ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

অসহায় সুখীমাই-এর আকুতি

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

‘বাবারে! সরকার হামাক কিছুই দিলোনা। না বয়স্কভাতা, না বিধবা ভাতা, না বাড়িঘর। হামার কিচ্ছু নাই বাহে! মান্‌ষের জাগাত ছোট্ট একনা ছাপড়া ঘর করি বেটাবৌ, দুটা নাতিক নিয়া খুব কষ্টে রাত কাটাই। যখন বৃষ্টি আসে তখন সারারাত বসে প্লাস্টিকের বস্তা মাথায় দিয়ে সারা রাত কাটাতে হয়। থাকার জাগা নাই জন্নি বেটাকোনাও বৌকোনাক ফেলেয়া নিরুদ্দেশ হছে। তোমরা দেখেন না! মোর খাবার নাই, পরনের কাপড় নাই, থাকার জাগা নাই। অনেক হতাশা আর কষ্টগাঁথার কথাগুলো বলছিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ সুখীমাই। তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর আদিবাসী পল্লীর জতিন কিস্কুর স্ত্রী। প্রায় এক যুগ পূর্বে স্বামীকে হারান সুখীমাই। স্বামী মারা যাওয়ার পর অদম্য সুখীমাই অন্যের জমিতে কৃষি শ্রম দিয়ে নির্বিঘ্নে ৩/৪ জনের সংসার চালাতন।

বিজ্ঞাপন
এখন আর শরীর চলেনা। দেহের হাড়গুলো প্রায় মাংসবিহীন চামড়ার সঙ্গে মিশে গেছে। চোখেও ভালো দেখেন না। কানেও শোনেন কম। লাঠিতে ভর দিয়ে দু’মুঠো খাবারের জন্য এবাড়ি ওবাড়ি ছুটতেন তিনি। কিন্তু ক’মাস ধরে রুগ্ন দেহে আর ছুটতে পারছেন না। তাই চার দেয়াল বেষ্টিত মাটির ঘরের মেঝের এক কোনায় অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ষাটোর্ধ্ব সুখীমাই। আর ঐ ছোট্ট ঘরেই গাদাগাদী করে মেঝেতে খড় বিছিয়ে বসবাস করেন সুখীমাইসহ পুত্রবধূ জসনি হেমরন, নাতি সাগর কিস্কু (১২) ও সুজন কিস্কু। তিনি দাবি করেন তার বয়স ৬১/৬২ বছর। ভোটার আইডি কার্ডে তার বয়স কমিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে সরজমিন গিয়ে সুখীমাইয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমানে তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পুত্রবধূ জসনি হেমরন। সে কৃষি শ্রম ও অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে যা আয় করে তা দিয়েই কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। শারীরিক কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেদিন কাজকর্ম হয় না, সেদিন সবাইকে উপোস থাকতে হয়। তিনি জানান, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তার ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। পুত্রবধূ জসনি হেমরন বলেন, আমি কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছিনা। শাশুড়ির জায়গা-জমি না থাকলেও সরকারিভাবে ঘর-বাড়ি বরাদ্দ পেলে আমার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মোট ৬ শতাংশ জমিতে বাড়ি করে দু’ছেলে ও শাশুড়িসহ থাকতে পারবো। কথোপকথনের একপর্যায়ে অসহায় সুখীমাইকে কয়েকটি টাকা হাতে গুঁজে দিতেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আকুতি ভরা কণ্ঠে বলেন, বাবারে! মুই আর কয়দিন বাঁচিম, মরার আগে দু’মুঠো খাবার, এ্যানা থাকার জায়গা আর পরনের জন্যি মোটা কাপড় ছাড়া কিছুই চাওনা বাবা।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status