ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

কাঠগড়ায় মিনা বিবি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৬ মে ২০২২, সোমবার
mzamin

সিলেটের ওসমানীনগরের রবিদাশ গ্রামের রাজু আহমদ। পেশায় মাইক্রোবাস চালক। মিনা বিবি। লন্ডন প্রবাসী। বাড়ি একই এলাকার বুরুঙ্গার কামারগাঁওয়ে। ২০০৮ সাল। ঢাকায় যেতে রাজুর মাইক্রোবাসে রওয়ানা দেন মিনা বিবি। গাজীপুরে র‌্যাব আটকায় মাইক্রোবাস। গাড়ি থেকে নামলেন মিনা বিবি। র‌্যাবের সঙ্গে কথা বললেন।

বিজ্ঞাপন
এরপর র‌্যাব তাদের ছেড়ে দেয়। গাড়িতে ওঠার পর রাজু যাত্রী মিনা বিবিকে প্রশ্ন করলেন র‌্যাবের সঙ্গে কী কথা হলো? জবাবে মিনা বিবি জানান- র‌্যাব আমাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিল। তিনি বলেছেন- ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী। কাবিননামা দেখতে চেয়েছিল। সিলেটে আছে বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন। এজন্য সিলেট গিয়ে তিনদিনের মধ্যে কাবিননামা র‌্যাব অফিসে জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই সিলেটে গিয়ে তিনদিনের মধ্যে কাবিননামা তৈরি করতে হবে। রাজু বলেন, আমাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন।’ 

এভাবেই মাইক্রোবাস চালক রাজু আহমদের সঙ্গে মিনা বিবির বিয়ের সম্পর্ক গড়ায়। রাজু বলেন, ‘মিনা বিবির সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান অনেক। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাকে বিয়ে করতে হয়। ২০০৮ সালের ২রা আগস্ট সিলেট নগরের হাওয়াপাড়াস্থ কাজী অফিসে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিষয়টি জানার পর আমার পরিবারের সদস্যরা আমার উপর অসন্তুষ্ট হন। বিয়ের পর তাকে নিয়ে যতদিন পরিবারের সঙ্গে ছিলাম অশান্তি লেগেই ছিল। পরে বাধ্য হয়ে ভাড়া বাসায় উঠতে হয়েছে।’ গতকাল রোববার সিলেট প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মিনা বিবির সঙ্গে বিয়ে প্রতারণার ফাঁদ নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছেন রাজু আহমদ। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে আমার চোখে ধরা পড়ে মিনা বিবির আসল রূপ। জানতে পারি আমি মিনা বিবির ১১তম স্বামী। তার আগের ১০ স্বামীর মধ্যে ৪ জনের নাম জানতে পেরেছি। তারা হলেন- মিন্টু মিয়া, রইছ আলী, জামাল মিয়া ও জলিল মিয়া। এমনকি মিনা বিবির আমার বয়সী এক কন্যা রয়েছে।

মেয়েকে বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।’ এসব ঘটনায় মিনা বিবির বিরুদ্ধে মামলাও আছে বলে জানান রাজু। তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে মিনা বিবি আমাকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তার) প্রদান করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে থাকাবস্থায় বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হলে তার জমি বিক্রির জন্য এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বলে জানান।’ রাজু বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে তার কিছু জমি বিক্রি করতে আমাকে বলেন। জমির টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করার পরামর্শ দেন। সরল বিশ্বাসে আমি তার কথায় জায়গার উপর ‘বিক্রয় হবে’ সম্বলিত সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখি। গত জানুয়ারি মাসে ১২ শতক জমি বিক্রি করি। মিনা বিবি ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে এলে জায়গা বিক্রির নগদ টাকা তার হাতে তুলে দেই।’ পারিবারিক অশান্তি ও স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ করে রাজু মিনা বিবির সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ চাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, ‘দেশে আসার পর তার পূর্বের এক স্বামী মিন্টু মিয়ার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আপত্তি জানানোর কারণে আমাকে জেলে ঢুকানোর হুমকি দিয়েছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলায় আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি এবং প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখান। তখন জানতে পারি তার দেয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ছিল জাল। আমাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে এমনটা করেছেন।’

বিচ্ছেদ চাওয়ায় এখন প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিতে রাজু নিজে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান। আগের স্বামীরা একইভাবে প্রতারণা, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে তিনি সেই পুনরাবৃত্তি থেকে বাঁচতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। রাজু বলেন, ‘মিনা বিবি যুক্তরাজ্য নেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। এ কাজে তিনি নিজের মেয়েকেও ব্যবহার করছেন। বিয়ে দেয়ার নামে আদায় করে নেন বিশাল অঙ্কের টাকা। প্রতারণা বুঝতে না পেরে মিনা বিবির ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেক নিরীহ মানুষ।’ মিনা বিবি তার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে লুটে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এদিকে মিনা বিবি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই বুরুঙ্গার ইউপি সদস্য হুশিয়ার আলী। তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের ব্যাপারে জানিয়েছেন, ‘অভিযুক্ত তো রাজু আহমদ নিজেই। সে জালিয়াতি করে তাজপুরে থাকা মিনা বিবির আড়াই কোটি টাকার বাসা ২৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া- মিনা বিবির কাছ থেকে সে অনেক টাকা আত্মসাত করেছে। এ ঘটনায় সম্প্রতি মিনা বিবি দেশে এসে থানায় এজাহার দিয়েছেন। এখনো মামলা রেকর্ড হয়নি।’ তিনি জানান- ‘মিনা বিবির আগে দুটি বিয়ে হয়েছে। রাজু সংবাদ সম্মেলনে এসে অবাধে মিথ্যাচার করে গেছে। তাকে আমরা খুঁজছি। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হুশিয়ার আলী।’  

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status