প্রথম পাতা
ইইউ’র সঙ্গে সংলাপ আজ
মানবাধিকার, সুশাসন মুখ্য আলোচ্য
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৪ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপে বসছে বাংলাদেশ। এর আগে সচিব বা কর্মকর্তা পর্যায়ে সিরিজ আলোচনা হলেও ৫০ বছরে আজই প্রথম স্ট্রাকচার্ড ওয়েতে রাজনৈতিক আলোচনা হবে দুই পক্ষের মধ্যে। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ওই সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন জোটের বৈদেশিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাসচিব এনরিকে মোরা। সূত্র বলছে, ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইইউ’র সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে সঙ্গতকারণেই সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে আলোচনা হবে। যার মধ্যে নিশ্চিতভাবে রাজনীতি, মানবাধিকার, সুশাসন, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতি হবে মুখ্য আলোচ্য। বলা হয়েছে, দুই পক্ষের বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করতে উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। সেটি বিবেচনায় রেখেই সূচি নির্ধারণ করেছে ঢাকা ও ব্রাসেলস। সূত্র মতে, ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ওই আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ইতিমধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ইইউ’র সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার।
সূত্র মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে ইইউ’র মূলনীতির প্রেক্ষাপটে অবধারিতভাবে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হবে। সেই আলোচনায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা হতে পারে। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা এবং এর অপপ্রয়োগ বন্ধে সোচ্চার। এ বিষয়ে এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, সামগ্রিকভাবে মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে শ্রম অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা বিষয়ে আজকের বৈঠকে কথা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব এবং সংকট নিয়ে কথা হতে পারে। চলমান যুদ্ধে রাশিয়া যেমন বাংলাদেশকে জোরালোভাবে পাশে চায়, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব ঢাকাকে কাছে টানছে। অবশ্য বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরিভাবে কারও দিকেই ঝুঁকেনি।
আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, মানবিক সহায়তাসহ মূল্যবোধ ও আদর্শিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র ধারা বজায় রেখেছে। যা ইইউ’র অপছন্দ নয়। তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, আজকের সংলাপে বাংলাদেশকে জোরালোভাবে পাশে পাওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করতে পারে ইইউ। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই পক্ষের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন পক্ষের সম্পর্কের প্রসঙ্গও আলোচনায় আসতে পারে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তো বটেই, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে ব্যাপকভাবে আগ্রহী ব্রাসেলস। সংলাপে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে সৃষ্ট ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গও আসতে পারে। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের কৌশলপত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইতে পারে।