প্রথম পাতা
সাক্ষাৎকার
শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি আমলে না নিলে...
কাজল ঘোষ
১৬ মে ২০২২, সোমবারনিকট প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ভেতরেও নানা আলোচনা। অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা চিন্তা রেখা টেনে দিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতি টালমাটাল। রিজার্ভে টান পড়েছে। ডলার বাজার অস্থিতিশীল। সামগ্রিক অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা। কী হতে যাচ্ছে? সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার মামুন রশীদ বলেছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একের পর এক ধ্বংস বা অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। রিফর্ম নেই কোথাও। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কোনো ক্ষেত্রেই রিফর্ম হয়নি। রিফর্ম না হওয়ার পরিণাম কখনও ভালো হয় না।
প্রশ্ন: সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা কোথায় আছি?
অস্বস্তির বিষয়টি প্রধানত অর্থনীতির। তারপর আসে যানজটের, নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি, কীভাবে পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ হবে? সন্তানের পড়াশোনার কী হবে? চিকিৎসার কী হবে? নিয়ম করে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার হয়তো বাড়ছে। কিন্তু নানান অনিশ্চয়তায় মানুষ বলতে পারছে না তারা স্বস্তিতে আছে। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে মারামারি, হানাহানি, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে ক্রসফায়ার অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন রকমের দূষণ- শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, জমি দখল, সাধারণ মানুষ আইনের আশ্রয় বা ন্যায় বিচার না পাওয়া; রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকদের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করতে না পারা। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাওয়া; পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা যে কথাগুলো বলা দরকার তা তারা বলতে না পারা। দেশের জনগণ তাদের ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে পাঠিয়েছে অথচ তারা সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন না। পার্লামেন্টে গুণকীর্তন আর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে করতেই তাদের সময় চলে যাচ্ছে।
আমাদের নাগরিক সমাজ, দ্বিতীয় মত বা তৃতীয় মত যাই বলি না কেন তা আমাদেরকে ‘মনস্টার ওয়ার’ থেকে রক্ষা করে। সৃষ্টিকর্তার দুনিয়ায় আমরা কেউই মনস্টার নই। কারণ আমরা মানুষ, আমাদের একটি গুণ থাকলে আরেকটি সীমাবদ্ধতা থাকতে বাধ্য। ধর্মেও বলা হয়েছে, সকল গুণ দিয়ে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পাঠাননি। এমনটি না হলে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে মানতেন না। সেই বিষয়টি আমরা ভুলতে বসেছি। সামগ্রিকভাবেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
আমি মনে করি না অস্বস্তি শুধুমাত্র দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া নিয়ে হয়েছে এর সঙ্গে কিছুদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যুক্ত হয়ে সামগ্রিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কী হতে যাচ্ছে রাজনীতিতে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া, শ্রীলঙ্কার ব্যর্থতা। সব মিলিয়ে এটা বিশ্বায়নেরও সমস্যা। আমরা ক্রমাগত বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছি। বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বজুড়ে যে উত্তাপ ছড়িয়েছে তার প্রভাব আমরাও টের পাচ্ছি।
প্রশ্ন: কোন পথে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
বাংলাদেশের অর্থনীতি মিশ্র অবস্থায় চলছে। আমাদের অর্থনীতি কৃষি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। করোনাকালেও আমাদের কৃষিখাতে বাম্পার ফলনে আমরা এগিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যার আকার বেড়েছে অনেকগুণ, সেই তুলনায় আমদানিও বেড়েছে, বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়া, মূলধনী যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি, পণ্য জাহাজিকরণের খরচ বেড়ে যাওয়া, শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব ফেলছে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের এখানেও। তারচেয়েও বেশি প্রভাব অনুভব করছে দেশের সাধারণ জনগণ। কারণ আমাদের নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। যাদের এসকল নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যে কোনও কারণেই হোক তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একের পর এক দুর্বল করে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস করে ফেলেছে।
প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হওয়ার পরিণতি কি?
প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না। যখন খোলাবাজারে লিটার প্রতি সয়াবিনের মূল্য ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হলো তখন ভারতে ২০৯ রুপি সয়াবিনের দাম। সাধারণভাবে এসব পরিস্থিতিতে আমাদের বৈদেশিক মূল্যমান পরিশোধে আনা ভোজ্য তেল ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সীমান্তপথে। আমরা অতীতেও তাই দেখেছি, ভারতে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের চিনি চোরাইপথে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার আমরা তেলের দাম যখন ১৭৭ টাকা নির্ধারণ করলাম ততদিনে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও বেড়েছে। দেখা গেছে, আমরা অতিরিক্ত দাম দিয়ে তেল আমদানি করছি দেশের তেল আর তা ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরাই। এক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাব। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন ধানমন্ডির একটি খেলার মাঠ নিয়ে মন্ত্রীসহ অনেকেই গো ধরে থাকলেন। সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাই সরে এলেন। দায়িত্বটা যেন প্রধানমন্ত্রীরই। আগেও মাঠ নিয়ে নো রিটার্ন অফ পয়েন্ট থেকে সরে আসা সম্ভব ছিল। আমরা দেখি, ঢাকা আরিচা মহাসড়কে একটি বাস দুর্ঘটনা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং প্রধানমন্ত্রী না এলে তারা অবরোধ তুলে নেবে না বলে। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে কী দাঁড়াবে? আমরা শ্রীলঙ্কাতে দেখেছি সিদ্ধান্ত গ্রহণে যদি সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হয় তাহলে এর পরিণতি কী হতে পারে? আমার সকল ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নাই থাকতে পারে সেক্ষেত্রে অন্যদের যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমরা তা না করে সবকিছুকে মনস্টার বানিয়ে ফেলছি। এখানে সব সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে, এটা হওয়া উচিত নয়। যেখানেই এমনটি হয়েছে সেখানেই ব্যর্থতা নিশ্চিত। এখন এটা পনের বছরে হবে না পঁচিশ বছরে হবে তা বলা যাচ্ছে না, তবে এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হবে এটা নিশ্চিত।
প্রশ্ন: রিজার্ভে টান, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই?
জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আমাদের আমদানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। ডলারের হিসাবে তা প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এ সময়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৮ শতাংশ। গত ৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি হিসাবে ঘাটতি হচ্ছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরে ছিল ৫৫০ ডলারের ঋণাত্মক। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এ বছরের শেষদিকে আমাদের আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন ডলার, প্রবাসী আয় দাঁড়াবে ২০ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের শেষদিকে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রয়োজনে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় পরিশোধ করতে হবে তাতে গড়ে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মতো। এর বড় রকমের প্রভাব পড়বে চলতি হিসাবে ঘাটতিতে। সরকার ডলারের বাজার ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এসব নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যেভাবে একটি ডায়নামিক পরিবর্তন হচ্ছে তার রেশ পড়েছে আমাদের অর্থনীতিতেও।
সার্বিক পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে কীভাবে পরিচালিত হওয়া দরকার তার করণীয় নির্ধারণ জরুরি। আমরা বাজারে এলএনজি গ্যাসের সংকট দেখছি। যদি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না করা যায় এর মাধ্যমে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এটা যেমন একটি দিক কিন্তু বিদ্যুতের সিস্টেম লসের জন্য আমরা শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। বড় বড় দুর্নীতিগুলোর বিচার হতে দেখছি না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সম্প্রতি বলেছেন, আওয়ামী লীগের যারা টাকা পাচার করেছেন তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আমরা কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে গত পনের বছরে দেখিনি।
প্রশ্ন: কেউ কেউ বলছেন আমরা শ্রীলঙ্কা হবো না?
আমরা শ্রীলঙ্কা হবো না আমি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তবে আমাদের আমদানি দায় যদি বেড়ে যায়, আমরা যদি পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্প গ্রহণ না করি, আমাদের প্রকল্প ব্যয় যদি ঠিকাদারদের চাপসহ নানা কারণে বেড়ে যায়, পদ্মা সেতু, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর, কিংবা কক্সবাজার-ডুলাহাজারা রেল প্রকল্পের মতো হু হু করে বেড়ে যায়; কিংবা পদ্মা সেতুতে হঠাৎ করে যদি ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেল সংযোগের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে এই বিশাল ব্যয়ের রেট অব রিটার্ন কী দাঁড়াবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
আমাদের স্ট্যাটিস্টিক্স বা পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির সূচক নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার জন্য মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যায়। তুরস্কে সরকার ঘোষিত মূল্যস্ফীতি ৬৮ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ২০ শতাংশের বেশি।
প্রশ্ন: তাহলে আমাদের ভয় কোথায়?
পরিকল্পনাহীন বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা, সেই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়া, ক্রমাগতভাবে সেইসব প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়া। আর এগুলোর প্রভাব পড়বে রিজার্ভে। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে আমাদের যে ভবিষ্যতের আমদানি ঝুঁকি বা ব্যয়ের দায় রয়েছে তা কীভাবে ভবিষ্যতে সুরাহা করা হবে তা ভাবতে হবে। শ্রীলঙ্কার দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, তারা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। তাদের বিদেশি ঋণ ছিল ৫১ কোটি ডলারের বেশি। অথচ শ্রীলঙ্কার কিন্তু মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের কাছাকাছি। আমরাও প্রায়শ: মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা বলে থাকি। শ্রীলঙ্কার শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ। বিশ্বব্যাপী হিসাবের জগতে শ্রীলঙ্কার একটি দেদীপ্যমাণ অবস্থা ছিল। শ্রীলঙ্কা টোয়েন্টি টোয়েন্টি পরিকল্পনাও করেছিল। কিন্তু আমরা কী দেখলাম। রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা তা থেকে শ্রীলঙ্কা পিছিয়ে এলো। শতকরা ১৫ ভাগ থেকে তা ৮ ভাগে নামিয়ে আনা হলো কর আদায়ের রেট। রাতারাতি অর্গানিক কৃষি করতে গিয়ে তারা খাদ্য সংকটে পড়লো। আমাদেরও কিন্তু রাজস্ব বাড়ছে না। পণ্যমূল্য বেড়েছে তার ওপর কর আরোপ করে আমাদের এখানে রাজস্ব আদায় ধরে রাখা হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের গত এক যুগ বা তার বেশি সময়ের মধ্যে বড় আকারে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে; প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো রিফর্ম দেখিনি। আমরা তাহ্রির স্কয়ারের ঘটনা জানি। একটি জাতি যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় রিফর্ম না করে, নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিফর্ম না করে; যে সকল প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ রক্ষায় কাজ না করে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি এগিয়ে না নেয়া হয় তার পরিণাম কখনও ভালো হয় না।
প্রশ্ন: বর্তমান সংকট থেকে শ্রীলঙ্কা কীভাবে বের হবে?
শ্রীলঙ্কা শুধু যে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে তা নয়, তারা জাপানের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছে। তাদের প্রবাসী আয়ে ধস নেমেছে। দেশটিতে দুর্নীতি হয়েছে ব্যাপক হারে। এক রাজাপাকসে পরিবারের ছয় সদস্য সরকারের এমন এমন জায়গায় ছিল বাজেটের ৭০ শতাংশ তারাই নিয়ন্ত্রণ করতো। শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের প্রধানকে দায়ী করা হচ্ছে, তাদের তিনটি প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটকে কার্গো ফ্লাইট বানিয়েছিল ডলার পাচারের জন্য। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ, গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয়ের ব্যর্থতা, সরকারের অপরিণামদর্শী ব্যয় ও আয়ের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়া, অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণ করা, প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়া, রাজনীতির ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করতে বাধ্য হওয়া- এগুলো সাধারণ জনগণের পক্ষে যায়নি বলেই আজ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এ অবস্থায় পৌঁছেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে ব্যয় সংকোচনে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, কীভাবে দেখছেন?
এটাকে স্বাগত জানাই। সরকার দেরিতে হলেও স্বীকার করেছে বর্তমান অর্থনৈতিক চাপকে। আমাদের এখানে রিজার্ভের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ বাড়ছে, আমদানি ব্যয় বাড়ছে, প্রবাসী আয় কমতে পারে। আমরা যেভাবে সরকার চালাচ্ছি, প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছি, জবাবদিহিতার অভাবে বিদেশি ফান্ড থাকলেও আমরা তা ব্যবহার করতে পারছি না। ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলাচ্ছে, প্রকল্প পরিচালক নির্বাচনে রাজনীতিকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে, রাজনীতি বা যারাই সেরকারের নৈকট্য লাভে সমর্থ তাদেরকেই প্রকল্প পরিচালনায় নেয়া হচ্ছে- যাদের প্রকল্প গ্রহণ, মূল্যায়ন, বাস্তবায়ন দক্ষতা বিবেচ্য নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি দুর্নীতিও করা হয় সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতিতে মেগা প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যত কি?
বিনিয়োগ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, রেট অব রিটার্ন ঠিক থাকবে কিনা? চারটি বৃহৎ প্রকল্প- পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুরে বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প, কক্সবাজার-ডুলাহাজারা রেল প্রকল্প এগুলো একটি চাপ তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র মতে, ২০২৪ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের মধ্যে এই বড় বড় প্রকল্পগুলোর ঋণের রি-পেমেন্ট শুরু হবে তখন আরও বেশি চাপ তৈরি হবে ঋণ পরিশোধের দক্ষতার ওপর, বৈদেশিক আয়ের ওপর। বিশ্ববাজার এবং শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি আমলে না নিলে আমার শঙ্কা আমরা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে পারি।