প্রথম পাতা
ঋণের মামলা
পাবনায় ১২ কৃষক কারাগারে, বাড়িছাড়া ২৫
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে
২৭ নভেম্বর ২০২২, রবিবারপাবনার সমবায় ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার অভিযোগে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালত। গত বুধবার এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এ মামলায় গত তিন দিনে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আরও ২৫ কৃষক বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অন্যত্র। ঋণের খপ্পরে এখন দিশাহারা ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রান্তিক এই কৃষকরা। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে কেউ ২৫ হাজার কেউ ৩০ হাজার টাকা করে ঋণ নিয়েছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলার ৩৭ জন কৃষক। এই ঋণ ফেরত না দেয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। পরে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামাণিকের ছেলে আলম প্রামাণিক (৫০), মনি মণ্ডলের ছেলে মাহাতাব মণ্ডল (৪৫), মৃত সোবহান মণ্ডলের ছেলে আবদুল গণি মণ্ডল (৫০), কামাল প্রামাণিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামাণিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আকরাম আলী (৪৬), লালু খাঁর ছেলে রজব আলী (৪০), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মজনু হোসেন (৪০) ও মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে আতিয়ার রহমান (৫০)।
গ্রেপ্তার হওয়া কৃষক রজব আলীর স্ত্রী বুলিয়া খাতুন, আতিয়ারের স্ত্রী রেশমা, মহির উদ্দিনের স্ত্রী বুলিয়া বেগমসহ বেশ কয়েকজন জানান, এই ঋণের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করা হলেও ব্যাংকের অসৎ দুই কর্মকর্তা ও স্থানীয় মহিলা মেম্বার বিলকিস বেগম তা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের দাবি, যারা ঋণ নিয়েছিলেন, তারা যদি ঋণখেলাপি হবেন তাহলে তাদের কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি কেন? উল্টো ওয়ারেন্ট বের করে রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এর ন্যায়বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবি করছি। অভিযুক্ত মহিলা মেম্বার বিলকিস বেগমের বাড়িতে গিয়ে তার বাড়ির গেটে তালা ঝুলানো পাওয়া যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, এ কাজে সাংবাদিকের প্রয়োজন নেই। আমার সমস্যা আমি নিজেই সমাধান করতে পারবো। স্থানীয় ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন মণ্ডল বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি গ্রুপ ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় পুলিশ আমার এলাকার ১২ জনকে ধরে নিয়ে গেছে। মহিলা মেম্বারকে বলেছি, রোববারের মধ্যে ব্যাংকের জমা করা টাকার হিসাবসহ এলাকায় আসতে। তিনি বলেন, ব্যাংকের যে দুই কর্মকর্তা এই কিস্তির টাকা ওঠাতেন তাদের মধ্যেই ঘাপলা রয়েছে।
ইতিমধ্যে একজন মারা গেছেন। যে কারণে বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক পাবনা শাখার ম্যানেজার কাজী জসিম উদ্দিন বলেন, তৎকালীন ম্যানেজার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে ঋণ ফেরত না দেয়ার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলা দায়েরের পর আদালত তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলার বাদী সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বর্তমানে তিনি নাটোর শাখায় কর্মরত রয়েছেন। মামলার তারিখে এসে আদালতে হাজিরা দিয়ে যান।