প্রথম পাতা
ফারদিন হত্যার ১ মাস
তদন্তে কূল কিনারা হয়নি
মরিয়ম চম্পা
৬ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবারবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের ১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলো। ফারদিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশসহ একাধিক সংস্থা কাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের এক মাসেও তদন্তকারী সংস্থা ফারদিন হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৪ঠা নভেম্বর বাসায় না ফেরায় ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা পরদিন রাজধানীর রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৭ই নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মরদেহের সঙ্গে ফারদিনের মোবাইল, ওয়ালেট ও ঘড়ি পাওয়া যায়। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শেখ ফরহাদ জানান, ফারদিনের মাথায়, শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং বুকের ভেতরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানায়, এটি হত্যাকাণ্ড। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়নি তার। ১০ই নভেম্বর রামপুরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন ফারদিনের বাবা।
এর আগে হত্যা মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়। এরপর ১০ই নভেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৩ মামলার ফেরারি আসামি শাহীন মিয়া ওরফে সিটি শাহীন নিহত হয়। ফারদিনকে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় হত্যা করা হতে পারে বলে র্যাব ধারণা করছে। ৫ই নভেম্বর রাত ২টা ৩৫ মিনিটে সেখানেই ফারদিনের মোবাইল ফোন সক্রিয় অবস্থায় ছিল বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও ডিবি চনপাড়ায় যৌথ অভিযান চালায়। কিন্তু, অভিযানে কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ সময় ফারদিন চনপাড়ায় মাদক কিনতে গিয়েছিলেন, এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে সহপাঠীরা জানায় ফারদিনকে তারা ন্যূনতম ধূমপান করতেও কখনো দেখেননি। পুলিশ ও র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু খুঁজে পায়নি। এরপর চনপাড়া বস্তি থেকে সন্দেহভাজন ২ মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ই নভেম্বর ফারদিন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চনপাড়া বস্তির ৪ মাদক চোরাকারবারি রায়হান মাহমুদ, উজ্জল, রনি ও নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ফারদিনের পরিবারের সদস্যরা।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ১ মাস হতে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত ফারদিনের পরিবার। এ বিষয়ে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা বলেন, ফারদিন হত্যাকাণ্ডের ১ মাসেও বুয়েট প্রশাসন কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাদের নির্বিকার ভূমিকা আমাদের আহত করেছে। ছেলেকে বুয়েটে ভর্তি করাটা আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব শিগগিরই এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করবেন।
ডিবি’র উপ-কমিশনার (মতিঝিল বিভাগ) রাজিব আল মাসুদ ফারদিন হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে মানবজমিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশার মধ্যে আমরা। যতটুকু তথ্য প্রকাশ করেছি এই বাইরে আমাদের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যতগুলো সম্ভাবনা নিয়ে আমরা শুরু থেকে কাজ করছি সেগুলো এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু এর কোনোটি থেকে হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত পাইনি। যে কারণে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।