ঢাকা, ১ মে ২০২৪, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটেও বেড়েছে রপ্তানি আয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৪ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার
mzamin

গত কয়েক মাস ধরে চরম গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে অস্থিরতা বিরাজমান। কিন্তু এর মাঝেও বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে রেকর্ড গড়েছে। দেশের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি পরিমাণ রপ্তানি আর কখনো   হয়নি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবর শেষে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। নভেম্বর শেষে সেটি বেড়ে ১০.৮৯ শতাংশ হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ২ হাজার ১৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। পাশাপাশি গত ৫ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয়ে আরেকটি রেকর্ড।  সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে কয়েক মাস ধরেই দুশ্চিন্তার বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বিজ্ঞাপন
সেটিকে আরও উস্কে দিচ্ছিল প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি। 

কারণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান এ দুটি উৎস থেকে টানা দুই মাস (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) আয় কমেছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো- সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের নভেম্বরে ৫০৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা চলতি বছরের ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৪০৪ কোটি ডলারের পণ্য। তারা আরও বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চরম গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট দেখা দেয়। সব ধরনের শিল্পে দেখা দেয় উৎপাদন অশ্চিয়তা। তবে বড়দিনকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। ফলে রপ্তানি আয় বেড়েছে।  পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই কঠিন সময়ে এক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। এটা অব্যাহত রাখতে সরকারি-বেসরকারি খাত যে যার অবস্থান থেকে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে পারলে আর কোনো সমস্যা হবে না। নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্সও কিছুটা বেড়েছে। আইএমএফ’র প্রথম কিস্তির ঋণটাও ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া যাবে।

 সব মিলিয়ে রিজার্ভের উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আর থাকবে না।  পরিসংখ্যান বলছে, নভেম্বরে ভালো রপ্তানি হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। অক্টোবর শেষে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। এর আগে, একক মাসের হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আয়ও নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছে। নভেম্বরে প্রবাসীরা বৈধ পথে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। সেই হিসাবে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। 

এদিকে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ১৫ মাস ধরে কমছে রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রির কারণে তা কমে এখন ৩৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে।  ইপিবি’র তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়েছে। তবে হোম টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য, প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। ইপিবি’র প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮৩৪ কোটি ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিটওয়্যারের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০১১ কোটি ডলার। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে আয় ৮২১ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১২.৫৫ শতাংশ এবং ১৯.৬১ শতাংশ। একক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ৩২৩ কোটি ডলার থেকে ২০২২ সালের একই মাসে ৩৫.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

 পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে পোশাকের ইউনিটের দাম বৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং সেইসঙ্গে আগের মাসগুলোতে অর্ডার বৃদ্ধির কারণে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হতাশাজনক বলে মনে হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী খুচরা ব্যবসা একটি কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের রপ্তানির বৃদ্ধিকে আত্মতুষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। আমরা বরং সতর্ক এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী। কারণ, পোশাক শিল্পটি একটি টেকসই শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পোশাকের মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। সেখানে পোশাক বিক্রিতে ধস নামে। তাতে রপ্তানির ক্রয়াদেশ আসাও কমে যায়। তবে ক্রয়াদেশ আবার আসতে শুরু করেছে। এটি দেশের জন্য ইতিবাচক।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status