ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ
অনুসন্ধান
আর্কাইভ অনুসন্ধান
প্রথম পাতা
‘দিস ওয়ে’ এখন কাতারের জাতীয় স্লোগান
৩০ নভেম্বর ২০২২, বুধবার
নিজস্ব ছবি
দিস ওয়ে, দিস ওয়ে। চলতি বিশ্বকাপে এটা এক নতুন সংযোজন। এর আগে কখনো দেখিনি। বিশেষ করে কাতারের মেট্রোরেলে এটা চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি স্টেশনে ছেলেমেয়েরা হাতে ফর্ম ফিঙ্গার নিয়ে দাঁড়িয়ে। ঝকঝকে, তকতকে মেট্রোরেল। সর্বাধুনিক ছোঁয়া রয়েছে। প্রতিটি স্টেশনে এই স্বেচ্ছাসেবকদের সরব উপস্থিতি। কেউ হারাতে গেলেও হারাতে পারবেন না। কারণ এমনভাবে সাজানো হয়েছে আর এমনভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে কোনোভাবেই হারানোর সুযোগ নেই।
বিজ্ঞাপন
তারপরও আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞেস করেন তখনই বলে দেবে- দিস ওয়ে, দিস ওয়ে। কোন লাইনে যেতে হবে সেটাও বলে দেবে। কিংবা আপনাকে নিয়ে যাবে ওই প্ল্যাটফরমে। শুধু কি স্টেশনের ভেতরে? স্টেডিয়ামে ঢোকা পর্যন্ত আপনি দেখবেন- দিস ওয়ে, দিস ওয়ে। এটা যেন একটা জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। কাতারের জনসংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ। এর বেশির ভাগই বিদেশি। দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকরাই কাতারের প্রাণ। নেতৃত্বে রয়েছেন আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। গোড়া থেকেই সমালোচনা ছিল কাতার কি পারবে সুচারুভাবে এতবড় আয়োজন সম্পন্ন করতে? এখন আর কারও মুখে শুনি না। আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমও লিখছে না। বরং জয়গানই গাইছে। যে কথা বলছিলাম। স্বেচ্ছাসেবকদের কথা। এরমধ্যে বাংলাদেশিও স্থান পেয়েছেন। মিডিয়া সেন্টার থেকে শুরু করে বিমানবন্দর পর্যন্ত। অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা হয়েছে। মিডিয়া সেন্টারে কর্মরত আছেন মোহাম্মদ রশিদ। বললেন- আমি গর্বিত, আনন্দিত। বিশাল এই আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে। আমার মতো আরও অনেকেই বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছেন। মিডিয়া সেন্টারে কোনো সাংবাদিকের যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকটার উপর নজর দেয়া হয়েছে বেশি। সকাল-বিকাল, রাত-দুপুর তাদের দায়িত্ব। আপনি যদি স্টেডিয়ামে ঢুকতে চান এত সুশৃঙ্খল আয়োজন দেখে অবাক না হয়ে পারবেন না। টিকিটের গায়ে সবকিছু লেখা আছে। তারপরও এই স্বেচ্ছাসেবকরা আপনাকে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। ভেতরেও এই স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা লক্ষণীয়। ওখানেও শুনবেন- দিস ওয়ে, দিস ওয়ে। শুধু তাই নয়, খেলায় জিতলে ভক্তদের মুখেও শোনা যায় একই স্লোগান- দিস ওয়ে, দিস ওয়ে। খেলা ভাঙার পর মেট্রোরেলে ভিন্ন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। হাজার হাজার ফ্যান তখন ট্রেনে উঠার চেষ্টা করছেন। বিশ্বাস করুন, পরিবেশ তখনো সুশৃঙ্খল। নিয়মে বন্দি। ট্রেনের ভেতরে কানে ভাসবে একজন মহিলার কণ্ঠ। আমরা এই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি, পরের স্টেশন এটি। রেকর্ডেড ভাষ্য। ইংরেজি আগে, আরবি পরে। আরবি হচ্ছে তাদের মাতৃভাষা। আমরা তো বাংলা বাংলা করতে গিয়ে না শিখলাম বাংলা, না শিখলাম ইংরেজি। যার মূল্য দিচ্ছি মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ভাষা জানার কারণে অন্যেরা ছড়ি ঘুরাচ্ছে। আমরা থাকছি মুখ লুকিয়ে। রাত তিনটা পর্যন্ত চলে মেট্রোরেল। কাতারিদের খুব একটা দেখা যায় না মেট্রোরেলে। কারণ তাদের সবারই রয়েছে একাধিক গাড়ি। এই সময় গাড়ি চালানো বা পার্কিং পাওয়া খুবই কঠিন। যদিও অনেক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তুলনা করছি না, বিশ্বকাপের আয়োজন অন্যদেশে এমনটা দেখিনি যা কাতারে দেখছি। হাজার হাজার ফ্যানের সমাগমে রেলের পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। কিন্তু সকালে দেখি একদম আগের মতোই। গোছানো, সাজানো। দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এগুলো উল্লেখ করার মতো নয়। রাত-বিরাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। দেখিনি বা শুনিনি। ইতালি বিশ্বকাপে আমার নিজেরই পকেটমার হয়েছিল। রেলে নয়, সেটা হয়েছিল ট্রামে। সাড়ে তিনশ’ ডলার খুইয়েছিলাম। আবহাওয়া বৈরী নয়। যা সাধারণত মরুভূমিতে হয়ে থাকে। এ কারণে বোধকরি নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছে। আর স্টেডিয়ামের কথা কি বলবো। এ যেন ছবি এঁকে রাখা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামে খেলা দেখার আনন্দই আলাদা। বিশ্বকাপে কেউ হাসেন, কেউ কাঁদেন। প্রায় প্রতিদিনই কান্নায় মনটা ভারী হয়ে যায়। ফ্যানদের আহাজারি দেখি। দেখি আনন্দে বিগলিত হতে। ফ্যানজোনগুলো তখন গর্জে ওঠে আনন্দে। আবার কখনো দেখা যায় ভূমিকম্প হয়ে গেছে। সব শান্ত, গন্তব্যের দিকে ছুটছেন। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে কোরিয়ানদের বিলাপ দেখেছি। মাঠের বাইরে ফ্যানরা শুয়ে আছেন। যেমনটা ঘানার সঙ্গে হারার পর কোরিয়ান প্লেয়ারদের শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। তা হবারই কথা। কারণ গোলের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতে। অনেকটা নাটকীয়ভাবে ঘানা জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। ভালো খেলার পরিণতি এমনটা মেনে নেয়া যায় না। তবুও ফুটবল। বলা হয়ে থাকে, ফুটবল গোলের খেলা। গোল নেই, আপনিও নেই। হঠাৎ বিদায় নিতে হবে রেস থেকে। চারবারের বিশ্বকাপজয়ী ইতালি মূল্য দিয়েছে এবার। তারা কাতার যাওয়ার টিকিটই নিশ্চিত করতে পারেনি। মাঠে ইতালির অনুপস্থিতি স্পষ্ট। কট্টর সমালোচকরাও বলবেন, ফুটবলের অন্যতম শক্তি ইতালি না থাকলে খেলাই জমে না। বাংলাদেশ অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় ভাগ হয়ে আছে, যেমনটা লিখেছিলাম কাতার পৌঁছেই। রাউন্ড অব সিক্সটিনে পৌঁছে গেছে ব্রাজিল। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ডকে তাদের হারাতে হবে। না হলে কোনো অঙ্কের জাদুমন্ত্রে ভাগ্য খুলতে পারে। ওদিকে বিরতিহীনভাবে বিমান নামছে কাতারের দুটি জাতীয় বিমানবন্দরে। ১২ লাখ ফুটবলভক্ত আসছেন যেমনটা শুরুতে আশা করা হয়েছিল। অনেকে আবার যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দল আউট হয়ে গেছে তাই থেকে আর কী লাভ! এখানে থাকা খাওয়া তো আর কম খরচের নয়। যেখানে এক বোতল পানির দামই ১২০ টাকা। ফুটবল দুনিয়াকে একত্রিত করে। রোনালদোর কণ্ঠে এমনটাই শোনা গেল। তাই তো বলা হয়, বিশ্বকাপ হচ্ছে- দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা আসলেই এক বিউটিফুল গেম। যার কোনো তুলনা হয় না।
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]