ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সব বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনের সুপারিশ

কাজী সোহাগ
১৬ মে ২০২২, সোমবার
mzamin

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সব বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করতে বলেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে কতগুলো বিমান দুর্ঘটনা তা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি কমিটি। তারা বলেছে- ইতিপূর্বে সংঘটিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সকল বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করতে হবে। সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, আনুমানিক প্রায় অর্ধশত বিমান দুর্ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আলোচিত দুর্ঘটনাও রয়েছে। প্রত্যেকটি বিমান দুর্ঘটনার পরই এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে সেসব কমিটি তাদের বিস্তারিত রিপোর্টে দুর্ঘটনার কারণ ও তা প্রতিরোধের উপায় বাতলে দেন। তবে ওইসব তদন্ত নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে সংঘটিত সব বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনে গুরুত্ব আরোপ করেছে। সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, একটি দুর্ঘটনার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন
সেসব কারণ যথাযথভাবে উঠে আসা দরকার। তদন্তে হয়তো সব কারণ চিহ্নিত করা হয় না।

 তাই আমরা বলেছি- সব বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা দরকার। এতে ভবিষ্যতে বিমান দুর্ঘটনা কমবে বলেও আমরা আশা করি। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ১৭তম বৈঠকের সুপারিশে বলা হয়, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ইতিপূর্বে সংঘটিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সকল বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম আরও জোরদার করাসহ পাইলটদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, কমিটির সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, মোতাহার হোসেন, নাসির উদ্দিন ও মহিববুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ, নৌবাহিনীর সহকারী নৌ-প্রধান (পার্সোনেল) রিয়ার এডমিরাল এম মাহবুব-উল ইসলাম, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল এ এইচ এম ফজলুল হক, সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের কনসালটেন্ট সার্জন জেনারেল মেজর জেনারেল একেএম মুছা খান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মহাপরিচালক (সিএমআর) কমডোর মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাহিদুল ইসলাম খান, সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর পরিচালক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। 

গত ১১ই মে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে সংসদীয় কমিটির ওই সুপারিশের অগ্রগতি জানানো হয়। এ নিয়ে দেয়া প্রতিবেদনটি  তৈরি করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও কাউন্সিলর অফিসার মোহাম্মদ গোলাম কবির। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ারফোর্স অর্ডার-৬২ সিরিজের নির্দেশনা মোতাবেক বিমান বাহিনীর উড্ডয়ন নিরাপত্তা সকল বিমান ঘাঁটিতে অবস্থিত ঘাঁটি নিরাপত্তা অফিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করে। এসব কার্যক্রম বিমান উড্ডয়নে সকল শাখাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এর সকল নিরাপত্তা বিধি এবং নির্দেশিকার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে থাকে। প্রতিটি উড্ডয়ন বহর দ্বিমাসিক, ঘাঁটিসমূহ ত্রৈমাসিক এবং বাহিনী পর্যায়ে বাৎসরিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সভা করে থাকে। প্রতি বছর দুইবার কমান্ড সেফটি উইক এবং দুই বছর অন্তর আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেকোনো দুর্ঘটনায় এয়ারফোর্স অর্ডার-৬২ সিরিজ অনুসারে ইনভেস্টিগেশনের নিমিত্তে তদন্ত পর্ষদ গঠন করে দুর্ঘটনার ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব ভেদে নিয়ম অনুযায়ী এয়ারক্রাফট অকারেন্স রিপোর্ট (এওআর), টেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন (টিআই) এবং বোর্ড অব ইনভেস্টিগেশন (বিওআই) গঠন করা হয়। এ ছাড়াও দুর্ঘটনার যথাযথ কারণ নির্ণয়ে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিমানের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তা নেয়া হয়ে থাকে। বিমান বাহিনীর নিজস্ব প্রয়োজনে, বিমান বাহিনী সকল প্রকার আনসেফ অ্যাক্ট বা আনসেফ কন্ডিশন অথবা দুর্ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইনভেস্টিগেশন করে থাকে। যাতে করে সকল প্রকার ইনসিডেন্ট বা একসিডেন্ট সীমিত পর্যায়ে রাখা হয়। এ চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতি বাৎসরিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সভার পূর্বের সংঘটিত সকল দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয়, পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিমান বাহিনীর সর্বোচ্চ মানের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ১০ বছরে ৩টি এমআরও ইউনিট করা হয়েছে। প্রত্যেক স্তরে জোরদার রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তার পাইলটদের প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নিরাপদে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ। সদ্য নির্মিত বিমান বাহিনী একাডেমির বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স, নতুন অন্তর্ভুক্ত ডিজিটাল ককপিট সংবলিত জিআরওবি ১২০ টিপি বিমান, পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য নতুন সংযোজিত সিমুলেটরস, নাইটভিশন ট্রেইনার এবং হাই-জি ট্রেনার অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর পাইলট প্রশিক্ষণ আরও নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ার কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বৈঠকে উপস্থাপিত কার্যপত্রের আলোকে বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে কমিটিকে অবহিত করেন।

বিশেষ করে বিমান বাহিনীর রূপকল্প, মিশন, ভূমিকা, দায়িত্ব ও কর্তব্য, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সক্ষমতা, শিক্ষাক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান এবং অর্জনসমূহের বর্ণনা, রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম, বাহিনীর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এবং তা অতিক্রম করার জন্য প্রস্তাব/সুপারিশসমূহের বর্ণনা, চলমান প্রকল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি সহ বিমান বাহিনীর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে কমিটিকে অবহিত করেন। পরে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান ভবিষ্যতে এয়ারফোর্সের বিমান দুর্ঘটনারোধে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম আরও জোরদার করাসহ পাইলটদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইতিপূর্বে সংঘটিত সকল বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সঠিকভাবে তদন্ত করার পরামর্শ দেন। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর  আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ২টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান কক্সবাজারের মহেশখালি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমান ২টি প্রশিক্ষণ উড্ডয়নে নিয়োজিত ছিল। বিমানের ৪ জন বৈমানিক বিমান  থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করেন এবং তাদের সকলকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরের বছর ২০১৮ সালের ১লা জুলাই আনুমানিক রাত ০৯:০৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১টি কে-৮ ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান যশোর বিমান বন্দরের অদূরে পশ্চিম পার্শ্বে বাউর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান  থেকে রাত ০৮:৫১ ঘটিকায় নৈশকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। বিমানটি ২ জন বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবীর পলাশ এবং স্কোয়াড্রন লিডার মো. সিরাজুল ইসলাম উড্ডয়ন করছিলেন। দুর্ঘটনায় উভয় পাইলট নিহত হন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status