ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

কাতারেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির আত্মঘাতী রাজনীতি

মতিউর রহমান চৌধুরী, দোহা

(১ বছর আগে) ৬ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার, ৪:৫২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

mzamin

কাতারেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি। দ্বিধাবিভক্ত বাংলাদেশিরা। অন্য দলের কমিটিও আছে। আওয়ামী লীগের রয়েছে চারটি কমিটি। বিএনপি’র দুটো। আসুদ আহমেদ যখন রাষ্ট্রদূত তখন আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে অ্যাম্বাসির ভেতরেই মারামারি হয়। কিন্তু কী প্রয়োজন? এখানকার প্রবাসীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের এতে সায় নেই। কেউ কেউ বলেন, সারা দুনিয়ায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি থাকলে কাতারে থাকবে না কেন? কাতারে রাজনীতি আছে, তা শুধু নিয়ন্ত্রণ করেন আমীর। কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছেন তারা।

বিজ্ঞাপন
দলীয় রাজনীতি অনুপস্থিত। বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতার এখন সামনের কাতারে। দেশটি ধনী দেশের তালিকায় সাত নম্বরে। সমালোচকদের মুখেও কাতারের প্রশংসা। এমন কি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মুখেও কাতারের প্রশংসা শোনা গেল। সাম্প্রতিক এক টুইটে তিনি বলেছেন, হ্যাটস অফ টু কাতার (hats off to Qatar) এক অবিশ্বাস্য বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য।
বাংলাদেশ সেখানে একটা বড় সুযোগ হাতছাড়া করেছে। বিশ্বকাপের নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও দায়িত্ব পেতে পারতেন বাংলাদেশের নিরাপত্তাকর্মীরা। কিন্তু উল্টো বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অথচ পাকিস্তান সে সুযোগটা পেয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
যাই হোক, বাংলাদেশিরা এখানে কেন এসেছেন। প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন এখানে। যার মধ্যে স্বল্পসংখ্যক পেশাদার এবং দক্ষ। রয়েছেন কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বাকিরা শ্রমিক। তারা এসেছেন কঠোর পরিশ্রম করে কিছু পয়সা রোজগার করতে। এই মরুভূমিতে কী যে কষ্ট! যারা দেশে আছেন তারা হয়তো বুঝেন না। বাংলাদেশের বস্তাপচা রাজনীতি। যে রাজনীতি অর্থহীন। যে রাজনীতি মানুষের কোনো উপকারে আসে না। যে রাজনীতি টাকা বানানোর মেশিন। এই রাজনীতি কারা আমদানি করলো দেশে দেশে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছি। আমেরিকা প্রবাসী একজন বাংলাদেশি অনেকদিন আগে আমাকে বলেছিলেন, খুঁজে দেখেন এর পেছনে নেতারাই কলকাঠি নাড়েন। তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান। আচ্ছা বলুন তো আমেরিকায় কৃষক লীগ বা কৃষক দলের কী প্রয়োজন? আসলে কোনো প্রয়োজন  নেই। বরং লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে সফলভাবে কমিউনিটিকে দ্বিধাবিভক্ত করতে পেরেছি আমরা। যেটা একদম আত্মঘাতী। এই অপরাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে- নিজেদের শুধু জাহির করা। মারামারি করা, সুবিধা নেয়া। নেতাদের কাছাকাছি যাওয়া। অথচ প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত, পাকিস্তানের রাজনীতির কোনো শাখা তো বিদেশে দেখা যায় না! যে দেশে যাবেন সে দেশের রাজনীতি করুন। তাহলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, নিজে আলোকিত হবেন। একেবারে যে কেউ কেউ করছেন না তা নয়। এদিক থেকে ভারত শীর্ষে। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও তাই। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান এখন দু’দফায় লন্ডনের মেয়র। আমরা আসলে কোথায়? বৃটিশ পার্লামেন্টে অবশ্য কয়েকজন এমপি পেয়েছি আমরা। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে- আমরা তো আওয়ামী লীগ, বিএনপি নিয়েই ব্যস্ত। কংগ্রেস, বিজেপি, পিপলস পার্টি কিংবা তেহরিক-ই-ইনসাফ’র কোনো শাখা কি বিদেশে আছে? দেশের স্বার্থ না দেখে আমরা নিজেরা নিজেরাই লড়াই করছি। কাতারিরাও  ঘরোয়া আলোচনায় এই অসুস্থ রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তারা যে, বিরক্ত এতে কোনো সন্দেহ নেই। আখেরে আমরা হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবো এবং হচ্ছি।
শুধু কাতার নয়, অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা। মজার ব্যাপার হচ্ছে- যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা দেশে ফিরে গেলে তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও পান না। এরপরেও এই রাজনীতির কোনো শেষ নেই। কাতারে বাংলাদেশিদের জন্য অপার সুযোগ ছিল। সুযোগটা আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। আগের  লেখায় ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরা কীভাবে কুড়াল মারছি। বহু বছর আগে যখন কূটনৈতিক রিপোর্টার ছিলাম তখন প্রায়শই ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাটদের মুখে শুনতাম- রাজনৈতিক নিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করছে। কাতারে এসে যা শুনলাম তা তো বিপরীত। একজন পেশাদার কূটনীতিক এমন কাণ্ড করতে পারেন এটা আমার ভাবনার মধ্যেও নেই। 
ঢাকার বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে যখন ডাক এলো তখন রাষ্ট্রদূত বলতে পারতেন- আমি অবশ্যই চীনে যাবো, কিন্তু আমাকে একমাস সময় দিন। যে দেশে আছি সে দেশে এত বিশাল আয়োজন, তা সামনে রেখে বিদায় নেয়াটা সৌজন্যতার মধ্যেই পড়ে না, কূটনীতি তো দূরের কথা। কিন্তু তা তিনি বলেননি। বরং তিনি উদগ্রীব ছিলেন যত তাড়াতাড়ি কাতার ত্যাগ করা যায়। তিনি  ভেবেছিলেন হয়তো দ্রুত না গেলে এত লোভনীয় চাকরিটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ৫১ বছর তো হয়ে গেল। এই রাজনীতি, এই দলাদলি, এই ভাগাভাগি আর কতো দিন চলবে!

 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status