ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

গ্যাস নেই কামরাঙ্গীরচরে গ্রাহকদের দুর্ভোগ

নাইম হাসান
১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

সাতদিন ধরে গ্যাস নেই কামরাঙ্গীরচরে। এই এলাকায় ১২ হাজার বৈধ গ্রাহক রয়েছে। এই গ্রাহক ছাড়াও তিতাসের হিসাবে আরও ৫ গুণ অবৈধ গ্রাহক রয়েছে এই এলাকায়। তিতাস বলছে, এলাকাটির বৈধ গ্রাহকদের কাছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা বকেয়া আছে। লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকার অজুহাতে অনেকে পরিশোধ করছেন না গ্যাসের বিল। কেউ কেউ আবার বৈধ লাইন থেকে মিস্ত্রিকে দিয়ে অবৈধ সংযোগ বের করেছে। এসব কারণে গত সপ্তাহ থেকে পুরো এলাকাতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস। এতে অবৈধ গ্রাহকের ভিড়ে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও বৈধ গ্রাহকরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের রান্নার চুলা জ্বলছে না এক সপ্তাহ ধরে। বাধ্য হয়ে হোটেল- রেস্তরাঁয় আহার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

বিজ্ঞাপন
কেউ কেউ আবার বাড়তি দামে খড়ি কিনে চুলায় রান্না করছেন। চুলায় রান্নার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে আবার চিড়া-মুড়ি খেয়েই দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। এই অবস্থায় গতকাল পূর্ব রসুলপুর এলাকায় ২ নম্বর গলিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। সকাল ১১টা থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়ে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা। এ সময় তারা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তিতাস গ্যাসের এমডির পদত্যাগ দাবি করেন।
আজিরন বেগমের স্বামী রিকশাচালক। তার বাসায় ৮ জন সদস্য। তিনি বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, গতকাল রাতে ভাতের জন্য আমার স্বামী মারছে। পরশুদিন চিড়া-মুড়ি খেয়ে ছিলাম। কালকে রাতেও চিড়া-মুড়ি খাইছি। গ্যাস নাই, রান্নার জায়গা নাই। আমার গ্যাসের কোনো বিল বাকি নেই। আমি কেন কষ্ট করবো। লাকড়ি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। কেরোসিন ১২০ টাকা লিটার। এইভাবে আর কতদিন থাকবো।
কামরাঙ্গীর চর খলিফা ঘাট থেকে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন শহীদুল্লাহ। তিনি ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, আমরা সাধারণ ভাড়াটিয়া। নিয়মিত ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করে যাচ্ছি। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। দুই মাস ভাড়া না দিলে একটা বাড়িওয়ালা সেই বাসায় তালা মারে। আমরা ৭ দিন গ্যাস পাচ্ছি না। এমনো কিছু কিছু বাড়িওয়ালা আছে, তারা চুলায় রান্না করতে দিচ্ছে না। তাহলে গ্যাস না থাকলে কীভাবে খাওয়া দাওয়া করবে। আমার ছোট ছোট মাসুম বাচ্চা আছে, ডেলিভারি মহিলা আছে। এখানে দু’এক হাজার না লাখ লাখ লোক কামরাঙ্গীর চরে বসবাস করেন। এভাবে একটি এলাকা চলতে পারে না। কোনো নেতাকর্মী কোনো কথা বলছে না। আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনছে না। বাসায় গ্যাস না থাকায় লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে রান্না করে বাসায় ফিরছেন নাসিমা। তার বাসা কামরাঙ্গীর চর কুড়ার ঘাট এলাকায়। তিনি বলেন, বাচ্চারা খাবারের জন্য কাঁদে। আমার বাসায় রান্নার কোনো ব্যবস্থা নাই।  বিক্ষোভে অংশ নেয়া স্থানীয় বাসিন্দা সিমি আক্তার বলেন, শুধু আমাদের কামরাঙ্গীর চরেই বিল বাকি তা নয়। অন্যান্য জায়গায়ও অবৈধ লাইন আছে আছে, ওখানেও বিল বাকি। তাহলে আমরা কামরাঙ্গীরচরবাসী কি দোষ করেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা প্রধান সড়কে অবস্থান নেবো বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সরজমিন  কামরাঙ্গীরচরে দেখা যায়, বাসায় গ্যাসের চুলা না জ্বলায় বাধ্য হয়ে চুলায় খড়ি কিনে রান্না করছেন এলাকাবাসী। কেউ কেউ আবার কেরোসিন তেল দিয়ে স্টভ জ্বালাচ্ছেন। বাড়তি দামে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে খড়ি কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। রান্নার জায়গার স্বল্পতা থাকায় কোনো রকমে রোদে পুড়ে কোনোভাবে বসেই রান্নার কাজ সারছেন বাসার গৃহিণীরা।  মাহিনুর বেগম বলেন, বাসার একজনে আয় করে। এই আয়ে ঘর ভাড়া দেবো, কারেন্ট বিল দেবো, নাকি লাকড়ি কিনে রান্না করে খাবো। বাসায় থাকা আজগর আলী বলেন, কেরোসিন ৯০ টাকা কেজি। এক কেজি আনলে তো দুই দিনও যায় না, একদিনেই শেষ হয়ে যায়।  এই অবস্থায় আমরা গরিব মানুষ কীভাবে চলবো। আমরা গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। লাকড়ি ২০ টাকা কেজি। এখন যদি গ্যাস না থাকে তাহলে লাকড়ি কিনবো নাকি পোলাপানের জন্য চাল-ডাল কিনবো। 
ভুক্তভোগী একজন ভাড়াটিয়া বলেন, এই গ্যাস না থাকার মূলত দোষী বাড়িওয়ালারা। তাদের বাসায় গ্যাসের লাইনের পাশ দু’টি চুলার। অথচ তারা অবৈধভাবে ৬ থেকে ১০টি চুলা চালায়। বৈধ যে দুটি চুলা রয়েছে, তার বিলও দেড় থেকে ২ বছর ধরে পরিশোধ করে না। ভাড়াটিয়ার কোনো বকেয়া নেই। করোনার মধ্যেও আমরা ভাড়া পরিশোধ করে গেছি। তিতাস গ্যাসের নিম্ন শ্রেণির যে কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা সকালে এসে গ্যাসের লাইন কেটে দিলে বিকালে আবার তারা এসে সংযোগ দিয়ে যায়। তারা অর্থের বিনিময়ে এই কাজ করে। এ সময় সেই কর্মকর্তারা ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নেয়।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status