শরীর ও মন
শীতে ত্বকের সজিবতায় খাদ্যাভ্যাস
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২৬ নভেম্বর ২০২২, শনিবারআমরা অনেকেই জানি শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকা, শুষ্ক শীতল বাতাস বেড়ে যাওয়া ও ধুলাবালুর কারণে অনেকেরই ত্বক রুগ্ন, খসখসে, ফ্যাকাশে হয়ে যায়। শীতকালে খাবারের তালিকায় সবুজ ও রঙিন শাক-সবজি থাকার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এতে বেশি পরিমাণে ভিটামিনস্, মিনারেলস্ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান আছে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সবজির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো- ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা, গাজর, বরবটি, মটরশুঁটি, বেগুন ইত্যাদি। তাই বিভিন্ন শাক-সবজিগুলো আমরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দু’একটি পদ সহজেই রাখতে পারি। আমরা জেনে নেই শীতকালে কোন খাবার ও শাক-সবজি আমাদের ত্বকের জন্য এ সময়ে খুবই অপরিহার্য। তবে এ খাবারগুলো রান্না বা খাওয়ার আগে অবশ্যই ময়লা, পোকামাকড় ও কীটনাশক বা রাসায়নিকের হাত থেকে বাঁচতে প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে সবজি। গাজর গাজরে আছে প্রচুর ভিটামিন এ। এটি ত্বক ও শ্বাসনালির শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি ঠিক রাখতে কাজ করে। শরীরে ‘ফাইটার সেলস’ বা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোষ হিসেবে পরিচিত ‘টি সেল’ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে পাতার পরিমাণ বেশি বলে চর্বি বা কোলেস্টেরল প্রায় নেই। ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ২৫ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। আর ভিটামিন সি পাওয়া যায় প্রায় ৩৬ মিলিগ্রাম। এই সবজিতে আরও আছে ভিটামিন ‘বি ফাইভ’, ‘বি সিক্স’, ‘বি সেভেন’, ‘বি ওয়ান’ ও নানা ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল।
ফুলকপি
ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে’র চমৎকার উৎস ফুলকপি। এতে আরও আছে ফলেট ও ভিটামিন ‘বি সিক্স’। প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও জলীয় উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় ফুলকপি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
টমেটো
টমেটোতে ভিটামিন এ ও সি আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমেরিকান যারা টানা তিন সপ্তাহ টমেটোসমৃদ্ধ খাবার খান, তাদের রোগবালাই কিছুটা কমে।
পালংশাক
পালংশাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর শক্তি রয়েছে। এতে ভিটামিন বি-৬ আছে, যা অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
জাম্বুরা
জাম্বুরায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা আপনার ত্বককে সতেজ রাখে। প্রতিদিন এক গ্লাস করে জাম্বুরার জুস পান করতে হবে পুরো শীতকাল। জাম্বুরা মূলত লো ক্যালরিসমৃদ্ধ ফল। খাবারের রুচি বাড়াতে জাম্বুরা বেশ কার্যকর। মাল্টার চেয়ে জাম্বুরায় পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ত্বকের জন্য এটি বেশ ভালো কাজ করে।
মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপ:
শীতকালে ত্বকের লাবণ্যতা রক্ষায় উষ্ণ তরল খাবার যেমন মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপ আদর্শ ও সহজলভ্য খাবার। মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপ শরীরে বিপুল পরিমাণে শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে।
টকজাতীয় ফল
টক জাতীয় ফলে আছে ভিটামিন-সি, মিনারেলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের লাবণ্যতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে টক জাতীয় ফল অনেক উপকারী।
গ্রিন টি বা আদা চা
গ্রিন টিতে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে- যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এটি মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। গ্রিন টি’র বদলে আদা চাও পান করা যেতে পারে।
দুধ
দুধ একটি আদর্শ পানীয়- যাতে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এতে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আছে। চুল পড়া রোধে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দুধের মতো উপকারী পানীয় হয় না।
মধু
মধুতে আছে জিংক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। টনসিল, ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদি রক্ষায় মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মধু ত্বকের লাবণ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডিম
ডিমের কুসুমে আছে বায়োটিন- যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে এবং পুরো ডিমে আছে ভিটামিন ডি, এ এবং বি-৬, যা দেহের অনেক উপকার সাধন করে। শীতকালে যেহেতু চুল পড়ে তাই ডিম খাওয়া কমানো যাবে না। কারণ ডিমে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন রয়েছে।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এবং ভিটামিন-ডি আছে, যা শীতকালের জন্য বেশি উপকারী। চুল পড়া বন্ধ করবে সামুদ্রিক মাছ।