ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুকুর চুরির অভিযোগ

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৭ নভেম্বর ২০২২, রবিবার

খালে বাঁশের সাঁকো নেই। অস্তিত্ব নেই অন্য প্রকল্পেরও। জন্ম-মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, সবকিছুতেই আনলিমেটেড অর্থ আদায়। সরাইলের পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের বিরুদ্ধে বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগের শেষ নেই। এসব কারণে পরিষদের ১২ সদস্য অনাস্থাও দেন তাকে। কিন্তু সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল হক মৃধুল অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার আগে অনাস্থার তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ারম্যানের পক্ষেই দিয়ে গেছেন। এ নিয়ে মোটা অংকের লেনদেনের কথাও চাউর হয়েছে। ইউএনও’র এই কীর্তির বিরুদ্ধে গত ২৪শে নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে ১২ ইউপি সদস্য আপিল অভিযোগ দায়ের করেন। ওইদিন তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধনও করেন। জানা গেছে, পাকশিমুল ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ১৩টি বাঁশের সাঁকো নির্মাণের জন্যে এ বছরের ১৮ই জুলাই ১ লাখ ৯৯ হাজার ২শ’ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন
এই প্রকল্প কমিটির সভাপতি হন চেয়ারম্যান কাউছার নিজেই। কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে কোথাও বাঁশের সাঁকো বানাননি তিনি। ভূইশ্বর পাথরহাটি নতুন আবাসন প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্যে ৩ লাখ এবং সাড়ে ৩ লাখ টাকার দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। 

এই টাকা দিয়েও মাটি ভরাট হয়নি সেখানে। প্রকল্প কমিটিতে জিয়াউল মৃধা নামে একজনের নাম ব্যবহার করা হয় যার অস্তিত্বই নেই ভূইশ্বর গ্রামে। আবার জুবাইদ আলম মিঠু নামে চেয়ারম্যান তার ভাতিজাকে মাটি ভরাট প্রকল্পের দু’টির একটিতে জুবাইদ আলম নামে সদস্য সচিব করেন এবং অন্যটিতে মিঠু নামে সদস্য করেন। পিতার নাম সারোয়ার ঠিক রয়েছে। ব্রাহ্মণগাঁও পূর্ববন্দের আম্বর আলীর জমি থেকে তিতাস নদীর পাড় পর্যন্ত রাস্তার দু’রকম নাম দিয়ে মাটি ভরাটের দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ২শ’ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের ফার্নিচার ক্রয়ের নামেও দু’টি প্রকল্প দেখিয়ে এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে মোট ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬শ’ টাকা হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে সেপটিক ট্যাঙ্ক মেরামত ও ফার্নিচার ক্রয়ের জন্যে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৬শ’ টাকার একটি প্রকল্প দেয়া হয়। এরপর ফার্নিচার ক্রয়ের জন্যে আবার ৮০ হাজার টাকার আরেকটি প্রকল্প দেয়া হয়। মোট কথা ইউনিয়ন পরিষদের সব প্রকল্প খেয়ে সাবাড় করছেন চেয়ারম্যান।

  সাবমারসিবল টিউবওয়েলের জন্যে ৮ হাজার টাকা সরকারি ফি’র পরিবর্তে ১৮ হাজার টাকা, জনস্বাস্থ্যের ইমপ্রুভমেন্ট টয়লেটের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জন্ম সনদের জন্যে ৫০ টাকার পরিবর্তে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, মৃত ব্যক্তিদের ওয়ারিশ সনদ প্রদানের জন্য ১২০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা,  ট্রেড লাইন্সের জন্যে বিনা রশিদে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে। কালিশিমুল গ্রামের বিস্‌মিল্লাহ্‌ ট্রেডার্স নামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে ফি নেয়া হয়েছে ২শ’ টাকা আর ভ্যাট দেখানো হয়েছে ৩শ’ টাকা।  সরজমিন ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গেলে চেয়ারম্যানের এসব অভিযোগ তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। জয়ধরকান্দির করিমপুর গ্রামের রেজাউল করিম বলেন- চেয়ারম্যান সেতুর জন্যে ২০ হাজার টাকা দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু সেই টাকা আর দেননি। গ্রামবাসী নিজেরাই  টাকা দিয়ে সেতু বানিয়েছে। তেলিকান্দি গ্রামের মাসুক মিয়া জানান- নির্বাচিত হওয়ার আগে চেয়ারম্যান বলেছিলেন জন্মনিবন্ধনে কোনো টাকা নেবেন না। কিন্তু এখন এই কাজের জন্য তাকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য অজুফা বেগম জানান- তার বাবা-মা’র মৃত্যু সনদের জন্যে ১৬শ’ টাকা দিয়েছেন। সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হকের ছেলে কাজী জাহিদুল হক জানান- ৩ বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন। মৃত্যু সনদ ও ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তার কাছ থেকে ৮শ’ টাকা রাখেন।

 পাকশিমুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান- স্থানীয় বাজারে যাওয়ার জন্যে তিনি নিজ উদ্যোগে একটি সাঁকো তৈরি করেন। সেই সাঁকো দেখিয়ে ১ পার্সেন্ট থেকে চেয়ারম্যান ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য সায়েদুল হক বলেন- পরিষদের পেছনে একটা ট্যাঙ্কি করার জন্যে আমাকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হয়। এই কাজ করতে গিয়ে দেখি আগেরই ট্যাঙ্কি রয়েছে। কাজ না হলেও চেয়ারম্যান ট্যাঙ্কির নামে টাকা উঠিয়ে নেন। ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মলাই মিয়া জানান- আগের চেয়ারম্যান টিউবওয়েলের জন্যে ১০ হাজার টাকা ট্রেজারি চালান নিতেন। এখন কাউছার চেয়ারম্যান ১৮ হাজার টাকা নেন। এই টাকা তিনি সরাসরি নেন। এই ইউনিয়নে জনগণের ভোগান্তি চরমে।

 চেয়ারম্যান সেবা দিতে পারছেন না। মানুষ অতিষ্ঠ।  এসব  অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের বিরুদ্ধে পরিষদের ১২ জন সদস্য ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দাখিল করার পর উপজেলা পরিবার- পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন মিয়াকে সেটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। সুমন মিয়া ১১ই অক্টোবর পাকশিমুল হলরুমে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় ১২ ইউপি সদস্য এবং ৫শ’ ভুক্তভোগী তদন্ত কর্মকর্তার সামনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের প্রমাণ এবং সাক্ষ্য দেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন প্রমাণ গ্রহণ করেননি এবং সাক্ষীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ বা আমলে নেননি।  তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, ১২ জন মেম্বার আমার ত্রুটি দেখতে পারেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমি আমার কোনো ত্রুটি দেখি না। ১৪ই নভেম্বর সরাইল থেকে বদলি হন তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষরকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃধুল। এর ৪দিন আগে তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্যে একাধিকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status