ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান আছে। এক-দেড় বছরের মধ্যে গার্মেন্টসে পাঁচ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থাৎ গার্মেন্টসে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেককে জেলেও পাঠানো হয়েছে। তবে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না, যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকে করে সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্য বিক্রির পরিকল্পনা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রিতে সুফল পায় কেবল শহরের মানুষ। গ্রামের মানুষকেও সেই সুফল দিতে জুনের শুরু থেকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষের কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করা হবে। ১৬ তারিখ থেকে যেটা দিতে চেয়েছিলাম, সেটা কিন্তু এক কোটি মানুষকে নয়, ট্রাকে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম এমন শহরগুলোতে। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বলেছেন, শহরের এই মানুষগুলোকে দেয়া হচ্ছে, গ্রামের মানুষকে তো দেয়া হচ্ছে না। একটু সময় নিয়ে ঢাকাতে আমরা দেবো এবং গ্রামেও দেবো। তিনি বলেন, ঢাকায় ট্রাকে করে দেয়া হয় ১৫ লাখ মানুষকে। বাকি ৮৫ লাখ দরিদ্রের কার্ড থাকে, তাদেরকে দেয়া হয়। ইনস্ট্রাকশনটা এসেছে এবং আমরাও রি-অ্যারেঞ্জ করেছি। ৮৫ লাখ মানুষকে বাদ দিয়ে ১৫-১৬ লাখ মানুষকে দেয়ার চেয়ে একটুখানি সময় নিয়ে। ঢাকা ও বরিশালে কারা ফ্যামিলি কার্ডে পণ্য পাবে, সেই তালিকা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তৈরি করে জুনের শুরু থেকেই এক কোটি মানুষকে পণ্য দেয়ার পরিকল্পনা জানিয়ে টিপু মুন্শি বলেন, এই ১৫ দিন আমরা পিছিয়ে গেছি, আসলে আরও বেশি অ্যাডভ্যান্স হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, “আমরা এক কোটি মানুষকে টিসিবির পণ্য দিয়েছি দুইবার। আমাদের মাথায় আছে এক কোটি মানুষকে দেয়া রেগুলার করবো। বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।