দেশ বিদেশ
শিশু আয়াতের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আর যা জানা গেল
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৭ নভেম্বর ২০২২, রবিবারচট্টগ্রামে আলোচিত শিশু আয়াতকে হত্যার পর লাশ ৬ টুকরো করে সাগরপাড়ের বেড়িবাঁধে ফেলে দেয় আবির আলী। ঘাতক আবির পুলিশের কাছে সবকিছু স্বীকার করেছে। তবে তার লাশের খণ্ডিত অংশগুলো এখনো পাওয়া যায়নি। ব্যাগভর্তি এই দেহাংশ জোয়ার ভাটার পানিতে সাগরে তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো আর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ঘটনার সময় শিশুটির পরনে থাকা কাপড়, জুতা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি-অ্যান্টি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে। আয়াত নিখোঁজ রহস্যের উদ্ঘাটন করা তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই’র পরিদর্শক ওমর ফারুক গতকাল বিকালে মানবজমিনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ ও আবিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে আমরা শতভাগ নিশ্চিত আয়াতকে হত্যা করেছে আবির। বঁটি দিয়ে লাশ কেটে দুইটি বক্সে ভরে সাগর পাড়ের বেড়িবাঁধে ফেলে দেয়া হয়।
সেখানে জোয়ার ভাটার পানি আসে। মনে হচ্ছে ব্যাগগুলো সেই পানিতে গভীর সাগরে তলিয়ে গেছে। তাই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এই বলে সে কাপড়ের ব্যাগটি সেই বাসার একটি কক্ষের ‘ফলস ছাদে’ রেখে দেয়। এরপর তার মা অন্য রুমে চলে গেলে আবির ওই ব্যাগ থেকে আয়াতের নিথর দেহ বের করে বঁটি এবং অ্যান্টি কাটার দিয়ে ৬ টুকরো করে। পরে আয়াতের শরীরের সেই ছয় টুকরো আবার ব্যাগের মধ্যে রেখে দেয় এবং ফ্লোরে পরা রক্তগুলো পাউডার দিয়ে মুছে ফেলে। গন্ধ এড়াতে করা হয় রুম স্প্রে। এরপর সে পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। পরদিন সকালে প্রথমে আয়াতের শরীরের ৩ টুকরা আকমল আলী রোডের একটি পাশের খালে ফেলে দেয়। বিকালের পর বাকি ৩ টুকরা স্লুইচ গেটে ফেলে দেয়। আয়াতকে খুন করে বড় লোক হতে চেয়েছিল আবির: পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আবীর আলীর বাড়ি রংপুর জেলার তারাগঞ্জে। তার মা বাবা গার্মেন্টসে কাজ করার সুবাধে দীর্ঘদিন ধরে শিশু আয়াতদের ইপিজেড এলাকায় ভাড়া থাকতো। তবে ৩ মাস আগে বাবা- মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর মা আকমল আলী সড়কের পকেট বাজার এলাকায় আলাদা একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন।
তবে বাবা এখনো আয়াতদের বাড়িতেই থাকেন। জানা যায়, ঘাতক আবির বেকার। দুই মাস একটি গার্মেন্টসে কাজ করছিলো। তবে এই কাজ তার ভালো না লাগায় ছেড়ে দেয়। এলাকায় মাঝেমধ্যে ভাড়ায় শর্টপিচ ক্রিকেট খেলতো। এরইমধ্যে তার মাথায় রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তা মাথায় আসে। সেজন্য আরও ৬ মাস আগে বাড়িওয়ালার মেয়ে আয়াতকে অপহরণ করে বড় অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ নিয়ে বড়লোক হওয়ার পরিকল্পনা করে। সেজন্য সে নিয়মিত ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ ও ‘সিআইডি’ দেখতো। সেখান থেকে সে মুক্তিপণ আদায়, মরদেহ গুম, আলামত নষ্ট সবকিছুই রপ্ত করেছে। জানা যায়, দুই মাস আগে আবির রাস্তায় একটি সিমকার্ড খুঁজে পায়। সেই সিম কার্ড দিয়ে ফোন করে শিশু আয়াতের বাবা-মা থেকে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলো। তবে ১৫ই নভেম্বর বিকালে আয়াতকে অপহরণ করে বাসায় নেয়ার পর কান্নাকাটি থামাতে গিয়ে আয়াত শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেলে তার আর মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ই নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় নুরানি মাদ্রাসায় পড়ুয়া ৬ বছর বয়সী শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন শিশুর বাবা সোহেল রানা ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করলেও কোনো হদিস মিলেনি। শিশু আয়াতের অপহরণের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়। একপর্যায়ে ২৪শে নভেম্বর রাতে আয়াতদের দাদার বাড়ির ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একপর্যায়ে সে আয়াতকে অপহরণ ও খুন করে লাশ ৬ টুকরা করে লাশ সাগরপাড়ের বেড়িবাঁধে ফেলে দেয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। বিষয়টি সারা দেশে খুব আলোচিত হয়।